অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র, বাংলা চলচ্চিত্রের জগতের একটি পরিচিত মুখ, তার একনিষ্ঠ পরিশ্রম ও অবদানের মাধ্যমে দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা তার ছোটবেলা থেকে বড়ো হয়ে ওঠা, ক্যারিয়ার, পারিবারিক জীবন, অর্জিত পুরস্কার ও ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রুক্মিণী মৈত্র: প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
রুক্মিণী মৈত্র ১৯৯১ সালের ২৭ জুন কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের একটি সনাতন হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৌমেন্দ্র মৈত্র একজন প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আইআইএম (IIM) কোঝিকোড থেকে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তার মা মধুমিতা মৈত্র একজন গৃহিণী। রুক্মিণীর একটি বড়ো ভাই, রাহুল মৈত্র, যিনি তার সঙ্গী ও প্রেরণার উৎস।
শিক্ষাগতভাবে রুক্মিণী অত্যন্ত মেধাবী। তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা “কারমেল কনভেন্ট স্কুল” থেকে সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে “লরেটো কলেজ, কলকাতা” থেকে এমবিএ (MBA) কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও, তিনি “আইআইএম কোঝিকোড, ক্যালিকাট, কেরালা” থেকেও পড়াশোনা করেছেন।
রুক্মিণীর শারীরিক পরিসংখ্যান
শারীরিক বৈশিষ্ট্য | তথ্য |
---|---|
উচ্চতা | ৫’৯.৫” (175 সেন্টিমিটার) |
ওজন | ৫৫ কেজি (121 পাউন্ড) |
চুলের রঙ | কালো (Black) |
চোখের রঙ | ব্রাউন (Brown) |
রুক্মিণীর ক্যারিয়ার
রুক্মিণী মৈত্রের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মডেলিং দিয়ে। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই মডেলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি এবং দ্রুতই আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। রিলায়েন্স, লাকমে, সানসিল্ক, প্যারাসুট, টাইটান, ভোডাফোন, ফেমিনা, রয়াল স্ট্যাগ, বিগ বাজার, ইমামি প্রভৃতি ব্র্যান্ডের জন্য তিনি মডেলিং করেছেন।
২০১৭ সালে বাংলা চলচ্চিত্র “চ্যাম্প” দিয়ে রুক্মিণী রূপালি পর্দায় তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। সিনেমাটিতে তিনি জনপ্রিয় অভিনেতা দেবের বিপরীতে অভিনয় করেন। এটি ছিল একটি বক্সিং খেলার উপর ভিত্তি করে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র। ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে এবং রুক্মিণীকে চলচ্চিত্র জগতে পরিচিতি এনে দেয়।
এরপর রুক্মিণী আরও বেশ কিছু বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলি হলো “ককপিট”, “চ্যাম্প”, “সুইজারল্যান্ড” এবং “সানাক”। “সানাক” সিনেমার মাধ্যমে তিনি বলিউডে অভিষেক করেন, যেখানে তিনি বিদ্যুৎ জাম্বওয়ালের বিপরীতে অভিনয় করেন।
রুক্মিণীর ব্যক্তিগত জীবন
রুক্মিণী মৈত্রের ব্যক্তিগত জীবন বেশ রহস্যময় হলেও, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলা অভিনেতা দেবের সঙ্গে প্রেম করছেন। তাদের সম্পর্ক নিয়ে মিডিয়ায় অনেক গুঞ্জন থাকলেও, তারা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে প্রায়শই একে অপরকে সমর্থন করে আসছেন।
এছাড়া, রুক্মিণী এখনও বিয়ে করেননি, তবে তার প্রেমিক দেবের সাথে তাদের সম্পর্ক বেশ জনপ্রিয়। তার বাবা, সৌমেন্দ্র মৈত্র, সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন, তবে তার মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ়।
রুক্মিণী মৈত্রের অর্জিত পুরস্কার
রুক্মিণী মৈত্র অভিনয়ের জন্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলো হলো:
-
২০১৭: “The Times of India Calcutta Times Most Desirable Woman”
-
২০১৭: “The Times 50 Most Desirable Women”
-
২০১৮: “Jio Filmfare Awards East Best Debut (Female) for Champ”
-
২০১৮: “Times Power Women – Most Promising Actor”
-
২০১৮: “Bengal Film Journalists’ Association Awards – Most Promising Actress”
রুক্মিণীর আয় ও সম্পদ
রুক্মিণী মৈত্র তার অভিনয় ও মডেলিং ক্যারিয়ারের মাধ্যমে যথেষ্ট সম্পদ অর্জন করেছেন। তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৯-১২ কোটি রুপি। তিনি একেকটি সিনেমা জন্য ৫০-৭০ লাখ রুপি পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন। তার কলকাতায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি এবং তিনি জাগুয়ার গাড়ির মালিক।
রুক্মিণীর পছন্দের তালিকা
রুক্মিণী মৈত্রের পছন্দের কিছু বিষয় নিম্নরূপ:
-
প্রিয় খাবার: বিরিয়ানি
-
প্রিয় পানীয়: কফি
-
প্রিয় রং: পিঙ্ক ও কালো
-
প্রিয় অভিনেতা: শাহরুখ খান
-
প্রিয় অভিনেত্রী: মাধুরি দীক্ষিত, দীপিকা পাদুকোন, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
-
প্রিয় সিনেমা: চ্যাম্প
-
প্রিয় গান: “সুনা হাইন” (Sanak)
-
প্রিয় জায়গা: নিউ ইয়র্ক
-
প্রিয় হবি: ট্রাভেলিং, রিডিং, ওয়ার্কআউট
-
প্রিয় গায়ক: লতা মঙ্গেশকর, সনু নিগম, অরিজিৎ সিং
রুক্মিণীর কিছু অজানা তথ্য
-
রুক্মিণী মৈত্র ১৩ বছর বয়স থেকে মডেলিং শুরু করেছিলেন এবং তিনি বহু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছেন।
-
তিনি একটি ট্যাটু করেছিলেন যা তার বাম কব্জিতে “দেব” নামটি রয়েছে, যা তার প্রেমিক দেবের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করে।
-
২০১৭ সালে ক্যালকাটা টাইমস তাকে “মোস্ট ডিজায়ারেবল উইমেন” হিসেবে ভোট দেয়।
রুক্মিণী মৈত্রের জীবনে অনেক উত্থান-পতন রয়েছে, তবে তিনি নিজের দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে অনেক কিছু অর্জন করেছেন। তার ভবিষ্যতে আরও অনেক বড়ো সফলতার অপেক্ষা রয়েছে, এবং তিনি তার অনুগামীদের জন্য অনেক অনুপ্রেরণা তৈরি করেছেন।
আর পড়ুনঃ