অভিনেতা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়: জন্ম কলকাতায়। আদি নিবাস পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) খুলনা বরিশালের বি. এম স্কুলে প্রথাগত শিক্ষা শুরু করেন, পরে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমেও কিছুদিন ছিলেন। এন্ট্রান্স পাস করেন হুগলী জেলা থেকে। গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল থেকে স্নাতক হন। ওড়িশার বামড়া রাজের শিল্প শিক্ষক এবং পরে হায়দ্রাবাদ আর্ট স্কুলের (মতান্তরে নিজামস আর্ট কলেজে) অধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করেন।
অভিনেতা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়(ডি.জি.) । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান
১৯১৯ সালে প্রকাশ করেন নিজের বিভিন্ন ভঙ্গিমার এবং রূপসজ্জার ছবি নিয়ে গ্রন্থ ভাবের অভিব্যক্তি’ এবং ‘বিয়ে’। ‘ভাবের অভিব্যক্তি’ ছাপা হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘ইউ রায় এন্ড সন্স’ থেকে।
চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশ অভিনেতা হিসেবে বিলেত ফেরৎ বা ইংলন্ড রিটার্নড ছবিতে। বিলেত ফেরত যুবকের ভূমিকায় চার্লি চ্যাপলিনের অনুকরণ (ব্যর্থ অনুকরণ) বলে তৎকালীন পত্র পত্রিকায় সমালোচিত হয়েছিল। দি ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি প্রযোজিত চলচ্চিত্রে অভিনেতা হিসাবে অবতীর্ণ হন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ধীরেন্দ্রনাথ, নীতিশচন্দ্র লাহিড়ী এবং পি. এন. দত্ত মিলিত ভাবে এই প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করেন। এদের প্রথম ছবি বিলেত ফেরৎ ‘বাঙালীদের প্রয়াসে তৈরী বলে বিজ্ঞাপন করা হয়েছিল। পরে এই প্রযোজনার তৈরি যশোদানন্দন (১৯২২) ছবিতে কৃষ্ণের ভূমিকায় এবং সাধু কি শয়তান (১৯২২) ছবিতে ভণ্ড সাধুর ভূমিকায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
১৯২২ সালে দি ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরেন্দ্রনাথ হায়দ্রাবাদে ফিরে লোটাস ফিল্ম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির প্রযোজনায় নয়টি ছবি তৈরি হয়। এই ছবিগুলি তিনি নিজেই পরিচালনা করেছিলেন। ১৯২৪ সালে রাজিয়া বেগম’ ছবির জন্য নিজামের অসন্তোষের কারণে হায়দ্রাবাদ ছাড়তে বাধ্য হন এবং বোম্বে চলে যান। বোম্বে থেকে কলকাতায় ফিরে প্রথমে মিত্র থিয়েটারে অভিনেতা হিসাবে যোগ দেন। জ্যোতিরিঙ্গনাথ ঠাকুরের অলীকবাবু নাটকে নাম ভূমিকায় শতাধিক রজনী অভিনয় করেন।
পরবর্তীকালে প্রমথেশ বড়ুয়া এবং অন্যান্য ধনী ব্যক্তির সহযোগিতায় ব্রিটিশ ডোমিনিয়ান ফিল্মস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করেন। এই প্রযোজনা সংস্থা আটটি কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছিল। পরে ধীরেন্দ্রনাথ নিউ থিয়েটার্সেও যোগ দেন এবং মাসতুতো ভাই (১৯৩৩) নামে একটি স্বপ্ন দৈর্ঘ্য চিত্র পরিচালনা করেন, এই ছবিটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৩৪ সালে পরিচালনা করেন এক্সকিউজ মী স্যার’ ছবি।
১৯৩৫-৩৮ পর্যন্ত ধীরেন্দ্রনাথ ইষ্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানি, মেট্রোপোলিটান পিকচার্স এবং নিজের প্রযোজনা সংস্থা ডি. জি. টকীজের হয়ে চারটি ছবি পরিচালনা করার পর আবার নিউ থিয়েটার্সে ফিরে যান এবং ১৯৩৮ সালে পরিচালনা করেন অচিনপ্রিয়া নামে একটি কাহিনিচিত্র।
৪৬ বছর ব্যাপী চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ১৭টি ছবি পরিচালনার সাথে ৩২টি ছবিতে অভিনয় করেন, ১৪টি ছবি প্রযোজনা করেন, চিত্রনাট্য লিখেছেন ৭টি ছবির, এমনকী হাল বাংলা (১৯৩৮) ছবির জন্য গান লিখেছেন এবং গান গেয়েছেন। ডিজি পরিচালিত শেষ ছবি কার্টুন ১৯৪৯ সালে মুক্তি পায়। তাঁর শেষ অভিনয় সেবা (১৯৬৭) ছবিতে। ১৯৭৪ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৫-এ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন।

চলচ্চিত্রপঞ্জি —
- ১৯২১ বিলেত ফেরৎ,
- ১৯২২ যশোদানন্দন, সাধু কি শয়তান, রাধাকৃষ্ণ,
- ১৯২৭ শঙ্করাচার্য
- ১৯৩০ অলীক বাবু, পঞ্চশর, কামনার আগুন:
- ১৯৩১ মরণের পরে, টাকায় কি না হয়, চরিত্রহীন:
- ১৯৩৩ মাসতুতো ভাই।
- ১৯৩৪ এক্সকিউজ মী স্যার:
- ১৯৩৬ দ্বীপান্তর, শনিবার, শ্যামসুন্দর
- ১৯৩৮ হাল বাংলা, অচিন প্রিয়া, অভিসারিকা
- ১৯৪০ পথ ভুলে, কর্মখালি,
- ১৯৪১ প্রতিশোধ, আহুতি
- ১৯৪৩ দাবী ১৯৪৫ বন্দিতা:
- ১৯৪৭ শৃঙ্খলা
- ১৯৪৮ শেষ নিবেদন;
- ১৯৪৯ কার্টুন;
- ১৯৫১ ওরে যাত্রী, গাঁয়ের মেয়ে,
- ১৯৫৮ অযান্ত্রিক, ও আমার দেশের মাটি
- ১৯৬২ অভিসারিকা, রাজ পলাশ,
- ১৯৬৪ কালস্রোত
- ১৯৬৭ সেবা।
আরও দেখুনঃ