মাজরুহ সুলতানপুরী নামে বেশি পরিচিত হলেও তার আসল নাম আসরার উল হাসান খান। তিনি হিন্দি (হিন্দুস্থানি) চলচ্চিত্র শিল্পে গীতিকার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে আসলে তিনি উর্দু কবি ছিলেন। মাজরুহ ভারতের তারকা গীতিকারদের একজন। তিনি গীতিকার হিসেবে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে অংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন।
[ মাজরুহ সুলতানপুরী [ কবি, গীতিকার ] ]
ছয় দশকের কর্মজীবনে মজরুহ অনেক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া “দোস্তি” নামের ছায়াছবিতে, “চাহুঙ্গা ম্যায় তুঝে” গানটি লেখার কারণে তাকে “ফিল্মফেয়ার সেরা গীতিকার পুরস্কার” দেয়া হয়। তার অবদানের জন্য তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার “দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার” দেয়া হয় ১৯৯৩ সালে। আশি ও নব্বই এর দশকে, তার বেশিরভাগ কাজ করেন সঙ্গীত পরিচালক আনন্দ-মিলিন্দের সাথে। আনন্দ-মিলিন্দের তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হল “কেয়ামত সে কেয়ামত তক”, “লাল দুপাট্টা মালমাল কা”, “লাভ”, “কুরবান” এবং “দাহেক”।
মজরুহ সঙ্গীত পরিচালক জুটি যতীন-ললিত লিখেছেন জো জিতা ওহি সিকান্দার (“পেহলা নাশা” গান সহ), যা পরবর্তিতে ক্লাসিক হয়েছে বলা যায় । যতীন-ললিত এর প্রথম চলচ্চিত্র ইয়ারা দিলদারা (“বিন তেরে সানাম” গানটি সহ) সিনেমার জন্যও লিখেছিলেন মজরুল, যেটি ভারতীয় সঙ্গীতের এয়ারওয়েভে আজ অবধি শোনা যায়।
মাজরুহ সুলতানপুরী উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে একটি রাজপুত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরে নাম দেয়া হয় আসরার উল হাসান খান। তার বাবা পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। একজন পুলিশ অফিসার হয়েও তিনি ছিলেন ভীষণ রক্ষণশীল। তাই ছেলেকে ইংরেজি পড়াতে তার খুব একটা আগ্রহ ছিলা না। এজন্যই মাজরুহকে তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘মাদ্রাসা শিক্ষা’র জন্য পাঠন। মজরুল সেখানে সাত বছর লেখাপড়া করেন এবং প্রথম “দরস-ই-নিজামী” অর্জন করেন। সেখান থেকেই তার আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা তৈরি হয়। তিনি আলিম শেষ করে লখনউয়ের তাকমীল-উত-তিব কলেজ অফ ইউনানি মেডিসিনে (গ্রীক পদ্ধতি অব মেডিসিন) ভর্তি হন।
“ম্যায় আকেলা হি চালা থা জানিবে মঞ্জিল মাগর,
লগ সাথ আতে গয়ে অর কারভান বান্তা গেল!”
(আমি একাই গন্তব্যের দিকে রওনা হলাম,
কিন্তু লোকেরা যোগ দিল এবং শীঘ্রই এটি একটি কাফেলা হয়ে গেল!)
১৯৪৫ সালে মাজরুহ “সাবু সিদ্দিক ইন্সটিটিউটে” একটি মুশায়রায় যোগ দিতে বোম্বে যান। এখানে তার গজল ও কবিতা শ্রোতাদের কাছে প্রশংসিত হয়। মুগ্ধ শ্রোতাদের একজন ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক এ.আর. কারদার। তিনি মুশায়রা শেষে জিগার মোরাদাবাদীর সাথে যোগাযোগ করেন মাজরুহের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে। উদ্দেশ্য ছিল মজরুহ কে দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লিখানো।
মাজরুহ রাজি হবার পরে কারদার তাকে সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের কাছে নিয়ে যান। কারদার নওশাদকে বলে তরুণ লেখককে বাজিয়ে দেখতে। নওশাদ মাজরুহকে একটি সুর দিয়ে সেই মিটারে কিছু লিখে দিতে বলেন। তখনই মাজরুহ লেখেন “উসনে গেসু বিখরায়ে, বাদল আয়ে ঘুম কে”। নওশাদের খুবই পছন্দ হয় এবং এক ইতিহাসের সূচনা হয়। এরপর মাজরুহ শাহ জাহান চলচ্চিত্রের গীতিকার হিসাবে চুক্তিবদ্ধ করা হন। ১৯৪৬ সালে রিলিজ পাওয়া সেই ছবির গানগুলি হৈচৈ ফেলে দেয়। দারুণ ব্যবসা করে সেই ছবি। গান এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে গায়ক কে.এল. সায়গাল চেয়েছিলেন তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় “জব দিল হি টুট গায়া” গানটি বাজানো হোক।
আরও পড়ুন:
https://youtu.be/oCnjWyi9An0