জ্যাকি চ্যানের জীবন – এক কিংবদন্তির অজানা, হাস্যকর এবং অবাক করা কাহিনী
জ্যাকি চ্যান—এই নামটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক দুর্ধর্ষ অ্যাকশন হিরো, যার স্টান্টে যেমন থাকে সাহসিকতা, তেমনি তার অভিনয়ে থাকে হাস্যরস আর মানবিক ছোঁয়া। কিন্তু জানেন কি, এই মার্শাল আর্টের গুরু আর সিনেমার কিংবদন্তির জীবনে লুকিয়ে আছে এমন সব মজার ঘটনা, যেগুলো জানলে আপনি হেসে কুটিকুটি হবেন? চলুন, জেনে নিই জ্যাকি চ্যানের জীবনের কিছু অজানা আর মজার গল্প।
১. জন্মের সময়ই তাঁর নাম হতে পারত “ক্যাননবল”!জ্যাকি চ্যান জন্মেছিলেন ১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল, হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া পিকে। জন্মের সময় তাঁর ওজন ছিল প্রায় ১২ পাউন্ড! ডাক্তাররা বলেছিলেন, এতো বড় বাচ্চা তাঁরা আগে কখনও দেখেননি। তাঁর মা-বাবা মজা করে তাঁকে ডাকতেন “পাও চ্যু”—যার মানে হলো “তোপের গোলা”! ভাবা যায়?২. স্কুলে একবার পড়াশোনার বদলে… মার্শাল আর্টে সোজা ঘুষি!ছোটবেলাতে জ্যাকি চ্যান খুব ভালো ছাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন “চায়নিজ অপেরা রিসার্চ ইনস্টিটিউট”-এ, যেখানে শিখানো হতো গান, নাচ, অ্যাক্রোবেটিকস আর মার্শাল আর্ট। ক্লাসে অন্য ছাত্ররা পড়াশোনা করলেও জ্যাকি ব্যস্ত থাকতেন ব্যাকফ্লিপ আর ঘুষির চর্চায়! শিক্ষকরা নালিশ করতেন, কিন্তু যখন দেখতেন তাঁর ফ্লিপগুলো কতো নিখুঁত, তখন রাগ করতেও পারতেন না!৩. স্টান্ট করতে গিয়ে হাসপাতাল তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গিয়েছিল!জ্যাকি চ্যানের স্টান্ট করার সাহস দেখলে অনেকেই চমকে যান, কিন্তু জানেন কি, এই স্টান্ট করতে গিয়েই তাঁর শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ে একবার না একবার চোট লেগেছে? তাঁর মাথায় প্লাস্টিকের একটা কভার লাগানো আছে, কারণ একবার ‘Armour of God’ সিনেমার শ্যুটিংয়ে তিনি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক চোট পান। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়, এবং ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি বেঁচে গেছেন অলৌকিকভাবে!৪. ইংরেজি শেখার সময় তিনি বলতেন, “আই এম ভেরি হ্যাপি ইউ নট আন্ডারস্ট্যান্ড মি”!জ্যাকি চ্যানের প্রথমদিকে ইংরেজি খুব দুর্বল ছিল। হলিউডে কাজ করতে গিয়ে তাঁর প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছিল ইংরেজি উচ্চারণে। একবার এক ইন্টারভিউতে তিনি মজা করে বলেছিলেন, “I am very happy you not understand me, because I also not understand me!” – সাংবাদিকরাও হেসে গড়াগড়ি খেয়েছিলেন।৬. মুরগির পায়ে দড়ি বেঁধে স্টান্ট! জ্যাকি চ্যান একবার এক সিনেমায় এমন একটি স্টান্ট করেন, যেখানে তাঁকে একটি চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে উঠতে হয়, কিন্তু কোনো সময় ছিল না প্র্যাকটিসের। কী করলেন জ্যাকি? একটা মুরগির পায়ে দড়ি বেঁধে ছাদ থেকে ফেলে দিলেন—মুরগি যেখানে নামল, সেখানেই তিনিও লাফালেন! পরে বলেছিলেন, “মুরগিটা যদি ভুল করত, আমি ট্রেনের নিচে!”৭. “জ্যাকি চ্যান” নামটা পেয়েছিলেন… অস্ট্রেলিয়াতে থালা ধুয়ে! জ্যাকি চ্যানের আসল নাম “চান কং সাং”। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন কিশোর বয়সে, তাঁর বাবার সাথে। সেখানে কাজ করতেন থালা ধোয়ার দোকানে। এক সহকর্মী তাঁর নাম উচ্চারণ করতে না পেরে বলেছিল, “তুই তো আমার মেট—আমি তোকে জ্যাকি বলেই ডাকব।” তখন থেকেই “জ্যাকি চ্যান” নামটা জনপ্রিয় হয়ে যায়।৮. সাপের সাথে ফাইট করার সময় কানে কামড়! ‘Snake in the Eagle’s Shadow’ ছবির সময় একবার একটি আসল সাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সাপটি ভুলবশত জ্যাকির কানে কামড়ে বসে! কিন্তু জ্যাকি তখনও ক্যামেরার সামনে থেকে নড়লেন না। দৃশ্যটা শেষ করে তবেই কান থেকে সাপ ঝাঁকিয়ে নামালেন! এই ঘটনায় পুরো ইউনিট বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।৯. গায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, জানেন? হ্যাঁ, জ্যাকি চ্যান কেবল অ্যাকশন হিরো নন, তিনি চমৎকার গায়কও। তিনি ২০টিরও বেশি অ্যালবাম বের করেছেন, এবং বহু সিনেমার থিম সং নিজেই গেয়েছেন। এমনকি Disney-এর Mulan-এর চাইনিজ ভার্সনে ‘I’ll Make a Man Out of You’ গানটিও তিনি গেয়েছেন। মজার কথা, তিনি মজা করে বলেন, “আমি স্টান্ট ভালো করি, কিন্তু গান গাইতে গিয়ে নিজের কান বন্ধ করি!”১০. রেস্টুরেন্টে গিয়েও প্লেট ধুয়ে দেন! জ্যাকি চ্যান একজন অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ। অনেক সময়ই তিনি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার পর নিজেই নিজের প্লেট ধুয়ে ফেলেন। একবার এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন, তিনি বলেন, “আমি যেখানেই থাকি, নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ ভাবি। প্লেট ধোয়াটা খারাপ কিছু নয় বরং শান্তির।”১১. নিজের স্টান্ট টিম—“জ্যাকি চ্যান স্টান্ট টিম”! অনেক অভিনেতা নিজের জন্য বডি ডাবল রাখেন। কিন্তু জ্যাকি চ্যান নিজের জন্য বানিয়েছেন একটা স্টান্ট টিম, যারা একসাথে কাজ করেন এবং নিজেদের মধ্যে এতই বন্ধুত্ব যে তাঁরা বলেন, “আমরা শুধু কাজ করি না, জীবনটা একসাথে কাটাই!” এই টিমের সদস্যরা সবসময় বলে থাকেন, “আমরা জানি আমরা বাঁচব না, কিন্তু মরতেও চাই জ্যাকির পাশে!”১২. গিফট দেয়ার স্টাইলেও চমক! জ্যাকি চ্যান একবার তাঁর স্টান্ট টিমকে উপহার দিয়েছিলেন ১০টি হুন্দাই গাড়ি! আর একবার একটি সম্পূর্ণ বিল্ডিং কিনে বলেছিলেন, “এইটা আমাদের রিহার্সাল রুম।” তাঁর উপহার দেয়ার ধরনও একেবারে সিনেমাটিক।১৩. তাঁর মূর্তি আছে “মোম” আর “স্মার্টফোন” দুই জায়গাতেই! লন্ডনের মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে তো জ্যাকির মোমের মূর্তি আছে—এটা তো জানা কথা। কিন্তু জানেন কি, হংকং-এ তাঁর নামে রয়েছে একটা মোবাইল অ্যাপও, যেখানে তাঁর প্রতিদিনের কাজকর্ম, মেডিটেশন, গান, এমনকি রান্নার ভিডিও পর্যন্ত দেখা যায়? তাঁর ভক্তদের জন্য এটি যেন এক ডিজিটাল জ্যাকি!১৪. তাঁর কুকুরের নাম “JJ”—যার নিজের পাসপোর্ট আছে! জ্যাকি চ্যান তাঁর পোষা কুকুর ‘JJ’-কে এতটাই ভালোবাসেন যে তার জন্য আলাদা পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, এমনকি একটা ছোট সুটকেসও আছে! তিনি বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে যাই, আমার ডানহাতের মতো পাশে থাকে JJ।”
জ্যাকি চ্যান কেবল একজন সুপারস্টার নন—তিনি একজন মানুষ, যাঁর হাস্যরস, সাহস আর সরলতা আমাদের অনুপ্রাণিত করে প্রতিদিন। তাঁর জীবনের এসব ছোট ছোট মজার কাহিনিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বড় মানুষরা সবসময় বড় কীর্তি করেই বড় হন না, তাঁদের হাসির পেছনেও থাকে এক গভীর জীবনের গল্প।
আপনি কি জ্যাকি চ্যানের আর কোনো মজার কাহিনি জানেন? কমেন্টে জানান, আপনার প্রিয় ‘চ্যান’ মোমেন্ট!