মুম্বাই, জানুয়ারি ২০২৫: ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রদ্ধেয় মুখ, প্রিয় অভিনেতা অচ্যুত পোতদার (১৯৩৪–২০২৫) প্রয়াত। ৯০ বছর বয়সে তাঁর জীবনের পর্দা নামল, রেখে গেলেন এক বিশাল কর্মজীবন, অসংখ্য স্মৃতি এবং অনুপ্রেরণামূলক উত্তরাধিকার। তাঁর প্রস্থান বলিউডে সৃষ্টি করেছে এক গভীর শূন্যতা।
ছোট চরিত্রের অমর শিল্পী
অচ্যুত পোতদার ছিলেন সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি কখনও বড় নায়কোচিত চরিত্র পাননি, তবুও ছোট ছোট চরিত্রের মধ্য দিয়ে সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন। দর্শক তাঁকে মনে রেখেছেন স্টারডমের জন্য নয়, বরং আন্তরিক অভিনয়ের জন্য। তিনি প্রমাণ করেছিলেন—চরিত্র যত ক্ষুদ্রই হোক, সততার সঙ্গে ফুটিয়ে তুললে তা দর্শকের মনে চিরস্থায়ী হয়ে যায়।
চার দশকের অভিনয়জীবন
প্রায় ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন।
- ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’ (১৯৯৫)-এ রেলওয়ে কর্মচারীর ভূমিকায় তাঁর অল্প সময়ের উপস্থিতি আজও ভোলেনি দর্শক।
- ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ (১৯৯২)-এ তিনি ছাত্রজীবনের আবেগময় কাহিনিকে আরও বাস্তব করেছেন।
- ‘লাগান’ (২০০১)-এ গ্রামীণ সমাজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তাঁর অভিনয় ছিল অনবদ্য।
- ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ (২০০৩)-এ মানবিক এক মুখ্য চরিত্রে তিনি দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটেছিলেন।
এছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে, যেখানে বারবার প্রমাণ করেছেন, সিনেমার সৌন্দর্য শুধু নায়ক–নায়িকার ওপর নির্ভর করে না; বরং প্রতিটি চরিত্রের সত্যনিষ্ঠ অভিনয়েই ছবির প্রাণ নিহিত।
জীবনের প্রারম্ভ ও কর্মজীবন
অভিনয়ের আগে অচ্যুত পোতদার কর্পোরেট দুনিয়ার মানুষ ছিলেন। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনে। চাকরির পাশাপাশি তাঁর ভেতরে বাস করত থিয়েটারের প্রতি গভীর টান। থিয়েটার থেকেই তিনি পা রাখেন সিনেমার জগতে।
অবসর গ্রহণের পর অভিনয়কেই জীবনের পূর্ণসময়ের পেশা হিসেবে নেন এবং ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন পরিচালক ও প্রযোজকদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত চরিত্রাভিনেতা।
মুখে হাসি, সংলাপে সরলতা
অচ্যুত পোতদারের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর স্বাভাবিকতা। পর্দায় তিনি যেভাবে মুখে মৃদু হাসি আর সহজ-সরল সংলাপে জীবনকে ফুটিয়ে তুলতেন, দর্শক তাঁকে নিজেদের পরিবারের একজন মনে করতেন। কখনও শিক্ষক, কখনও অফিসার, কখনও দয়ালু প্রবীণ মানুষ—সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন বাস্তবের প্রতিচ্ছবি।
প্রজন্মের অনুপ্রেরণা
তাঁর জীবন ও অভিনয় নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনন্য শিক্ষা।
- অভিনেতাদের জন্য শিক্ষা: ছোট চরিত্র বলে কিছু নেই। আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করলে দর্শক মনে রাখে।
- সিনেমার জন্য শিক্ষা: ছবিকে শক্তিশালী করে তুলতে প্রত্যেকটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ।
- দর্শকদের জন্য শিক্ষা: অভিনয় শুধুই গ্ল্যামার নয়, এটি জীবনের প্রতিচ্ছবি।
সহকর্মীদের স্মৃতিচারণা
তাঁর মৃত্যুর খবরে বলিউডে নেমে এসেছে গভীর শোক। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন—
- “অচ্যুতদা ছিলেন সেটের প্রাণ। সবসময় হাসিমুখে কাজ করতেন।”
- “তিনি ছিলেন এক নির্ভরযোগ্য অভিনেতা, যিনি চরিত্রকে নিজের মতো করে বাঁচিয়ে তুলতেন।”
- “তাঁকে ছাড়া সিনেমার পর্দা যেন কিছুটা ফাঁকা মনে হবে।”
উত্তরাধিকার ও অবদান
অচ্যুত পোতদারের অভিনয় জীবন আমাদের শিখিয়েছে—সিনেমা কেবল গ্ল্যামারের নয়, বরং মানবিকতার শিল্প। তাঁর চরিত্রগুলো শুধু গল্প নয়, দর্শকের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। তিনি ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনেতাদের মর্যাদা বাড়ানোর অন্যতম পুরোধা।
শেষ শ্রদ্ধা
আজ অচ্যুত পোতদার নেই, কিন্তু তাঁর অভিনীত অসংখ্য চরিত্র ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তাঁর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সিনেমার সত্যিকারের শক্তি নিহিত রয়েছে আন্তরিকতা ও সততার অভিনয়ে।
বিদায় অচ্যুত পোতদার। আপনাকে শ্রদ্ধা। আপনার স্মৃতি, আপনার হাসি, আপনার সততা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।
#AchyutPotdar #Bollywood #IndianCinema #CharacterActor #CinemaLegacy #RIPAchyutPotdar #Tribute