অজয় ভট্টাচার্য

অজয় ভট্টাচার্যের জন্ম পূর্ববঙ্গে (অধুনা বাংলাদেশে) কুমিল্লা জেলার শ্যামগ্রামে। পরিবারে শিক্ষার আবহাওয়া ছিল। স্কুলশিক্ষা কুমিল্লায় ঈশ্বর পাঠশালায়। কলকাতায় বঙ্গবাসী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভ করেন ৷ স্কুল ছাত্র থাকাকালীন কবি নজরুলের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং ধূমকেতু সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা ‘উল্কা’ প্রকাশিত হয়।

 

অজয় ভট্টাচার্য । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অজয় ভট্টাচার্য

অজয় ভট্টাচার্য কুমিল্লায় থাকাকালীন নাট্যদল গঠন, নাটক লেখা এবং নাটকে অভিনয়ও করেন। কিছুদিন কুমিল্লায় ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা এবং পরবর্তী কালে কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেছেন।

চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ গীতিকার হিসাবে (যুগ্মভাবে শৈলেন রায়ের সাথে) ধীরেন গাঙ্গুলী পরিচালিত বিদ্রোহী (১৯৩৫) ছবিতে। ঐ বছরই কালী ফিল্মস-এর প্রযোজনায় একটি এক রীলের ছবি সুদূরের প্রিয়া (১৯৩৫) মুক্তি পায়। অজয়বাবুর কাহিনি ও গান অবলম্বনে এই ছবিটি তৈরি করেন শচীন দেববর্মণ।

যে সব সংগীত পরিচালকরা তাঁর লেখা গানে সুর দিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাইচাঁদ বড়াল, হিমাংশু দত্ত, শচীন দেববর্মণ, তিমিরবরণ, পঙ্কজ মল্লিক ইত্যাদি। এবং উল্লেখযোগ্য কণ্ঠশিল্পীরা হলেন শচীন দেববর্মণ, কুন্দনলাল সায়গল, রবীন মজুমদার, কানন দেবী, সুপ্রভা ঘোষ, অনুপম ঘটক, মলিনা দেবী, ছায়া দেবী ইত্যাদি।

 

অজয় ভট্টাচার্য । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

চলচ্চিত্রের জন্য তাঁর লেখা বহু গানই ছবিকে বক্স অফিসে সাফল্য এনে দিয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি হল জীবনমরণ (১৯৩৯) ছবিতে সায়গলের কণ্ঠে ‘পাখি আজ কোন কথা কয়’ এবং ‘এই পেয়েছি অনল জ্বালা, পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে অধিকার (১৯৩৯) ছবির ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’, ভারতী দেবীর কণ্ঠে ডাক্তার (১৯৪০) ছবির ‘আমি বন বুলবুল’, শচীন দেববর্মণের কণ্ঠে শাপমুক্তি (১৯৪০) ছবির ‘বাংলার বধূ বুকে তার মধু’, এবং ছদ্মবেশী (১৯৪৪) ছবির ‘বন্দর ছাড়ো যাত্রীরা সব’ এবং মুক্তি ছবির ‘কোন লগনে জনম নিলাম’ গানগুলি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও কানন দেবীর কণ্ঠে ‘সে নিল বিদায়’ গানটিও খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। অজয় ভট্টাচার্য ৪৪টি ছায়াছবির জন্য গান লেখার পাশাপাশি অশোক (১৯৪২) এবং ছদ্মবেশী (১৯৪৪) ছবি দুটি পরিচালনা করেন। নিমাই সন্ন্যাস (১৯৪১) ছবি তাঁর লেখা গল্প ও চিত্রনাট্য অবলম্বনে নির্মিত। এছাড়াও অধিকার (১৯৩৯), মায়ের প্রাণ (১৯৪০), মহাকবি কালিদাস (১৯৪২) ইত্যাদি ছবি তাঁর গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। ছদ্মবেশী ছবিটি তাঁর মৃত্যুর পর মুক্তি পায়।

এটিই ছিল চলচ্চিত্রে তাঁর শেষ কাজ, যদিও তাঁর লেখা গান অবলম্বনে দোটানা (১৯৪৫), প্রতিমা (১৯৪৬), পরভৃতিকা (১৯৪৭) ইত্যাদি ছবিগুলি মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পরে। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ (রাতের রূপকথা, ঈগল ও অন্যান্য কবিতা, সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা, তমসা); উপন্যাস (যেথা নাহি প্রেম); অনুবাদ (রুবাইয়াৎ-ই-ওমর-খৈয়াম, রোডব্যাক); গীতি সংগ্রহ (আজি আমারি কথা, মিলন বিরহ গীতি, শুকসারি, আজও ওঠে চাঁদ) ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি ছাড়াও তাঁর ছোট ভাই সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় তাঁর লেখা অনেক কবিতা ও গদ্য ছাপা হয়েছে, যার অনেকগুলিই এখনও অগ্রন্থিত।

 

Google News অজয় ভট্টাচার্য
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি—

১৯৩৫ : বিদ্রোহী, সুদূরের প্রিয়া; ১৯৩৬ : কাল পরিণয়, ব্যথার দান, দ্বীপান্তর, গৃহদাহ, মায়া; ১৯৩৭ : রাজগী, দিদি, মুক্তিস্নান, মুক্তি, গ্রহের ফের; ১৯৩৮ অভিজ্ঞান, দেশের মাটি, সাথী; ১৯৩৯ : অধিকার, পথিক, বড়দিদি, সাপুড়ে, রজত জয়ন্তী, জীবনমরণ; ১৯৪০ : পরাজয়, আলোছায়া, ডাক্তার, শাপমুক্তি, অভিনেত্রী, রাজকুমারের নির্বাসন, নিমাই সন্ন্যাস; ১৯৪১ : নর্তকী, রাজনর্তকী, এপার ওপার, মায়ের প্রাণ; ১৯৪২ : পাষাণ দেবতা, মহাকবি কালিদাস, অপরাধ, মিলন, অশোক, পরিণীতা; ১৯৪৪ : ছদ্মবেশী; ১৯৪৫: দোটানা; ১৯৪৭ : পরভৃতিকা, স্বয়ংসিদ্ধা; ১৯৪৮ : উমার প্রেম, শ্যামলের স্বপ্ন; ১৯৫৭ : ছায়াপথ; ১৯৮৭ : দাবার চাল, চপার।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment