অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য

ভারতীয় বাঙালি থিয়েটার এবং চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য তার অভিনয়ের দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে নিজের এক বিশেষ পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তার জীবনের গল্প কেবল একটি সাফল্যের গল্প নয়, এটি প্রমাণ করে যে, অধ্যাবসায় ও নিষ্ঠা দিয়ে যে কোনও পরিস্থিতি থেকে সাফল্য অর্জন সম্ভব। আজ আমরা আলোচনা করবো তার জীবন, কর্ম এবং অনন্য অর্জন নিয়ে।

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য
অনির্বাণ ভট্টাচার্য

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য বাংলা জীবনী

 

শুরুর দিক

অনির্বাণ ভট্টাচার্য ১৯৮৬ সালের ৭ই অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মিদনাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার হওয়ার, তবে জীবনের পরবর্তী সময়ে তার পথ ঘুরে যায়। মাধ্যমিকে তিনি ফার্স্ট ডিভিশন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করেন। ২০০৪ সালে কলকাতায় আসেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার পড়ার জন্য এবং এখানেই শুরু হয় তার থিয়েটার জীবনের পথচলা।

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য
অনির্বাণ ভট্টাচার্য

 

থিয়েটারে অভিষেক

অনির্বাণের থিয়েটারে প্রথম বড় সাফল্য আসে “দেবী সর্পমস্তা” নাটকের মাধ্যমে, যা মনোজ মিত্র রচিত এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত একটি জনপ্রিয় প্রযোজনা। এই নাটকটি তার থিয়েটার জীবনের প্রথম সফল মঞ্চ এবং এটি তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। পরবর্তীতে, তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা নাটকে অভিনয় করেন, যেমন “অ্যান্টনি সৌদামিনী”, “নাগমণ্ডলা”, “বিসর্জন”, “এফএম মহানগর”, “কারু বাসনা”, “অদ্য শেষ রজনী” ইত্যাদি। ২০১৭ সালে, “অদ্য শেষ রজনী” নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে মাহিন্দ্রা এক্সিলেন্স ইন থিয়েটার অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেন।

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য
অনির্বাণ ভট্টাচার্য

 

চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ

থিয়েটারে সফলতার পর, ২০১৫ সালে জি বাংলার টেলিফিল্ম “কাদের কুলের বউ” দিয়ে তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু হয়। এরপর তিনি “ঈগলের চোখ” চলচ্চিত্রে বিজন রায় চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এই চরিত্রে তার অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে। ২০১৭ সালে তিনি “ঈগলের চোখ” চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।

২০১৯ সালে তিনি “ঘরে বাইরে আজ” চলচ্চিত্রে নিখিলেশ চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় সমালোচক এবং দর্শকদের কাছ থেকে। এর জন্য তিনি প্রথম সেরা অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন।

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য
অনির্বাণ ভট্টাচার্য

 

পুরস্কার ও সম্মাননা

অনির্বাণ ভট্টাচার্য তার কর্মজীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো:

  • ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০১৭) – সেরা সহকারী অভিনেতা (ঈগলের চোখ)

  • মেটা অ্যাওয়ার্ডস (২০১৭) – থিয়েটারে এক্সেলেন্সের জন্য সেরা অভিনেতা (অদ্য শেষ রজনী)

  • BIG বাংলা রাইজিং স্টার পুরস্কার (২০১৪) – সেরা থিয়েটার অভিনেতা (রাজা লিয়ার)

  • জী বাংলা গৌরব পুরস্কার (২০১৪) – সেরা অভিনেতা (নাগমণ্ডলা)

এছাড়া, তিনি নীরদ বরণ স্মৃতি পুরস্কার, সুদ্রক সম্মান, এবং আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার (আইবিএফএ) এর মতো আরো পুরস্কার লাভ করেছেন। তার অভিনয়ের জন্য তিনি আরও বহু সম্মাননা লাভ করেছেন, যা তার প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের পরিপূর্ণ প্রতিফলন।

ব্যক্তিগত জীবন

অনির্বাণ ভট্টাচার্য ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ সাদামাটা। তিনি মধুরিমা গোস্বামীকে প্রেমিকা হিসেবে বিবাহ করেন এবং বর্তমানে তাদের সুখী জীবন কাটাচ্ছেন। তার জীবনের অন্যান্য দিকের মধ্যে অন্যতম একটি হল তার পছন্দের খাবার—মাটন বিরিয়ানি এবং পানীয়—চা। অভিনেতা হিসেবে তার প্রিয় ব্যক্তিত্বগুলির মধ্যে রয়েছেন উত্তম কুমার, ঋত্বিক ঘটক এবং সুচিত্রা সেন।

শারীরিক পরিসংখ্যান

  • উচ্চতা: ৬’০” (১৮৩ সেমি)

  • ওজন: ৭৬ কেজি

  • চোখের রঙ: কালো

  • চুলের রঙ: কালো

সম্পত্তি ও আয়

  • চলচ্চিত্র থেকে পিছু: ৫০-৬০ লাখ টাকা

  • সর্বমোট আয়: ১-৫ মিলিয়ন টাকা

পছন্দের তালিকা

  • রং: কালো, সবুজ

  • বই: ছোটো গল্পের বই, কবিতার বই

  • লেখক: শেকসপিয়র

কিছু অজানা তথ্য

  • অনির্বাণ ভট্টাচার্য ছোটবেলায় ক্রিকেটার বা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

  • তিনি “কলকাতার কিং” চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তবে এটি মুক্তি পায়নি।

  • অপর্ণা সেন তাকে “আরশিনগর” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন, যা তার চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম বড় সুযোগ ছিল।

 

Google News অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

অনির্বাণ ভট্টাচার্য আজ বাংলা থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। তিনি তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। তার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং সঠিক সময়ে সুযোগ পেলে একজন মানুষ তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম। তার ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হবে—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Comment