অন্তর্জলী যাত্রা চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- অন্তর্জলী যাত্রা ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি কলকাতা ভিত্তিক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ভারতীয় চলচ্চিত্র। এটি কমল কুমার মজুমদারের মহাযাত্রা নামে একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত।
চলচ্চিত্রটি উনিশ শতকের বাংলার কুলিন ব্রাহ্মণদের বহু বিবাহের একটি দলিল। উনিশ শতকের বাংলাদেশে মানুষের বিশ্বাস ছিল গঙ্গার তীরে মানুষকে দাহ করলে আত্মার সদ্গতি হয় এবং বিবাহযোগ্যা অনূঢ়া কন্যা বাড়িতে থাকলে পরিবারকে একঘরে হয়ে থাকতে হত। তেমনি একটি ঘটনা এই চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অন্তর্জলী যাত্রা চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা—ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
- কাহিনি—কমলকুমার মজুমদার।
- চিত্রনাট্য, চিত্রগ্রহণ, সংগীত ও পরিচালনা—গৌতম ঘোষ।
- শিল্প নির্দেশনা—অশোক বসু।
- শব্দগ্রহণ—জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, অনুপ মুখোপাধ্যায়।
- সম্পাদনা— মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় ।
অন্তর্জলী যাত্রা চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
শত্রুঘ্ন সিংহ, শম্পা ঘোষ, প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, রবি ঘোষ, সজল রায়চৌধুরী, মোহন আগাসে, কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়, রথীন লাহিড়ী।

অন্তর্জলী যাত্রা চলচ্চিত্রের কাহিনি—
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের বাংলাদেশে মানুষের বিশ্বাস ছিল গঙ্গার তীরে মানুষকে দাহ করলে আত্মার সদ্গতি হয়। তখনও বিবাহযোগ্যা অনূঢ়া কন্যা বাড়িতে থাকলে পরিবারকে একঘরে হয়ে থাকতে হত। সীতারাম (প্রমোদ) নামে এক মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে গঙ্গার পাড়ে আনা হয়েছে, যে কোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। অন্যদিকে যশোমতী (শম্পা), ব্রাহ্মণ বাড়ির অবিবাহিতা যুবতী, পিতা (বসন্ত) একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত।
গ্রামের ব্রাহ্মণ সমাজ বিধান দেন সীতারামের সাথে যশোমতীর বিবাহের, এবং সীতারামের মৃত্যুর পর যশোমতী সতী হলে পরিবারের পুণ্য হবে। আপত্তি করে শ্মশানের ডোম অচ্ছুত বিরজু (শত্রুঘ্ন)। কিন্তু তার আপত্তিতে কেউ কর্ণপাত করে না, বিয়ে হয়ে যায়।
গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে যায়, শ্মশানে থাকে মৃত্যুপথযাত্রী সীতারাম, যশোমতী এবং বিরজু। বিরজু যশোমতীকে পালিয়ে যেতে অনুরোধ করে, যশোমতী রাজি হয় না, বিরজু জোর খাটাতে চায়, তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং তারা নিজের অজান্তেই আদিম মানব মানবীতে পরিণত হয়। বিরজুর মনে একই সাথে যশোমতীর প্রতি ভালোবাসা ও করুণা জন্ম নেয়।
গঙ্গায় বান আসে, সীতারাম জোয়ারে ভেসে যায়, যশোমতী সীতারামকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেও ভেসে যায়, বিরজু যশোমতীকে রক্ষা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়।
পুরস্কার—
১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষায় নির্মিত শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্রের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৮৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। ১৯৮৮ সালে তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ-প্রী লাভ করে। এ ছাড়াও লন্ডন, গোটেনবার্গ, মিউনিখ, লস এঞ্জেলস, মন্ট্রিল ইত্যাদি চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়।
আরও দেখুনঃ