আঙুরবালা, যাঁর প্রকৃত নাম প্রভাবতী দেবী, জন্মগ্রহণ করেন ২৩ জুলাই ১৯০৬ সালে কলকাতার কাশিপুরে। তাঁর পিতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বর্ধমান জেলার ইন্দাসের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। শৈশবে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য জলপানি লাভ করলেও পারিবারিক কারণে প্রথাগত শিক্ষায় অগ্রসর হতে পারেননি। তবে সঙ্গীত সাধনায় তাঁর যাত্রা শুরু হয় মাত্র সাত বছর বয়সে, পিতৃবন্ধু অমূল্য মজুমদারের কাছে গানের তালিম নিয়ে।

সঙ্গীত সাধনা ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে উত্থান
আঙুরবালার সঙ্গীত শিক্ষা ছিল বিস্তৃত ও গভীর। তিনি খেয়াল, ঠুংরি, দাদরা, গজল এবং কীর্তন শিখেছেন জিতু ওস্তাদ, রামপ্রসাদ মিশ্র, ললিতমোহন গোস্বামী, জমিরুদ্দিন খাঁ, ঈষাণ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের মতো গুণী ওস্তাদদের কাছ থেকে। বিশেষ করে নজরুল ইসলামের কাছ থেকে নজরুলগীতি শেখার অভিজ্ঞতা তাঁর সঙ্গীত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাত্র কিশোরী বয়সেই তাঁর গাওয়া গান গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “বাঁধ না তরীখানি আমার এ নদীকূলে”। তিনি বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় প্রায় ৫০০টিরও বেশি গান রেকর্ড করেন, যার মধ্যে রবীন্দ্রসংগীতও অন্তর্ভুক্ত।
মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে অবদান
আঙুরবালা মঞ্চাভিনেত্রী হিসেবেও সমানভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি মিনার্ভা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থেকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম অভিনয় ছিল ১৯৩৩ সালে, প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত “যমুনা পুলিনে” ছবিতে ‘জটিলা’ চরিত্রে। পরবর্তীতে তিনি “ধ্রুব” (১৯৩৪), “অবর্তন”, “আমার দেশ”, “পণ্ডিতমশাই” (১৯৩৬), “ইন্দিরা” (১৯৩৭), “সৰ্ব্বজনীন বিবাহোৎসব”, “জগাপিসি”, “খনা”, “বেকার নাশন” (১৯৩৮) এবং “দেবযানী” (১৯৩৯) ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নেপথ্য সংগীতও পরিবেশন করেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
আঙুরবালার সঙ্গীত ও অভিনয়ে অবদানের জন্য তিনি বহু সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি ভারত সরকারের সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
️ মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
আঙুরবালা ৬ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে পরলোকগমন করেন। তাঁর সঙ্গীত ও অভিনয়ের অবদান বাংলা সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নজরুলগীতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তাঁর গাওয়া গান আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
চলচ্চিত্রপঞ্জি
১৯৩৩: যমুনা পুলিনে
১৯৩৪: ধ্রুব
১৯৩৬: আবর্তন, আমার দেশ, পণ্ডিতমশাই
১৯৩৭: ইন্দিরা
১৯৩৮: সৰ্ব্বজনীন বিবাহোৎসব, জগাপিসি, খনা, বেকার নাশন
১৯৩৯: দেবযানী
আঙুরবালার জীবন ও কর্ম বাংলা সঙ্গীত ও মঞ্চের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর সঙ্গীত ও অভিনয় আজও নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
আরও দেখুনঃ