বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফারহানা আমিন রত্না, যিনি ‘নূতন’ নামে সুপরিচিত, তার প্রতিভা ও অবদানের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এই অভিনেত্রী তার অভিনয় জীবনে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

জন্ম ও শৈশব
নূতনের জন্ম ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার ব্রাহ্মপল্লীতে। তার পৈতৃক বাড়ি ভারতের উত্তর প্রদেশে। শৈশবে তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে নৃত্য ও মঞ্চ অভিনয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রে অভিষেক ও ক্যারিয়ার
নূতনের বড় বোন গীতা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। তার হাত ধরেই নূতন চলচ্চিত্রে প্রবেশের সুযোগ পান। অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর পরামর্শে তিনি ‘নতুন প্রভাত’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পারিবারিক নাম রত্না পরিবর্তন করে ‘নূতন’ নাম গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রে আনসারের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে।
এরপর তিনি ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। কিছু সময়ের বিরতি শেষে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘পাগলা রাজা’ (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পুনরায় চলচ্চিত্রে সক্রিয় হন।

প্রযোজনা কার্যক্রম
অভিনয়ের পাশাপাশি নূতন চলচ্চিত্র প্রযোজনায়ও সক্রিয় ছিলেন। তার প্রযোজনা সংস্থা বিএন প্রোডাকশনের ব্যানারে তিনি ‘চান সুরুজ’, ‘কাবিন’, ‘সাহস’, ‘রূপের রাণী গানের রাজা’, ‘নাচে নাগিন’, ‘শত্রু ধ্বংস’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
জন্মসূত্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নূতন পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে প্রযোজক-পরিচালক রুহুল আমিন বাবুলকে বিয়ে করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
নূতন তার অভিনয় জীবনে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ১৯৮৭ সালে বাচসাস পুরস্কার, ১৯৯১ সালে ‘স্ত্রীর পাওনা’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০১৫ সালে বাংলাসিনে অ্যাওয়ার্ডে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ
নূতনের অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকা নিচে প্রদান করা হলো:
| চলচ্চিত্রের নাম | মুক্তির বছর | পরিচালক | সহশিল্পী |
|---|---|---|---|
| নতুন প্রভাত | ১৯৭০ | মোস্তফা মেহমুদ | আনসার |
| ওরা ১১ জন | ১৯৭২ | চাষী নজরুল ইসলাম | খসরু |
| সংগ্রাম | ১৯৭৪ | চাষী নজরুল ইসলাম | খসরু |
| পাগলা রাজা | ১৯৭৮ | আজহারুল ইসলাম খান | রাজ্জাক |
| স্ত্রীর পাওনা | ১৯৯১ | সুভাষ দত্ত | আলমগীর |

নূতনের প্রতিভা ও অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তার অভিনয় ও প্রযোজনার মাধ্যমে তিনি দর্শকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছেন।
