দিলারা হানিফ রীতা, যিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে পূর্ণিমা নামে অধিক পরিচিত ও সুপ্রসিদ্ধ, জন্মগ্রহণ করেন ১১ জুলাই ১৯৮৪ সালে, সাগরনগরী চট্টগ্রামে। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও সম্মানিত অভিনেত্রী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে নিজস্ব স্থান গড়ে তুলেছেন।
পূর্ণিমার রূপালী পর্দায় যাত্রা শুরু হয় জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এই জীবন তোমার আমার (১৯৯৭) ছবির মাধ্যমে, যখন তিনি ছিলেন মাত্র এক কিশোরী। নিজের সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব ও অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে খুব দ্রুতই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন।
২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে সম্মানিত হন।
পূর্ণিমা শুধু অভিনয়ে দক্ষ নন, তাঁর স্বাভাবিক সৌন্দর্য, প্রাণবন্ত হাসি এবং পর্দায় সাবলীল উপস্থিতি দর্শকদের মনে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাঁর কর্মজীবনে রয়েছে বহু দর্শকনন্দিত সিনেমা, অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে নারীর দৃঢ় ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অভিনেত্রী পূর্ণিমার জীবনী
পূর্ণিমা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য:
- পূর্ণিমার সম্পূর্ণ নাম : দিলারা হানিফ রিতা
- পূর্ণিমার ডাক নাম : পূর্ণিমা, রিতা
- পূর্ণিমার জন্ম তারিখ : ১১ জুলাই, ১৯৮১
- পূর্ণিমার জন্ম স্থান : চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
- পূর্ণিমার নাগরিকতা : বাংলাদেশী
- পূর্ণিমার জীবিকা : মডেল, অভিনেত্রী
- পূর্ণিমার বয়স : ৪০ বছর
- পূর্ণিমার শিক্ষাগত যোগ্যতা : গ্র্যাজুযেট
- পূর্ণিমার ধর্ম : ইসলাম
- প্রথম চলচ্চিত্র : এ জীবন তোমার আমার (১৯৯৭)
পূর্ণিমার শারীরিক পরিসংখ্যান:
- পূর্ণিমার উচ্চতা : ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি
- পূর্ণিমার ওজন : ৬৫ কেজি
- পূর্ণিমার চুলের রঙ : কালো
- পূর্ণিমার চোখের রঙ : কালো
পূর্ণিমার পরিবার:
- পূর্ণিমার পিতা: মোহাম্মদ হানিফ
- পূর্ণিমার মাতা: সুফিয়া বেগম
- পূর্ণিমার বোন: রেখা, দিলরুবা হানি
- পূর্ণিমার কন্যা: আর্শিয়া উমাইজা
পূর্ণিমা ২০০৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী মোস্তাক কিবরিয়ার সঙ্গে ১ম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার সাথে ডিভোর্স হয় ২০০৭ সালের ১৫ মে। এরপর পূর্ণিমা ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। তার মেয়ের নাম আরশিয়া উমাইজা। ফাহাদ জামালের সাথে পূর্ণিমার বিচ্ছেদ হয় ২০২২ সালের ২৭ মে। এরপর তিনি আশফাকুর রহমান রবিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
পূর্ণিমার পছন্দ-অপছন্দ:
- পূর্ণিমার পছন্দের খাবার : মাছ, ডাল রাইতা, গার্লিক রাইস
- পূর্ণিমার পছন্দের অভিনেতা : শাহরুখ খান
- পূর্ণিমার পছন্দের অভিনেত্রী : বিপাশা বসু
- পূর্ণিমার পছন্দের খেলা : ফুটবল
- পূর্ণিমার পছন্দের রং : হলুদ
পূর্ণিমা সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য:
- পূর্ণিমা ধূমপান বা মদ্য পান করেন না।
- পূর্ণিমা ১৬ বছর বয়সে তার অভিনয় জগতে পদার্পণ করেন।
- পূর্ণিমার সর্বাধিক সাফল্য পাওয়া সিনেমা হল: মনের মাঝে তুমি।
- ২০১০ সালে পূর্ণিমা “ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না” ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান।
পূর্ণিমার কর্মজীবন:
২০১১ সালে মুক্তি পায় আলমগীর প্রযোজিত এবং শাহ আলম কিরণ পরিচালিত মাটির ঠিকানা, যা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। একই বছর মুক্তি পায় মায়ের জন্য পাগল, যা থেকেও তিনি মনোনয়ন পান।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার বড় বাজেটের একটি সফল ছবি হিসেবে পরিচিতি পায়, যেখানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন রাজ্জাক, সোহেল রানা, আলমগীর ও শাকিব খান।
২০১৪ সালে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু ছবিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর কন্যা সন্তানের জন্মের পর তিনি কিছুদিন অভিনয় থেকে বিরত থাকেন। ২০১৬ সালে বন্ধ দরজা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আবারও রূপালী পর্দায় ফিরে আসেন।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি পূর্ণিমা ছোট পর্দায়ও কাজ করেছেন। ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে ল্যাবরেটরি নাটকে সেজুতি চরিত্রে অভিনয় করেন। এ বছরই ঈদ উপলক্ষে পাঁচটি নাটকে অংশ নেন: ওইখানে যেও না তুমি, উল্টোধনুক, এখনও ভালোবাসি, নীলিমার প্রান্তে দাঁড়িয়ে ও অমানিশা।

২০১৫ সালে ঈদের নাটক প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাতদিন-এ মোশাররফ করিম ও ইরেশ যাকেরের সঙ্গে অভিনয় করেন। ২০১৬ সালে লাভ অ্যান্ড কোং নাটকে মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে এবং এস. এ. হক অলিক পরিচালিত ফিরে যাওয়া হলো না টেলিফিল্মে হৃদয় খানের বিপরীতে অভিনয় করেন।
২০১৮ সাল থেকে পূর্ণিমা উপস্থাপনা শুরু করেন তারকাকেন্দ্রিক আলাপচারিতা অনুষ্ঠান “এবং পূর্ণিমা” দিয়ে। একই বছর তিনি আরও অভিনয় করেন হ্যালো ৯১১: লাভ ইমার্জেন্সি, রোদ্দুরে পেয়েছি তোমার নাম এবং ম্যানিকুইন টেলিছবিতে।
পূর্ণিমার অভিনয়জীবন বৈচিত্র্যময়, যেখানে তিনি চলচ্চিত্র, নাটক এবং উপস্থাপনা—তিন ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কর্মজীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আছে সৃজনশীলতা, নিষ্ঠা এবং দর্শকদের ভালোবাসা অর্জনের অনবদ্য গল্প।