অরণ্যের দিনরাত্রি চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- অরণ্যের দিনরাত্রি সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র যা ১৯৭০ সালে মুক্তি পায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত অরণ্যের দিনরাত্রি উপন্যাস অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
চার বন্ধু, অসীম, সঞ্জয়, হরি এবং শেখর, কলকাতার বাসিন্দা, ছুটিতে পালামৌ এর কাছাকাছি বেড়াতে এসেছে। আগে থেকে কোনো বনবাংলো বুক না করে এক বাংলোয় কেয়ারটেকারকে ঘুষ দিয়ে তারা ঘরের দখল নেয়। গ্রামের মেলা দেখতে গিয়ে বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরেরদিন সকালে চার বন্ধু কলকাতায় ফেরার প্রস্তুতি নেয়। অসীম চৌকিদার কে তার প্রাপ্য টাকা দিয়ে বলে যে তার চাকরি খোয়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
অরণ্যের দিনরাত্রি চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা – প্রিয়া ফিল্মস।
- মূল কাহিনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
- চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা – সত্যজিৎ রায়।
- চিত্রগ্রহণ— সৌমেন্দু রায়।
- শিল্প নির্দেশনা বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
- সম্পাদনা—দুলাল দত্ত।
- শব্দগ্রহণ — সুজিত সরকার, জে.পি. সেন।
- গীতিকার—অতুলপ্রসাদ সেন।
অরণ্যের দিনরাত্রি চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
শর্মিলা ঠাকুর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, সিমি গারেয়াল, কাবেরী বসু, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, শমিত ভত্ত্ব, পাহাড়ী সান্যাল, প্রেমাশীষ সেন, সমর নাগ, ননী গঙ্গোপাধ্যায়, হায়রতী লাল লাহোরি, শ্রীমান দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

অরণ্যের দিনরাত্রি চলচ্চিত্রের কাহিনি—
অসীম (সৌমিত্র) একজন উঠতি আধিকারিক, সঞ্জয় (শুভেন্দু) একজন লেবার অফিসার, হরি (শমিত) একজন খেলোয়াড় এবং শেখর (রবি) চার বন্ধু কয়েক দিনের ছুটিতে পালামৌ বেড়াতে যায়। আগে থেকে কোনো বনবাংলো বুক না করেই তারা ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পড়ে। এক বাংলোয় কেয়ারটেকারকে ঘুষ দিয়ে তারা ঘরের দখল নেয়। সন্ধ্যায় বন্ধুরা এক দেশি মদের দোকানে গিয়ে নেশা করে। প্রেমে ব্যর্থ হরি প্রেমের প্রতি আস্থা হারিয়েছে, আদিবাসী মেয়ে ডুলির (সিমি) শারীরিক ঐশ্বর্যে মুগ্ধ হয়; তাকে কিছু টাকা দেয়।
পরের দিন শহরের দুটি মেয়েকে দেখে উত্তেজিত শেখর বন্ধুদের জানায়। মেয়েরা ত্রিপাঠী পরিবারের সদস্য। চার বন্ধু ত্রিপাঠী বাড়ি যায়। পরিবারে আছেন কর্তা সদাশিব (পাহাড়ী), কন্যা অপর্ণা (অপর্ণা), বিধবা পুত্রবধূ জয়া (কাবেরী) এবং জয়ার ছেলে টাবলু (দিব্যেন্দু)। অসীম অপর্ণার প্রতি এবং জয়া সঞ্জয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, অসীম অপর্ণাকে একা পেতে চায়, যদিও অপর্ণা সাড়া দেয় না।
পরের দিন ফরেস্ট অফিসার আকস্মিক ভাবে এসে হাজির হয়, এবং conservator এর থাকার জন্য তাদের ঘর ছেড়ে দিতে বলে। অপর্ণার চেষ্টায় তারা থাকার অনুমতি পায়, কারণ অপর্ণার বাবা conservatorএর পুরোনো বন্ধু। গ্রামের মেলা দেখতে গিয়ে বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শেখর জুয়ার আড্ডায় গিয়ে বসে, হরি ভুলিকে নিয়ে শারীরিক প্রেমে মত্ত হতে যায়। অসীম অপর্ণার সাথে যায় এবং সঞ্জয় যায় জয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। অসীম ও অপর্ণা মানসিক ভাবে কিছুটা কাছাকাছি আসে। জয়া চাইলেও সঞ্জয় তার ডাকে সাড়া দিতে পারে না।
ত্রিপাঠী পরিবারের মেয়েরা কোনো আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে হঠাৎ কলকাতায় যাত্রা করে, চার বন্ধুও আর আরণ্যক পরিবেশে থাকার উৎসাহ পায় না, তারাও ফেরার পথ ধরে। সত্যজিৎ এই ছবির চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে মূল কাহিনির অনেক পরিবর্তন করেন, বিষয়টি নিয়ে লেখকের সাথে তাঁর মতের অমিল লক্ষ করা যায়, সমালোচকরা একথাও উল্লেখ করেছেন যে মূল কাহিনির আবেগ অনেকটাই চলচ্চিত্রে নেই। এতদসত্ত্বেও একথা বলা যায় যে সমকালীন বিষয় নিয়ে এই ছবি সার্থক শিল্প হিসাবে উত্তীর্ণ।
প্রকাশনা :
এই ছবির চিত্রনাট্য এক্ষণ পত্রিকায় ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয়।
আরও দেখুনঃ