অহীন্দ্র চৌধুরী

অহীন্দ্র চৌধুরীর জন্ম কলকাতায়। ছাত্রাবস্থায় নাটক ও যাত্রার আকর্ষণে প্রথাগত শিক্ষায় সমাপ্তি হয়। মাত্র সতেরো বছর বয়সে পাড়ার নাট্যদলে যোগ দিয়ে ডি. এল. রায়ের লেখা শাজাহান নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯১৩-২৪ পাড়ায় যাত্রাদলে অভিনয় করেছেন।

 

অহীন্দ্র চৌধুরী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অহীন্দ্র চৌধুরী

প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় ফটোপ্পে সিন্ডিকেট প্রযোজিত এবং হেম মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাদীর প্রাণ (১৯২২) ছবিতে। এই নির্বাক ছবিটির ইংরাজি নাম ছিল Soul of a Slave, এই ছবিতে তিনি নায়ক ধর্মপালের ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে ফটোপ্পে সিন্ডিকেটের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ছিলেন অহীন্দ্র বাবু।

নির্বাক যুগে ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত প্রিয়নাথ গাঙ্গুলীর দুর্গেশনন্দিনী (১৯২৭) ছবিতে ওসমান এবং জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত রাজসিংহ (১৯৩০) ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। সবাক যুগে প্রথম অভিনয় জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালিত ঋষির প্রেম (১৯৩১) ছবিতে। ম্যাডান প্রযোজিত প্রহ্লাদ (১৯৩১) ছবিতে হিরণ্যকশিপু এবং বিষ্ণুমায়া (১৯৩২) ছবিতে কংসের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

 

অহীন্দ্র চৌধুরী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত এবং শিশিরকুমার ভাদুড়ী পরিচালিত সীতা (১৯৩৩) ছবিতে শকের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। পরে নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় নির্মিত প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত রূপলেখা (১৯৩৪) ছবিতে রাজা অশোকের ভূমিকায় এবং হীরেন বসু পরিচালিত মহুয়া (১৯৩৪) ছবিতে হুমদোর ভূমিকায় অভিনয় করেন।

সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে প্রায় ১৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রফুল্ল রায় পরিচালিত চাঁদ সদাগর (১৯৩৪) ছবির নাম ভূমিকায়, দক্ষযজ্ঞ (১৯৩৪)-এ দক্ষ, দেবদাসী (১৯৩৫) ছবিতে শশীশেখরের ভূমিকায় তার অভিনয় দর্শক সমাদর পায়।

নায়ক, এবং প্রধান পার্শ্ব চরিত্রগুলিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর অভিনীত খলনায়ক চরিত্রগুলিও প্রশংসা পেয়েছিল। কন্ঠহার (১৯৩৫) ছবিতে রণলাল, বিদ্রোহী (১৯৩৫) ছবিতে অক্ষর, যখের ধন (১৯৩৯) ছবিতে করালী প্রভৃতি ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। দেবকী বসু পরিচালিত সোনার সংসার (১৯৩৬) এবং স্যার শঙ্করনাথ (১৯৪৮) ছবি দুটিতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। তাঁর শেষ চলচ্চিত্রাভিনয় বীরেশ্বর বসু পরিচালিত শ্রাবণ সন্ধ্যা (১৯৭৪)।

সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে একটি মাত্র ছবি পরিচালনা করেছেন। নিজের কাহিনি এবং চিত্রনাট্য অবলম্বনে নির্বাক ছবি কৃষ্ণসখা বা কৃষ্ণ সুদামা। ছবিটি তাঁর পরিচালনায় এবং অরোরা ফিল্ম কোম্পানির প্রযোজনায় ১৯২৭ সালে মুক্তি পায়। প্রধানত নাট্যব্যক্তিত্ব অহীন্দ্র চৌধুরী চলচ্চিত্র ও পেশাদারি মঞ্চে অভিনয়ের সাথে নাট্যমঞ্চের কর্মাধ্যক্ষ হিসেবেও কাজ করেছেন।

দীর্ঘদিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের প্রধান ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট দিয়ে সম্মান জানায়। ভারত সরকার ১৯৬৩ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রদান করে। স্মৃতিকথা মূলক তাঁর লেখা ‘নিজেরে হারায়ে খুঁজি’ ২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।

 

Google News অহীন্দ্র চৌধুরী
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯২৩ বাদীর প্রাণ;
  • ১৯২৪ : প্রেমাঞ্জলি :
  • ১৯২৫ : মিশর রাণী;
  • ১৯২৭ : দুর্গেশনন্দিনী;
  • ১৯২৮ : শাস্তি কি শান্তি;
  • ১৯৩০ : রাজসিংহ;
  • ১৯৩১ : ঋষির প্রেম, প্রহ্লাদ;
  • ১৯৩২ : বিষ্ণুমায়া, কৃষ্ণকান্তের উইল;
  • ১৯৩৩ : সীতা;
  • ১৯৩৪ : চাঁদ সদাগর, রূপলেখা, মহুয়া, দক্ষযজ্ঞ:
  • ১৯৩৫ দেবদাসী, বিদ্রোহী, প্রফুল্ল, কণ্ঠহার;
  • ১৯৩৬ : তরুবালা, কৃষ্ণ সুদামা, পরপারে, রজনী, সোনার সংসার, সরলা;
  • ১৯৩৭ টকী অব টকীজ, হারানিধি, ইন্দিরা, শশীনাথ, ছিন্ন হার, রাজগী, প্রভাস মিলন;
  • ১৯৩৮: দেবী যুদ্ধরা, অভিনয়, খনা;
  • ১৯৩৯ : জনক নন্দিনী, যখের ধন, নরনারায়ণ, রিক্তা, রুক্মিণী, শর্মিষ্ঠা, চাণক্য, বামনাবতার;
  • ১৯৪০ : তটিনীর বিচার, কমলে কামিনী, শুকতারা, ডাক্তার, অমরগীতি, রাজকুমারের নির্বাসন:
  • ১৯৪১: কর্ণার্জুন, রাজনর্তকী, এপার ওপার, অবতার, নন্দিনী, উত্তরায়ণ;
  • ১৯৪২: অভয়ের বিয়ে,মীনাক্ষী, শেষ উত্তর, জীবন সঙ্গিনী, অশোক, পতিব্রতা:
  • ১৯৪৩ : অভিসার, যোগাযোগ, জননী, স্বপ্ন, দেবর,
  • ১৯৪৪: নন্দিতা, সন্ধ্যা, সন্ধি, মাটির ঘর:
  • ১৯৪৫ অভিনয় নয়, বন্দিতা, দুই পুরুষ, মানে না মানা, শ্রীদুর্গা, কলঙ্কিনী, গৃহলক্ষ্মী:
  • ১৯৪৬: পথের সাথী, নতুন বৌ, নিবেদিতা, দুঃখে যাদের জীবন গড়া;
  • ১৯৪৭ : রায় চৌধুরী, মন্দির, অলকানন্দা, অভিযোগ, বর্মার পথে;
  • ১৯৪৮ : স্যার শঙ্করনাথ, ঘুমিয়ে আছে গ্রাম, সাহারা, প্রিয়তমা, ভাইবোন, কালো ঘোড়া, বিচারক, জয়যাত্রা, নন্দরাণীর সংসার; ১৯৪৯ বন্ধুর পথ, নিরুদ্দেশ, দাসীপুত্র, আভিজাত্য, প্রতিরোধ, বিষের ধোঁয়া;
  • ১৯৫০ সঞ্চালী, পথহারার কাহিনী, মহাসম্পদ, মাইকেল মধুসুদন, বিদ্যাসাগর;
  • ১৯৫১ গাঁয়ের মেয়ে, স্পর্শমণি, আনন্দমঠ, দত্তা।
  • ১৯৫২: কুহেলিকা, কৃষ্ণকান্তের
  • ১৯৫৩ : মুস্কিল আসান, চিরন্তনী:
  • ১৯৫৪ : মা ও ছেলে, মন্ত্রশক্তি:
  • ১৯৫৫ : দেবত্র, প্রতীক্ষা, বীর হাম্বীর, কঙ্কাবতীর ঘাট, ব্রতচারিণী;
  • ১৯৫৬ হে মহামানব, চিরকুমার সভা, পরাধীন, গিরিশচন্দ্র, শ্যামলী, রাজপথ
  • ১৯৫৭: তাপসী, নীলাচলে মহাপ্রভু,
  • ১৯৭৪: শ্রাবণ সন্ধ্যা।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment