অ্যাঞ্জেলিনা জোলি একজন মার্কিন অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, মানবাধিকারকর্মী এবং বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত এক মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। ১৯৭৫ সালের ৪ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা ছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেতা জন ভয়েট এবং মাতা মার্শেলিন বার্ট্র্যান্ড।

অভিনয় জীবন
অ্যাঞ্জেলিনা জোলির চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৮২ সালে “লুকিন’ টু গেট আউট” ছবিতে, যেখানে তিনি তার পিতার সাথে অভিনয় করেন। তবে পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে তার প্রথম প্রধান চরিত্র ছিল ১৯৯৩ সালের “সাইবর্গ ২” ছবিতে। এরপর “হ্যাকারস” (১৯৯৫), “জিয়া” (১৯৯৮), এবং “গার্ল, ইন্টারাপ্টেড” (১৯৯৯) ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। “গার্ল, ইন্টারাপ্টেড” ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
২০০১ সালে ভিডিও গেম চরিত্র লারা ক্রফ্টকে কেন্দ্র করে নির্মিত “লারা ক্রফ্ট: টুম্ব রেইডার” ছবিতে অভিনয় করে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর “মি. এন্ড মিসেস. স্মিথ” (২০০৫), “ওয়ান্টেড” (২০০৮), “চেঞ্জলিং” (২০০৮), এবং “ম্যালেফিসেন্ট” (২০১৪) ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।
পরিচালনা ও প্রযোজনা
অভিনয়ের পাশাপাশি জোলি চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও সফলতা অর্জন করেছেন। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে “ইন দ্য ল্যান্ড অফ ব্লাড অ্যান্ড হানি” (২০১১), “আনব্রোকেন” (২০১৪), এবং “ফার্স্ট দে কিল্ড মাই ফাদার” (২০১৭)। ২০২৪ সালে তিনি “দ্য আউটসাইডারস” মিউজিক্যাল প্রযোজনা করেন, যা ১২টি টনি মনোনয়নসহ সেরা মিউজিক্যাল বিভাগে পুরস্কার লাভ করে ।
মানবাধিকার ও শরণার্থী সহায়তা
২০০১ সালে জোলি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে তিনি সংস্থার বিশেষ দূত হন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি ৬০টিরও বেশি মিশনে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে রয়েছে সিরিয়া, ইরাক, বাংলাদেশ, এবং ইউক্রেনের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ।
জোলি শিশু অধিকার, নারীর অধিকার, এবং যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি “প্রিভেন্টিং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ইনিশিয়েটিভ” (PSVI) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে ।
ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রথমে জনি লি মিলার, পরে বিলি বব থর্নটন, এবং সর্বশেষে ব্র্যাড পিটের সাথে তার বিবাহ হয়। ব্র্যাড পিটের সাথে তার ছয়টি সন্তান রয়েছে: ম্যাডক্স, প্যাক্স, জাহারা (দত্তক), এবং শিলোহ, নক্স, ভিভিয়েন (জৈবিক)। ২০২২ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় ।

পুরস্কার ও সম্মাননা
অভিনয় ও মানবাধিকার কর্মসূচিতে অবদানের জন্য জোলি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দুটি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার, এবং একটি একাডেমি পুরস্কার। ২০১৩ সালে তিনি জিন হার্সহোল্ট হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং ২০১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে অনারারি ডেম কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অফ সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ (DCMG) উপাধিতে ভূষিত করে ।

সাম্প্রতিক কাজ
২০২৫ সালে জোলি “কাউচার” নামক ফরাসি নাট্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা প্যারিস ফ্যাশন উইককে কেন্দ্র করে নির্মিত । এছাড়াও তিনি “উইদাউট ব্লাড” চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা ২০২৪ সালে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় ।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার বহুমুখী প্রতিভা, মানবিক সহানুভূতি, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তিনি কেবল একজন সফল অভিনেত্রীই নন, বরং একজন মানবাধিকারকর্মী, পরিচালক, এবং সমাজসেবী হিসেবে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।