আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্র

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- চলচ্চিত্রটি মৃণাল সেন পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র । এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালে ।

চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা শুটিঙের জন্য দল বেঁধে একটি গ্রামে আসে । চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু ছিল তেতাল্লিশের মন্বন্তর । তেতাল্লিশের মন্বন্তর হয়েছিল ১৯৪৩ সালে এবং এর ফলে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল । ছবির মাধ্যমে সেই সময়ের মানুষের চরম দুঃখজনক অবস্থাকে তুলে ধরাই ছিল তাদের লক্ষ্য ।

নানা অসুবিধা এবং উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে শুটিং আরম্ভ হয় । শুটিঙের অবসরে কলাকুশলীদের মধ্যে নানা আলোচনা মজা চলতে থাকে । গ্রামের মানুষরা অবাক এবং সন্দেহের মধ্যে দিয়ে তাদের কাজকর্ম দেখে । ছায়াছবিটি যত এগিয়ে চলে তত নতুন করে তৈরি করা অতীতের সাথে বর্তমান অবস্থা মুখোমুখি হয় ।

১৯৪৩ সালের সাথে ১৯৮০ সালের ঘটনার অদ্ভুত একটা সম্পর্ক তৈরি হতে দেখা যায় । এরই সাথে জড়িয়ে যায় একজন গ্রামের মহিলার ভাগ্য । যার দৃষ্টিভঙ্গি ছবিটিতে একটি আলাদা মাত্রা যোগ করে । তা হল ভবিষ্যৎ । এই অবস্থাটি ছিল আকালের সন্ধানীদের কাছে খুবই অনভিপ্রেত একটি অবস্থা ।

 

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা — ডি কে ফিল্মস।
  • কাহিনি—অমলেন্দু চক্রবর্তী।
  • চিত্রনাট্য ও পরিচালনা – মৃণাল সেন।
  • চিত্রগ্রহণ–কে কে মহাজন।
  • শিল্প নির্দেশনা – সুরেশচন্দ্র চন্দ।
  • সংগীত পরিচালনা— সলিল চৌধুরী।
  • সম্পাদনা — গঙ্গাধর নস্কর।

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, স্মিতা পাতিল, দীপঙ্কর দে, গীতা সেন, রাজেন তরফদার, দেবিকা মুখোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, রাধামোহন ভট্টাচার্য, প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায়, নীলকণ্ঠ সেনগুপ্ত, রাজা সেন, যীশু দাশগুপ্ত, গোপা সেনগুপ্ত, জোছন দস্তিদার।

 

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্রের কাহিনি—

একটি ফিল্ম ইউনিট বর্ধমানের একটি গ্রামে যায় ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের উপর ছবি করার জন্য, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবে মানুষের তৈরি করা ওই আকালে অবিভক্ত বাংলায় কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এই ছবির পরিচালক (ধৃতিমান), নায়ক (দীপঙ্কর), নায়িকা (স্মিতা) এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা গ্রামে কাজ করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের কখনও সহযোগিতা আবার কখনও অসহযোগিতার মধ্যে ছবি তৈরির কাজ চালিয়ে যায়।

গ্রামের এক মাতব্বর হরেন (রাজেন), গ্রামের মানুষদের পক্ষে এই ছবি তৈরির দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ছবিতে একজন বারবনিতার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য মহিলার প্রয়োজন, শহর থেকেই তার আসার কথা ছিল, ঘটনাক্রমে ঐ মহিলা না আসার কারণে গ্রাম থেকেই ঐ ভূমিকার জন্য একজন মহিলা জোগাড় করে দিতে পরিচালক হরেনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু গ্রামের কেউই ঐ ভূমিকায় অভিনয় করতে চায় নি এমনকী হরেনের মেয়েও নয়, এই নিয়ে বিরোধ ইত্যাদির কারণে “আকাল’ নিয়ে ছবি তৈরির চেষ্টা পরিত্যক্ত হয়।

সিনেমার মধ্যে সিনেমা এই ফর্ম ভারতীয় ছবিতে এর আগে দেখা না গেলেও ফেলিনির ৮১/২ এবং ক্রফোর ‘ডেজ ফর নাইট’ এই ধরনের ছবি হিসাবে বিখ্যাত। এই ছবির কিছু সংলাপে মৃণালবাবুর বামপন্থী বন্ধুদের কয়েকজন অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। ছবিটি তৈরি করতে গিয়ে মুশাল এবং তাঁর সহকর্মীরা জামাইবাবু (নির্বাক, ১৯৩১) ছবিটি উদ্ধার করেন। জামাইবাবু ছবিটি বর্তমানে বাংলা নির্বাক ছবির একমাত্র নিদর্শন রূপে পুনায় অবস্থিত জাতীয় চলচ্চিত্র সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত হয়েছে।

 

Google News আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

পুরস্কার

১৯৮০ সালে ছবিটি সেরা ছবির জাতীয় মর্যাদা পায়, পাশাপাশি মৃণাল সেন সেরা পরিচালক এবং সেরা চিত্রনাট্যকার হিসাবেও পুরস্কৃত হন। ছবির সম্পাদক গঙ্গাধর নম্বরও বছরের সেরা সম্পাদক হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ছবিটি ১৯৮১ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্য ভল্লুক (২য় সেরা ছবি) লাভ করে।

প্রকাশনা –

ছবির চিত্রনাট্য, ১৯৮২ সালে ‘বিভাব’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। চিত্রনাট্যটির সাথে মৃণাল সেনের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রবন্ধ (ছবি সম্পর্কিত) প্রকাশিত হয়েছিল।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment