উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্র

উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- চলচ্চিত্রটি ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা ড্রামা চলচ্চিত্র। এই ছবিটি পরিচালনা করেন অসিত সেন এবং প্রযোজনা করেন উত্তম কুমার। ছবিটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন (দ্বৈত চরিত্রে), বিকাশ রায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়।

দেবযানীকে জোর করে লম্পট রাখালের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়, যে তখন তাকে মদপান করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জনের জন্য বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। ট্রেনে যাবার সময় সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে, তবে একটি গাইনেওয়ালি বাড়ির মালকিন তাকে উদ্ধার করে, সে লখনউতে তার কোঠা নিয়ে আসে, যেখানে দেবযানী সুপর্ণা নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় এবং বাইজি হয়ে নতুন নাম নেয় পান্নাবাঈ।

ইতিমধ্যে রাখাল তাকে খুঁজে বের করে এবং তাকে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। ঘটনাচক্রে, তিনি তার প্রাক্তন প্রেমিক, মনীশ রায়  সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, সে এখন একজন বিখ্যাত আইনজীবী । দেবযানী তার মেয়ে, সুপর্ণার যত্ন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। মনীশ রাজি হন, আর সুপর্ণার অভিভাবক হন।

কয়েক বছর পেরোনোর পরে, প্রাপ্তবয়স্কা সুপর্ণা দেশে ফেরেন আইনজীবী হয়ে ।রাখাল যখন বুঝতে পারল যে সুপর্ণা তার মেয়ে, সে সুপর্ণাকে তার আসল পরিচয় ফাঁস করে দেবার হুমকি দিয়ে আবারও পান্নাভাই ওরফে দেবজানীকে ব্ল্যাকমেল করতে ফিরে আসে। দেবযানী তাকে তর্কের উত্তাপে গুলি করে এবং আদালতে মণীশ তার হয়ে মামলা লড়ে।

সুপর্ণা মণীশকে একজন চরিত্রহীন, পতিত মহিলার প্রতিরক্ষার দোষারোপ করে। তবে মণীশ যখন তাকে দেবজানীর আসল গল্পটি বলে এবং তার কাছে তার আসল পরিচয়টি প্রকাশ করে। সে আদালতে দেবজানীকে রক্ষার জন্য নিজেই দায়িত্ব নেয়, আর এই প্রক্রিয়ায় বিরোধী আইনজীবীর সাথে যুক্তিতে, সে শিকার করে এই মহিলাটি তার মা। শেষের দৃশ্যে, দেবজানি শান্তির আনন্দে তার মেয়ের কোলে মারা যায়।

 

উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা — উত্তমকুমার ফিল্মস প্রাঃ লিঃ।
  • কাহিনি—নীহাররঞ্জন গুপ্ত।
  • চিত্রনাট্য- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়।
  • পরিচালনা — অসিত সেন।
  • সংগীত পরিচালনা—রবীন চট্টোপাধ্যায়।
  • চিত্রগ্রহণ — অনিল গুপ্ত, জ্যোতি লাহা।
  • শিল্প নির্দেশনা — প্রীতিময় সেন, রামচন্দ্র সিন্ধে, সুজিত দাস।
  • শব্দগ্রহণ — নৃপেন পাল, সুজিত সরকার, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • সম্পাদনা—তরুণ দত্ত। গীতিকার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

সুচিত্রা সেন (দ্বৈত ভূমিকা), বিকাশ রায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়, কালীপদ জহর গঙ্গোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল, ভুবন চৌধুরী, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যাম লাহা, সুশীল রায়, রেণুকা রায়, ছায়া দেবী, রাজলক্ষ্মী দেবী, সীতা মুখোপাধ্যায়, রুবি মিত্র, বিভা কোটাল, কৃষ্ণকলি মণ্ডল। নেপথ্য সংগীত — সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ছায়া দেবী।

 

Google News উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্রের কাহিনি—

মনীশ (বিকাশ) ও দেবযানী (সুচিত্রা) পরস্পরকে ভালোবাসত। ঠিক ছিল মনীশ বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে ফিরে এলে তাদের বিয়ে হবে। হঠাৎই বাবার ঋণ শোধের জন্য পরিস্থিতির চাপে দেবযানীকে বিয়ে করতে হয় মদ্যপ রাখাল ভট্টাচার্যকে (কালীপদ)।

রাখালের সমস্ত অত্যাচার দেবযানী মুখ বুজে সহ্য করলেও রাখাল যখন অর্থের জন্য তাকে অন্য পুরুষের অঙ্কশায়িনী করার চেষ্টা করে, দেবযানী বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। মীনাবাই (ছায়া দেবী) তাকে উদ্ধার করে, এবং তাকে নাচে, গানে তালিম দিয়ে পান্নাবাই নামে পরিচিত করায়। ইতিমধ্যে দেবযানী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে এবং সেই কন্যা সুপর্ণা (সুচিত্রা) নামে মনীশের ভাগ্নি পরিচয়ে বড় হয়।

ইতিমধ্যে রাখাল পান্নাবাই এর আসল পরিচয় এবং মনীশের কাছে সুপর্ণার বড় হয়ে ওঠার কথা জানতে পারে। অর্থলোলুপ রাখাল পান্নাবাইকে সুপর্ণার কাছে তার আসল পরিচয় ফা করে দেবার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। শেষ পর্যন্ত উত্যক্ত পান্নাবাই একদিন রাগের মাথার রাখালকে হত্যা করে।

দেবযানী বা পান্নাবাই মেয়ে সুপর্ণাকে সমস্ত লজ্জার হাত থেকে আড়াল করার জন্যই রাখালকে টাকা দিত। সুপর্ণা তার মা ও বাবার পরিচয় জানতে পারে, এবং মায়ের। পক্ষে আদালতে উকিল হিসাবে উপস্থিত হয়। এই ছবির হিন্দী রূপান্তর মমতা নামে মুক্তি পেরেছিল।

 

google news logo উত্তর ফাল্গুনী চলচ্চিত্র

 

পুরস্কার—

বাংলা ভাষায় নির্মিত বছরের সেরা ছবি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক লাভ করে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment