এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্র

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্রটি সুনীল বন্দোপাধ্যায় পরিচালিত ১৯৬৭ সালের ভারতীয় জীবনীনির্ভর সঙ্গীতধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তনুজা। এটি পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত বাংলা ভাষার লোক কবি এন্টনী ফিরিঙ্গীর জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র।

হান্সমান এন্টনী একজন পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত যুবক।মায়ের মৃত্যুর পরও এন্টনীর বন্ধুরা এন্টনীকে নিয়ে বাঈজী শাকিলা বেগমের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু এন্টনী বিদেশি সাহেব বলে শাকিলা তাদের গান শুনাতে অস্বীকৃতি জানায়। সে শাকিলার জলসাঘরের পাশের বাগানে দাঁড়িয়ে তার গান শুনে।

একদিন জমিদার বাড়িতে সকলের অনুরোধে সে নিজেই শাকিলার কাছ থেকে শোনা একটি গান গায়। সকলেই তার গানের গলার প্রশংসা করে। শাকিলার এন্টনীকে ভালো লাগে। সে এন্টনীকে তার অতীত সম্পর্কে জানায়।

ফরাশডাঙ্গায় এন্টনী কবিগানের এক আসরে গিয়ে কবিগানের প্রতি আকৃষ্ট হয়।সে বিভিন্ন স্থানে কবিগানে অংশগ্রহণ করে। কয়েকজন কবিয়ালকে তার বিদ্যা ও গান দিয়ে কুপোকাত করে। কিন্তু ভোলা ময়রার কাছে সে পরাজিত হয় এবং তাকে তার কণ্ঠহার পড়িয়ে দিয়ে তাকে সম্মান জানায়। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখে তার ঘরে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ঘরে ঢুকে সে নিরুপমাকে উদ্ধার করে, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।

 

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা — বি. এন. রায় প্রোডাকসন্স।
  • কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা —সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • চিত্রগ্রহণ — বিজয় ঘোষ।
  • শিল্প নির্দেশনা – সত্যেন রায়চৌধুরী।
  • সংগীত পরিচালনা — অনিল বাগচী।
  • গীত রচনা — প্রণব রায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
  • শব্দগ্রহণ – অতুল চট্টোপাধ্যায়, বাণী দত্ত, অনিল দাশগুপ্ত, সোমেন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • সম্পাদনা— রাসবিহারী সিংহ।

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

উত্তমকুমার, তনুজা, ললিতা চট্টোপাধ্যায়, অসিতবরণ, তরুণকুমার, ছায়া দেবী, জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, রুমা গুহঠাকুরতা, মণি শ্রীমানী, হরিধন মুখোপাধ্যায়, কমল মজুমদার, সোমা চৌধুরী, জীবেন বসু।

 

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্রে যারা কণ্ঠ দিয়েছেন —

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মালবিকা কানন, রুমা গুহঠাকুরতা, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীর বাগচী, অলোক বাগচী।

এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্রের কাহিনি—

হান্স এন্টনীর (উত্তম) পিতা পর্তুগিজ হলেও মা (ছায়া) ছিলেন এ দেশের মেয়ে। নুনের ব্যবসায় এন্টনীর পরিবার ধনী হয়ে ওঠে এবং ফরাসডাঙায় বসবাস করতে শুরু করে। এন্টনীর বড় ভাই কেলী (হারাধন) তার মায়ের পরিচয় নিয়ে লজ্জিত।

মায়ের অকস্মাৎ মৃত্যুতে এন্টনী যখন মর্মাহত তখন কেলী দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের সমাজের মেয়ে মারিনা (ললিতা) এন্টনীকে ভালোবাসলেও এন্টনী তার ডাকে সাড়া দিতে পারে নি। এন্টনীর সঙ্গে পরিচয় হয় সাকিলার (তনুজা)। তারা পরস্পরকে ভালোবেসে নতুন সংসার তৈরি করে। সাকিলা বাইজি জীবন শুরুর আগে ছিল ব্রাহ্মণ কন্যা নিরুপমা। তার সাথে বিয়ে হয় ঘোষালের। ঘোষালের মৃত্যুর পর ঘটনাচক্রে নিরুপমা সাবিলা পরিচয়ে বাইজি হতে বাধ্য হয়।

 

Google News এন্টনী ফিরিঙ্গী চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

এন্টনীর কবিয়াল হওয়ার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে নিরুপমা নিজের গয়না বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন করে। ক্রমশ এন্টনী কবিয়াল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রার (অসিতবরণ) সাথে লড়াইয়ে জয়ী হয়ে এন্টনী বাড়ি ফেরে। ইতিমধ্যে এন্টনীর বাড়িতে দুর্গাপূজা বানচাল করার জন্য জমিদারের আজ্ঞাবহ কিছু লোক তার বাড়িতে আগুন দেয় এবং আগুনে নিরুপমার মৃত্যু হয়।

ছবিটি তৎকালীন সময়ে বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিল। ছবিটির সংগীতও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ছবির অভিনেতা হিসাবে উত্তমকুমার বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় সম্মান লাভ করেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment