কমলা ঝরিয়া বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের ভারতের সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীদের অন্যতম । কমলা ঝরিয়ার জন্ম বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অন্তর্ভুক্ত অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদ জেলার ঝরিয়া শহরে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই ফেব্রুয়ারি। আসল নাম কমলা সিংহ। ছোটবেলা থেকে গানের আকর্ষণে প্রথাগত শিক্ষায় ছেদ ঘটে। সংগীত শিক্ষা শুরু করেন শ্রীনাথ দাসের কাছে, পরবর্তী সময়ে কলকাতায় এসে নাট্য ও চলচ্চিত্র শিল্পী এবং পরিচালক তুলসী লাহিড়ীর কাছেও সংগীত এবং অভিনয়ের শিক্ষা গ্রহণ করেন।
কমলা ঝরিয়া
দশ বৎসর বয়সে তার গানের গলা শুনে ঝরিয়ার মহারাজ গান শেখার ব্যবস্থা করে দেন। প্রথমে গান শেখেন সভাগায়ক শ্রীনাথ দাস নন্দীর কাছে। তারপর মার্গ সঙ্গীতে তালিম নেন ওস্তাদ জমিরুদ্দিনের কাছে। তবে তৎকালীন বাংলার প্রখ্যাত নাট্যকার ও সুরকার তুলসী লাহিড়ীর সংস্পর্শে এসে তার প্রতিভার পূর্ণবিকাশ ঘটে ও একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে পরিচিতি পান।
কলকাতায় গান রেকর্ড করার সময় তুলসী লাহিড়ী তার পদবী জানতেন না বলে তার নামের সঙ্গে জন্মস্থান ‘ঝরিয়া’ লাগিয়ে দেন, সেই থেকে তার আসল পদবী ‘সিংহ’ এর কাছে ‘ঝরিয়া’স্থান পায়। চল্লিশের দশকে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠেন।
প্রথম চলচ্চিত্রাভিনয় ইষ্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রীজ প্রযোজিত এবং প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত যমুনা পুলিনে (১৯৩৩) ছবিতে বিশাখার ভূমিকায়। সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে ১৮টি ছবিতে (স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি সহ) অভিনয়ের পাশাপাশি দশটি ছবিতে নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসাবেও কাজ করেছেন।
যে সব পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তুলসী লাহিড়ী, সতু সেন, সুশীল মজুমদার, চারু রায়, দেবকী বসু, প্রফুল্ল রায় প্রভৃতি। তাঁর গাওয়া বহু গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে, কীর্তন গানে তাঁর পারদর্শিতা ছিল। বাংলা ছাড়াও হিন্দী, উর্দু ভাষাতেও রেকর্ড করেছেন। দীর্ঘদিন আকাশবাণীর সংগীতশিল্পী হিসাবেও কাজ করেছেন।

চলচ্চিত্রপঞ্জি —
- ১৯৩৩ যমুনা পুলিনে বিশ্বমঙ্গল,
- ১৯৩৪ কেরানীর জীবন;
- ১৯৩৫ * পাতালপুরী, *মন্ত্রশক্তি, দিকদারী, স্বয়ম্বরা,
- ১৯৩৬ *তরুবালা, একটি কথা, “বাঙ্গালী, *সোনার সংসার,
- ১৯৩৮ অভিজ্ঞান, শখের শ্রমিক, রেশমী রুমাল,
- ১৯৩৯ দেবযানী
- ১৯৪০ ফিভার মিকশ্চার, ঠিকাদার, রাজকুমারের নির্বাসন,
- ১৯৪১ বিজয়িনী।
চিহ্নিত ছবিগুলিতে অভিনয়ের সাথে গানও গেয়েছিলেন।
আরও দেখুনঃ