কলকাতা ৭১ চলচ্চিত্রটি কলকাতা ৭১ মৃণাল সেন পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র । এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রতে বিখ্যাত অভিনেতা উত্পল দত্ত মাধবী মুখার্জি প্রমুখ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি চারটি আলাদা আলাদা গল্পের সমষ্টি। সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল ও মৃণাল সেনের চারটি গল্পের উপর ভিত্তি করে ছবিটি নির্মান করা হয়।
কলকাতা ৭১ চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা — ডি এম. পিকচার্স।
- কাহিনি—মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ কুমার সান্যাল, সমরেশ বসু, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মৃণাল সেন।
- চিত্রনাট্য ও পরিচালনা — মৃণাল সেন।
- চিত্রগ্রহণ — কে. কে. মহাজন।
- শিল্প নির্দেশনা—বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
- শব্দগ্রহণ — নৃপেন পাল, শ্যামসুন্দর ঘোষ, হিমাদ্রী ভট্টাচার্য, সুব্রত মিত্র।
- সম্পাদনা— গঙ্গাধর নস্কর।
কাহিনি—
একটি কুড়ি বছরের যুবক হাজার বছরের দারিদ্রের, বঞ্চনার, শোষণের ইতিহাস পরিক্রমা করে, ১৯৭১ সালের কলকাতার ইতিহাসে পরিক্রমা শেষ হয়। মোট পাঁচটি ভিন্ন কাহিনিকে এই যুবকের চোখ দিয়ে দেখান পরিচালক মৃণাল সেন।
বিচারালয় —
বিচারালয় চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
উৎপল দত্ত, রঞ্জিত মল্লিক, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলেন গঙ্গোপাধ্যায়, বাসু চট্টোপাধ্যায়, গোপাল দুতিয়া, অরুণ কাউল, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, মৃত্যুঞ্জয় সরকার, বাবা মজগাঁওকার।
বিচারালয় চলচ্চিত্রের কাহিনি—
১৯৭১ সালে কলকাতার একটি কাল্পনিক বিচারালয়ে একটি যুবককে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে, কয়েকটি প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্নেই বিচার কেন্দ্রীভূত হয়েছে যে যুবকটির রাগ করা সঙ্গত কি না। ইন্টারভিউতে বিদেশি পোষাক পরে না যাওয়ার কারণে তার চাকরি হয় নি, রাগে সে লন্ডীর কাচ ভেঙে একটি মূর্তিকে নগ্ন করে দেয়।

আত্মহত্যার অধিকার –
আত্মহত্যার অধিকার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধনা রায়চৌধুরী, স্নিগ্ধা মজুমদার, সুরজিৎ নান, অভিজিৎ নাথ।
আত্মহত্যার অধিকার চলচ্চিত্রের কাহিনি—
১৯৩৩ সালের একটি বর্ষণমুখর রাতের কলকাতা, একটি পরিবার, বস্তির ঘরে প্রচণ্ড বৃষ্টির রাতের মুখোমুখি, ঘরের মধ্যে চারদিক থেকে জল পড়ছে, কোনো ভাবেই নিজেদের রক্ষা করতে না পেরে তারা একটি পাকা বাড়ির বারান্দায় গৃহহীন মানুষদের সাথে আশ্রয় নেয়।
অঙ্গার —
অঙ্গার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
মাধবী চক্রবর্তী, বিনতা রায়, অনুভা ঘোষ, শুচিতা রায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবতোষ ঘোষ, বাপী ভট্টাচার্য।
অঙ্গার চলচ্চিত্রের কাহিনি—
১৯৪৩ সালের কলকাতায় একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার মাস্তরের মুখোমুখি। এই মন্বন্তরে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, বাধ্য হয়ে শুধু মাত্র খাবার জোগাড় করার জন্য গণিকাবৃত্তি গ্রহণ করতে হয় অনেক নারীকে।
স্মাগলার—
স্মাগলার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
গীতা সেন, সুরজিৎ নন্দী, গোপা ঘোষ, সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্কর দাশগুপ্ত, অটল দে বর্মণ, পাঁচু মণ্ডল, সুভাষ দত্ত, রসরাজ চক্রবর্তী, শম্ভু ভট্টাচার্য, নিমাই ঘোষ, মানিক রায় চৌধুরী, ক্ষৌণীশ বক্সী, হরিনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, বৈদ্যনাথ কর্মকার, গঙ্গাধর নন্তর, বিশ্বকল্যাণ দাস।
স্মাগলার চলচ্চিত্রের কাহিনি —
১৯৫৩ সালের কলকাতায় সদ্য কৈশোর থেকে যৌবনের দিকে যাত্রা করা কিশোরদের কয়েক জন সমাজবিরোধী কাজের সাথে যুক্ত হয়, তারা খিদে ছাড়া আর কিছুকেই ভয় পায় না, চালের চোরাকারবারিদের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে তারা ক্রমশ অসামাজিক জীবনে প্রবেশ করে।
প্রতিদিন প্রতিরাত –
প্রতিদিন প্রতিরাত চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না আঢ্য, সঞ্জীব ঘোষ, সুজয় ঘোষ, কিরণময় লাহিড়ী, ওয়াই. বি. গুপ্ত, শ্যামলেন্দু পাল, কে ভূষণ, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়, নন্দিনী দাশগুপ্ত, সুশীলা মিশ্র, বীণা দীক্ষিৎ, জুলি বন্দ্যোপাধ্যায়, রাণীকুণ্ডলা রিখ ।
প্রতিদিন প্রতিরাত চলচ্চিত্রের কাহিনি —
১৯৭১ সালের কলকাতার উচ্চবিত্ত, উচ্চ প্রতিষ্ঠিত কিছু পুরুষ ও মহিলা একটি আসরে একত্রিত। তারা বিপ্লবী কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ক্রমশ নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও বোকামিকে উন্মোচিত করছে। সেই সময় একটি যুবকের কণ্ঠস্বর শোনা যায় যে হাজার বছর ধরে পরিক্রমা করছে এবং এই মাত্র তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
এই ছবি মৃণাল সেনের প্রতিবাদের ছবি, দশকের পর দশক ধরে মানুষের দারিদ্র, অনাহার, তাদের প্রতিবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা এই ছবিতে দেখতে পাই। ছবিটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, মেট্রোর মতো প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি। পায় এবং দীর্ঘদিন হাউসফুল বোর্ড দেখা গিয়েছিল।
প্রকাশনা –
ছবি মুক্তির পর কয়েকটি ফিল্ম সোসাইটির পত্রিকায় এই ছবির উপর বহু লেখা প্রকাশিত হয়। ছবি মুক্তির ২০ বছর পর একুশে সংসদ ১৯৯২ সালে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করে।
পুরস্কার
১৯৭২ সালে ২য় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক লাভ করে। কে. কে. মহাজন শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের সম্মান লাভ করেন।
আরও দেখুনঃ