কাজী নজরুল ইসলামঃ জন্ম বর্ধমান জেলার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। শৈশবে পিতার মৃত্যু হয়। মক্তবের পড়াশোনা অর্ধসমাপ্ত রেখে রুটি কারখানায় কাজ নিতে বাধ্য হন। পরবর্তী কালে স্কুলে ভর্তি হলেও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় সেনাবাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন।
কাজী নজরুল ইসলাম । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান
অল্প বয়স থেকেই কবিতা ও গান রচনা শুরু করেন। তাঁর লেখায় দেশপ্রেমের পাশাপাশি সাম্যবাদ, নারীমুক্তির কথার সাথে আন্তর্জাতিকতার বিষয়ও লক্ষ করা যায়। ১৯২০ সালে কমিউনিস্ট নেতা মুজফফর আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘নবযুগ’ পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার জনপ্রিয়তার পিছনে নজরুলের ভূমিকা স্মরণযোগ্য।
পরবর্তী সময়ে ১৯২২ সালে তার নিজের ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশের সাথে সাথে পত্রিকাটি তরুণ পাঠক এবং দেশপ্রেমিকদের সমাদর লাভ করে। এই ধূমকেতু পত্রিকাতেই নজরুল ‘ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী’ পেশ করেন। রাজদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত নজরুল অনশন শুরু করেন, ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসাবে গণ্য করতে বাধ্য হয়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। কৃষ্ণনগরে থাকাকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সাথেও যুক্ত ছিলেন।
কবিতা, গান, প্রবন্ধ রচনার সাথে সাথে তাঁর সুরারোপিত সংগীতও সাধারণকে মুগ্ধ করেছিল। দরাজ কন্ঠের অধিকারী নজরুল সংগীত শিল্পী হিসাবেও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যুক্ত হন। প্রথমে ম্যাডান থিয়েটার্সের সাথে যুক্ত হলেও পরবর্তী সময়ে পাইয়োনীয়ার ফিল্মস প্রযোজিত ধ্রুব (১৯৩৪) ছবিটি তিনি পরিচালনা করেন সত্যেন্দ্রনাথ দের সাথে যুগ্ম পরিচালক হিসাবে। এই ছবি পরিচালনার পাশাপাশি সংগীত পরিচালনা এবং নারদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত এবং দেবকী বসু পরিচালিত বিদ্যাপতি (১৯৩৮) এবং সাপুড়ে (১৯৩৯) ছবিদুটি তাঁর লেখা কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল। ধ্রুব ছাড়াও চারু রায় পরিচালিত গ্রহের ফের (১৯৩৭), নরেশচন্দ্র মিত্র পরিচালিত গোরা (১৯৩৮) এবং নব্যেন্দু সুন্দর পরিচালিত চৌরঙ্গী (১৯৪২) ছবিগুলিতে তিনি অংশ নেন সংগীত পরিচালক হিসাবে।
এখনও পর্যন্ত তাঁর লেখা গান ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ২৫টি ছবিতে। প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দেবকী বসু, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, সুধীর মুখোপাধ্যায়, অজিত লাহিড়ী, ইন্দর সেন প্রভৃতি চলচ্চিত্রকারেরা তাঁদের ছবিতে নজরুলের গান ব্যবহার করেছেন।
১৯৪২ সালে পক্ষাঘাতে নজরুলের বোধশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৭২ সালে নবনির্মিত বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে যায়, জাতীয় কবির সম্মান দেয় এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশেই তাঁর মৃত্যু হয়।

চলচ্চিত্রপঞ্জি —
- ১৯৩৪ ধ্রুব
- ১৯৩৫ পাতালপুরী
- ১৯৩৭ গ্রহের ফের
- ১৯৩৮ গোরা, বিদ্যাপতি,
- ১৯৩৯ সাপুড়ে:
- ১৯৪১ নন্দিনী
- ১৯৪২ চৌরঙ্গী,
- ১৯৪৩ দিকশূল, শহর থেকে দূরে;
- ১৯৪৫ অভিনয় নয়।
- ১৯৪৯ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন:
- ১৯৫৮ শ্রীশ্রী তারকেশ্বর,
- ১৯৬২ দাদাঠাকুর
- ১৯৬৫ সুরের আগুন,
- ১৯৭০ দেশবন্ধু
- ১৯৭২ বিরাজ বৌ, পদিপিসীর বর্মি বাক্স, সম্রাট,
- ১৯৭৬ অসময়, অর্জুন,
- ১৯৭৮ বারবধূ: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন
- ১৯৭৯ নব দিগন্ত;
- ১৯৮০ দর্পচূর্ণ,
- ১৯৮১ কপালকুণ্ডলা
- ১৯৮২ মাটির স্বর্গ,
- ১৯৯২ ভালোবাসা ও অন্ধকার;
- ১৯৯৪ আব্বাজান, গজমুক্তা
- ১৯৯৮ জীবনতৃষ্ণা।
আরও দেখুনঃ