কানন দেবী

কানন দেবীর  জন্ম কলকাতায়, পিতা রতন চন্দ্র দাস। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও মাত্র ১০ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে প্রথম অবতরণ ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত এবং জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত জয়দেব (নির্বাক, ১৯২৬) ছবিতে রাধার ভূমিকায়। পরবর্তী কালে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ম্যাডান থিয়েটার্সের সাথে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় করেছেন ঋষির প্রেম (১৯৩১), জোর বরাত (১৯৩১), বিষ্ণুমায়া (১৯৩২) ইত্যাদি ছবিতে।

 

কানন দেবী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

কানন দেবী

১৯৩২ সালেই রাধা ফিল্মসের সাথে যুক্ত হন। রাধা ফিল্মসের হয়ে প্রথম চিত্রাভিনয় প্রফুল্ল ঘোষ পরিচালিত শ্রীগৌরাঙ্গ ছবিতে বিষ্ণুপ্রিয়ার ভূমিকায়। পরে প্রফুল্ল ঘোষ পরিচালিত মা (১৯৩৪) ছবিতে ব্রহ্মরাণীর ভূমিকায় এবং সতীশ দাশগুপ্ত পরিচালিত বাসবদত্তা (১৯৩৫) ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করেন।

১৯৩৫ সালে রাধা ফিল্মস প্রযোজিত মানময়ী গার্লস স্কুল ছবিতে নায়িকা নীহারিকার ভূমিকায় তাঁর অভিনয় চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত কানন। দেবী রাধা ফিল্মসের সাথে যুক্ত ছিলেন। কৃষ্ণ সুদামা (১৯৩৬) ছবিতে রুক্মিণী, কণ্ঠহার ছবিতে নায়িকা, বিষবৃক্ষ (১৯৩৬) ছবিতে কুন্দনলিনী, এবং কণ্ঠহারের হিন্দী ভার্সান খুনী কৌন (১৯৩৬) ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন।

 

Google News কানন দেবী
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

১৯৩৭ সালে নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত দেবকী বসু পরিচালিত বিদ্যাপতি ছবিতে এবং প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত মুক্তি’ ছবিতে অভিনয় করেন। বিদ্যাপত্তিতে ‘অনুরাধা’ এবং মুক্তিতে ‘চিত্রা’র ভূমিকায় তাঁর অভিনয় তাকে যশের শিখরে নিয়ে যায় এবং ছবিগুলির হিন্দী ভার্মানের সুবাদে সর্বভারতীয় পরিচয় (স্টারের মর্যাদা) লাভ করেন।

নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে তৈরি সাথী (১৯৩৮ হিন্দী টি সিঙ্গার), সাপুড়ে (১৯৩৯, হিন্দী সপেরা), পরাজয় (১৯৩৯, হিন্দী জওয়ানী কী রাত), পরিচয় (১৯৪০, হিন্দী লগন) এবং অভিনেত্রী (১৯৪০, হিন্দী হারজিত) দর্শক সমাদর লাভ করে। সাথীতে ‘মঞ্জুর পরাজয়ে ‘অনীতা’, অভিনেত্রীতে ‘সুরমা’ এবং পরিচয়ে ‘সতী’ ইত্যাদি চরিত্রগুলি দর্শকদের সাথে সাথে সমালোচকদেরও প্রশংসা অর্জন করেছিল। ১৯৪২ সালে এম.পি. প্রোডাকসনের ব্যানারে তৈরি শেষ উত্তর (হিন্দী জবাব) ছবিতে নায়িকা মীনার ভূমিকায় অভিনয় করে বি.এফ.জে.এ. বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেন। পরবর্তী কালে সুশীল মজুমদার পরিচালিত যোগাযোগ (১৯৪৩) ছবিতে প্রতিভা এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত বিদেশিনী (১৯৪৪) ছবিতে মমতার ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা পান।

১৯৪৫-৪৮ পর্যন্ত ডিলাক্স, পায়োনীয়ার, গীতাঞ্জলি ইত্যাদি প্রযোজনা সংস্থার হয়ে পথ বেঁধে দিল (১৯৪৫, হিন্দী রাজলক্ষ্মী), এ্যারাবিয়ান নাইটস (১৯৪৬), চন্দ্রশেখর (১৯৪৭), ফয়সালা (হিন্দী, ১৯৪৭), অনির্বাণ (১৯৪৮), বাঁকা লেখা (১৯৪৮), দর্পচূর্ণ (১৯৪৮) ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন।

 

কানন দেবী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

১৯৪৯ সালে কানন দেবী নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা শ্রীমতী পিকচার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থা এগারোটি ছবি প্রযোজনা করেছিল, যার বেশ কয়েকটিতে তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। কানন দেবী অভিনীত শেষ ছবি ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত ও অন্নদাদি (১৯৫৯)। এই ছবিতে তিনি অন্নদার ভূমিকায় অভিনয় করেন। সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ৩৫টি ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ১৬টি ছবিতে প্লে-ব্যাক করেন।

চলচ্চিত্র জীবনের প্রথমে তাঁর কোনো প্রথাগত সংগীত শিক্ষা না থাকলেও পরবর্তী কালে উস্তাদ আল্লারাখা, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, অনাদি দস্তিদার, রাইচাঁদ বড়াল প্রভৃতির কাছে সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত সহ বহু গানই অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এইচ.এম.ভি. ১৯৭৭ সালে তাকে প্রথম গোল্ড ডিস্ক দিয়ে সম্মান জানায়। ১৯৬৮ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৭৬ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯১ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি.লিট উপাধি প্রদান করে।

প্রথমে অশোক মিত্রের সাথে এবং পরবর্তী কালে হরিদাস ভট্টাচার্যের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। কাননবালা থেকে শ্রীমতী কানন এবং শেষ পর্যন্ত কানন দেবীতে উত্তরণ তাঁর অসাধারণ নিষ্ঠা ও জেদের ফলেই সম্ভব হয়েছিল।

 

google news logo কানন দেবী

 

প্রকাশনা –

কানন দেবীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সবারে আমি নমি’ এম.সি. সরকার থেকে ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়।

চলচ্চিত্রপঞ্জি

  • ১৯৩১ ঋষির প্রেম, প্রহ্লাদ, জোর বরাত;
  • ১৯৩২ বিষ্ণুমায়া:
  • ১৯৩৩ শ্রীগৌরাঙ্গ,
  • ১৯৩৪ মা;
  • ১৯৩৫ বাসবদত্তা, মানময়ী গার্লস স্কুল, কণ্ঠহার,
  • ১৯৩৬ কৃষ্ণ সুদামা বিষবৃক্ষ,
  • ১৯৩৭ মুক্তি:
  • ১৯৩৮ বিদ্যাপতি, সাথী,
  • ১৯৩৯ সাপুড়ে:
  • ১৯৪০ পরাজয়, অভিনেত্রী;
  • ১৯৪১ পরিচয়,
  • ১৯৪২ শেষ উত্তর
  • ১৯৪৩ যোগাযোগ,
  • ১৯৪৪ বিদেশিনী:
  • ১৯৪৫ – পথ বেঁধে দিল।
  • ১৯৪৬ তুমি আর আমি।
  • ১৯৪৭ চন্দ্রশেখর
  • ১৯৪৮ অনির্বাণ, বাঁকালেখা,
  • ১৯৪৯ অনন্যা, অনুরাধা,
  • ১৯৫০ মেঝদিসি।
  • ১৯৫২ পর্পচূর্ণ,
  • ১৯৫৪ : নব বিধান।
  • ১৯৫৫ দেবর
  • ১৯৫৬ আশা:
  • ১৯৫৯ ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত ও অন্নদানি।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment