গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র

গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র বিশ্ববিশ্রুত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় কর্তৃক ছোটদের জন্য নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত একই নামের একটি রূপকথা অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ-পত্নী বিজয়া রায়ের স্মৃতিচারণা ‘আমাদের কথা’ থেকে জানা যায়, শিশুপুত্র সন্দীপ রায়ের অনুরোধে তিনি এই ছবিটি নির্মাণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গল্পকার উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন সত্যজিতেরই পিতামহ। পরিচালকের বহু অন্যান্য ছবির মতো এখানেও তিনি স্বয়ং চিত্রনাট্য রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ছবির সবকটি গান রচনা ও সুরারোপ তারই করা।

গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র

গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

  •  মূল কাহিনি—উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
  • প্রযোজনা –পূর্ণিমা পিকচার্স।
  • চিত্রনাট্য, সাজসজ্জা, গীত রচনা, আবহ সংগীত ও পরিচালনা – সত্যজিৎ রায়।
  • চিত্রগ্রহণ—সৌমেন্দু রায়।
  • শিল্প নির্দেশনা——বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
  • সম্পাদনা— দুলাল দত্ত।
  • শব্দগ্রহণ — নৃপেন পাল, সুজিত সরকার, অতুল চট্টোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • কন্ঠ সংগীত—অনুপকুমার ঘোষাল, জয়কৃষ্ণ সান্যাল।

 

অভিনয়:

তপেন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, সন্তোষ দত্ত, জহর রায়, হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ছোট), প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শান্তি চট্টোপাধ্যায়, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়, গোবিন্দ চক্রবর্তী, হরিধন মুখোপাধ্যায়, রতন বন্দ্যোপাধ্যায়, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজকুমার লাহিড়ী, কামু মুখোপাধ্যায়, অশোক মিত্র, রমেন ভাদুড়ী, খগেন পাঠক, অবনী মুখোপাধ্যায়, তরুণ মিত্র, জয়কৃষ্ণ সান্যাল।

 

গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

কাহিনি:

আমলকী গ্রামের গুপীনাথ গাইন (তপেন) গান গাইতে ভালোবাসে, যদিও তার সুরজ্ঞান নেই। গ্রামের কিছু কুচক্রীর পরামর্শে রাজা মশাইকে (দুর্গাদাস) গান শোনাতে গিয়ে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। জঙ্গলে তার সঙ্গে দেখা হয় বাঘার (রবি), যে কিনা ঢোল বাজাতে ভালোবাসে।

রাত্রে মানসিক শঙ্কা ও ভয় দূর করার জন্য তারা গান বাজনা শুরু করে। তাদের গান বাজনা শুনে ভূতের রাজা (প্রসাদ) তাদের তিনটি বর দান করেন, বরগুলি হল (১) তাদের খাওয়া পরার কোনো অভাব থাকবে না, (২) তারা যেখানে ইচ্ছা হবে সেখানেই যেতে পারবে এবং (৩) তাদের গান বাজনা শুনে সকলেই খুশি হবে। এই বরগুলির জোরে তারা শুণ্ডির রাজাকে (সন্তোষ) খুশি করে সভা গায়কের মর্যাদা লাভ করে।

শুণ্ডির প্রতিবেশী রাজ্য হাল্লায় একজন রাজা (সন্তোষ) থাকলেও রাজ্যের সবকিছু পরিচালনা করে কুচক্রী মন্ত্রী (জহর)। মন্ত্রী যাদুকর বরফির (হারীন্দ্রনাথ) সাহায্যে রাজাকে বশীভূত করে নিজেই রাজ্য পরিচালনা করে। মন্ত্রীর প্ররোচনায় হান্নার রাজা শুণ্ডির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুণ্ডির রাজা শান্তিপ্রিয় মানুষ।

 

গুপী গাইন ও বাঘা বাইন চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তিনি যুদ্ধ, অশান্তি ইত্যাদি পছন্দ করেন না। গুপী এবং বাঘা রাজার অনুমতি নিয়ে হাল্লায় আসে এবং খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে রাজা নয়। এখানে মন্ত্রীই আসল কুচক্রী। প্রথমে একটু বেকায়দায় পড়লেও শেষ পর্যন্ত তারা ভূতের রাজার বরের জোরে হান্নার রাজাকে অপহরণ করে শুণ্ডিতে নিয়ে যায়। শুণ্ডি ও হামার রাজারা আসলে দুই ভাই, অনেক দিন পর তাদের দেখা হয়। দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে মণিমালা ও মুক্তামালার সাথে গুণী ও বাবার বিয়ের রঙিন প্রতিশ্রুতিতে ছবি শেষ হয়।

চিত্রনাট্য রচনা করার সময় সত্যজিৎ উপেন্দ্রকিশোরের মূল কাহিনিতে অনেক সংযোজন, প্রয়োজনে বিযোজন করলেও মূল কাহিনিসূত্র একই রেখেছেন। ছবিটি মুক্তির পর কেউ এটিকে ছোটদের ছবি, কেউ সংগীতমুখর ছবি, কেউ ফ্যান্টাসি, আবার কেউ যুদ্ধবিরোধী ছবি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সামগ্রিক ভাবে ছবিটি ছোটদের জন্য সংগীতমূলক ফ্যান্টাসি হিসাবেও বর্ণনা করা যায়। ছবিটি অসাধারণ বক্স অফিস সাফল্য লাভ করেছিল।

পরিচালকের জাতীয় সম্মান, সিলভার ক্রস, অ্যাডেলাইট চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬৯, সেরা পুরস্কার ১৯৬৮ সালে বছরের সেরা ছবি হিসাবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক ছাড়াও সেরা পরিচালক, অকল্যান্ড চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬৯, মেরিট পুরস্কার, টোকিও চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৭০ সেরা ছবি, মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৭০।

 

প্রকাশনা

ছবির চিত্রনাটা ১৯৮৮ সালে এক্ষণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চিত্রনাট্যের সাথে এই ছবিটা নিয়ে সত্যজিতের একটি ছোট লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।

 

google news logo

 

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment