গৃহযুদ্ধ চলচ্চিত্র ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রঙিন ছবি। ছবির ১০ রীল, ৩৫ মিমি. ৯৬ মিনিট। মুক্তির তারিখ ৩০. ০৩. ১৯৮৪। এক বেসরকারি শিল্পসংস্থার মালিকদের আর্থিক তছরূপের খবর জানতে পেরে সেই সংস্থার শ্রমিককল্যাণের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তার রিপোর্ট সরাসরি সরকারকে পাঠিয়ে দেন। মালিকপক্ষ এই বিষয়টা ভালো চোখে দেখেন না।
ভদ্রলোক চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চান। দু-একদিনের মধ্যেই তিনি দুর্ঘটনায় মারা যান। এক বাংলা কাগজের সাংবাদিক সন্দীপন রায় (গৌতম ঘোষ) তার সম্পাদকের (মনোজ মিত্র) নির্দেশে অনুসন্ধান শুরু করে।
ওদিকে এই দুর্ঘটনার আসল কারণ ওই সংস্থার কর্মচারী ইউনিয়নের নতুন নেতা প্রবীর (প্রবীর গুহ) ও তার সহকর্মী বিজন (অঞ্জন দত্ত) জানতে পারে। কিন্তু এবার প্রবীর খুন হয় এবং বিজন পালিয়ে যায়।
প্রবীরের বোন নিরুপমা (মমতাশংকর) বিজনকে ভালোবাসত। সে দিশাহারা হয়ে পড়ে। সংসারের প্রয়োজনে সে ওই শিল্পসংস্থায় কাজ নিতে বাধ্য হয়।
এই জোড়া খুনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সন্দীপন। গোলকিপার শেতল ঘোষের (সুনীল মুখোপাধ্যায়) ইন্টারভিউ নেয় সে। নিরুপমার সহযোগিতায় সে খুনিদের শনাক্তও করে ফেলে।
এদিকে বিজন ফিরে আসে। সে তখন প্রতিষ্ঠিত। সে নিরুপমাকে বিয়ে করতে চায়।
হঠাৎ আবার এক পথ-দুর্ঘটনায় সন্দীপনের মৃত্যু হয়। নিরুপমা বুঝতে পারে এটি একটি পরিকল্পিত খুন। সে বিয়ে পিছিয়ে দিতে বলে। বিজন তাতে রাজি না হওয়ায় নিরুপমা তাদের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গিয়ে একাই রাজপথে নামে।
গৃহযুদ্ধ চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা – পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
- কাহিনি— দিব্যেন্দু পালিত।
- সংগীত, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা—বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
- চিত্রগ্রহণ — সঙ্গিত বসু।
- শিল্প নির্দেশনা – সুরেশচন্দ্র চন্দ।
- সম্পাদনা—উজ্জ্বল নন্দী।
অভিনয় :
অঞ্জন দত্ত, মমতাশঙ্কর, গৌতম ঘোষ, সুব্রত সেনশর্মা, মনোজ মিত্র, সুনীল মুখোপাধ্যায়, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, মণিদীপা রায়, প্রবীর গুহ।
কাহিনি:
ব্যারাকপুরের একটি শিল্প সংস্থায় কর্মরত শ্রমিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত এক আধিকারিক তাঁর শিল্প সংস্থায় উচ্চপদস্থ কিছু কর্মীর অর্থনৈতিক অসাধুতার খবর পান, তিনি চাকরি ছেড়ে দিলেও ঐ অসাধু কর্মীরা ভাড়াটে খুনিদের সাহায্যে তাকে খুন করে। ওই সংস্থার বামপন্থী কর্মচারী আন্দোলনের নেতা প্রবীর এবং তার সহকর্মী বিজন (অঞ্জন) বিষয়টি জানতে পারে।
ভাড়াটে খুনিদের হাতে প্রবীর খুন হয় এবং বিজন কোনোক্রমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। প্রবীরের বোন নিরুপমা (মমতা) বিজনকে ভালোবাসত, বিজনের দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে সে দিশেহারা। আবার ভাড়াটে খুনিদের ক্রমাগত হুমকির ফলে তারা ব্যারাকপুর ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হয়।
অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নিরুপমা শেষ পর্যন্ত ঐ শিল্প সংস্থায় কাজ নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে সন্দীপন (গৌতম) নামে এক স্থানীয় কাগজের সাংবাদিক এই খুনগুলির বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করে, কিছুদিনের মধ্যেই নিরুপমার সহযোগিতায় সে এই ভাড়াটে খুনিদের দলটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
ঐ খুনিদের মধ্যে একজন হল শীতল (সুনীল), যে কিনা আবার স্থানীয় একটি ফুটবল দলের গোলরক্ষক। শীতল একটি চাকরি পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভাড়াটে খুনিদের দলে যোগ দেয়, কিন্তু চাকরি না পেয়ে সে আবার খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে। শীতল বর্তমানে তার অপরাধী অতীত থেকে অব্যাহতি পেতে চায়, কিন্তু সন্দ্বীপনের এই তদন্তমূলক প্রতিবেদনের ফলে তার অতীত জনসমক্ষে চলে আসে। সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ সন্দীপনকে তার তদন্তমূলক সাংবাদিকতা থেকে অব্যাহতি দেয়।
অন্যদিকে বিজন তার আত্মগোপন অবস্থা থেকে ফিরে আসে। সে বর্তমানে নাসিকে থাকে এবং জীবনে প্রতিষ্ঠিত। সে নিরুপমাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু অতীতের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এবং ঐ জীবনের জের টেনে চলতে সে রাজি নয়। অন্যদিকে নিরুপমা তার দাদার মৃত্যুকে ভুলতে রাজি না হলেও বিয়েতে রাজি হয়।
হঠাৎই একটি দুর্ঘটনায় সন্দীপনের মৃত্যু হয়। নিরুপমা বুঝতে পারে এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত খুন। নিরুপমা বিয়ে পিছিয়ে দিতে চায় কিন্তু বিজন তাতে রাজি নয়। নিরুপমা বুঝতে পারে তার লড়াইটা তাকে একাই লড়তে হবে, সে বিয়ে ভেঙে দেয়। ছবিটি ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায়।
পুরস্কার:
ছবিটি ১৯৮২ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়।
প্রকাশনা:
ছবির চিত্রনাটা ১৯৮৮ সালে বাণীশিল্প থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
আরও দেখুনঃ