গোরা চলচ্চিত্র ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোরা উপন্যাস অবলম্বনে এবং নরেশ মিত্রের পরিচালনায় চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
গোরা চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা- -দেবদত্ত ফিল্মস।
- কাহিনি ও গীতিকার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- পরিচালনা- নরেশ মিত্র।
- সংগীত পরিচালনা – কাজী নজরুল ইসলাম।
- চিত্রগ্রহণ — যশোবন্ত ওয়াশীকর।
- শব্দগ্রহণ—সত্যেন দাশগুপ্ত।
- শিল্প নির্দেশনা – ত্রিপুরা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- সম্পাদনা – ভোলানাথ আঢ্য।
অভিনয়:
জীবন গঙ্গোপাধ্যায়, রাণীবালা, প্রতিমা দাশগুপ্তা, মোহন ঘোষাল, রমলা দেবী, রাজলক্ষ্মী দেবী, দেববালা, নরেশ মিত্র, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, রবি রায়, রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায়, ললিত মিত্র, বিপিন গুপ্ত, মনোরমা দেবী, ইলা দাস, বিনয় মুখোপাধ্যায়, বেচু সিংহ, মঞ্জু দাস।
কাহিনি:
সিপাহী বিদ্রোহের প্রায় ২৫ বছর পরের কথা। বর্তমানে কৃষ্ণদয়াল (বিপিন) স্ত্রী আনন্দময়ী (রাজলক্ষ্মী) ও দুই পুত্র মহিম (রবি) ও গোরাকে (জীবন) নিয়ে কলকাতায় বাস করেন। মহিম বিবাহিত, গোরা পরিবারের সকলের থেকে আকৃতি ও প্রকৃতিতে অনেকটাই ভিন্ন। কিছুদিন সে বন্ধু বিনয়ের (মোহন) সাথে ব্রাহ্ম সমাজে যাতায়াত করলেও বর্তমানে হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবন নিয়ে মেতেছে। কৃষ্ণদয়াল আগে ধর্মকর্ম না মানলেও বর্তমানে গোঁড়া হিন্দু হয়ে সাধন ভজনে জীবন কাটালেও হিন্দুত্ব নিয়ে গোরার মাতামাতিতে যথেষ্টই বিরক্ত।
বিনয়ের সাথে ঘটনাক্রমে পরিচয় হয় পরেশবাবু (মনোরঞ্জন) ও তাঁর পালিতা কন্যা সুচরিতার (রাণীবালা)। পরেশবাবু ব্রাহ্ম, সংসারে সুচরিতা ও তার ভাই সতীশ ছাড়াও আছেন স্ত্রী বরদাসুন্দরী (মনোরমা) এবং তিন কন্যা ললিতা (প্রতিমা, লাবণ্য (রমলা) এবং লীলা (বীণা)। পরেশবাবুর পারিবারিক বন্ধু হারান (নরেশ) সুচরিতাকে বিয়ে করতে চান। সংসারে বরদাসুন্দরী ছাড়া আর কেউই হারানকে পছন্দ করে না।
বিনয় পরেশবাবুর বাড়ি যাতায়াত করে এবং বিনয় ও ললিতা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একদিন ঘটনাচক্রে পরেশবাবুর বাড়িতে বিনয় ও গোরার সাক্ষাৎ হয় এবং এই পরিবারে বিনয়ের মেলামেশা গোরার পছন্দ হয় না। গোরার দাদা মহিম তাঁর কিশোরী কন্যা শশিমুখীর (ইলা) সাথে বিনয়ের বিয়ের সম্বন্ধ করেন। আনন্দময়ী বিষয়টি পছন্দ না করলেও গোরার পীড়াপীড়িতে বিনয় মত দিতে বাধ্য হয়।
শেষ পর্যন্ত বিনয়ের ও গোরার মধ্যে ব্রাহ্ম ও হিন্দু ধর্মের বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ঘটে, বিনয়ও গোরার ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ব নিয়ে মাতামাতি পছন্দ করে না। অন্যদিকে গোরার গোঁড়া মতামত পছন্দ না হলেও সুচরিতা তার ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট এবং তার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়। দীর্ঘদিন বরদাসুন্দরীর কৃপায় পরেশবাবুর পরিবারে হারানের মতামত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হত, কিন্তু বিনয় ও গোরার আবির্ভাবে ক্রমশ তাঁর গুরুত্ব কমতে থাকে।
বাসুরী হারানবাবুর আপত্তি সত্ত্বেও পরেশবাবুর অনুমোদন ক্রমে আনন্দময়ীর ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আস্থা রেখেই বিনয়ের সাথে ললিতার বিয়ে হয়। কৃষ্ণদয়াল হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন, অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যাওয়ার আগেই আনন্দময়ী গোরাকে তার আসল পরিচয় জানিয়ে দেন। গোরা আসলে আইরিশ পিতামাতার সন্তান, সিপাহী বিদ্রোহে তার বাবা-মার মৃত্যু হয় এবং কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ী তাকে সন্তান-স্নেহে বড় করে তোলেন। শেষ পর্যন্ত গোরা পরেশবাবুর বাড়ি যায় এবং সুচরিতার সাথে তার ভবিষ্যৎ মিলনের ইঙ্গিতের মধ্যে ছবি শেষ হয়।
আরও দেখুনঃ