গৌতম ঘোষ

গৌতম ঘোষ এর জন্ম পূর্ববাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) ফরিদপুরে। পিতা ছিলেন ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক গৌতম ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। নাট্য পরিচালনার পাশাপাশি সাংবাদিকতার কাজও করেছেন। চিত্র সাংবাদিকতার সূত্র ধরেই প্রথম তথ্যচিত্র নিউ আর্থ (১৯৭৩) নির্মাণ করেন। বিখ্যাত তথ্যচিত্র নির্মাতা সুখদেবের প্রেরণায় তথ্যচিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন। ১৯৭৬ সালে হাংরি অটাম নামে তথ্যচিত্রটি পরিচালক হিসাবে তাকে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।

 

গৌতম ঘোষ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

গৌতম ঘোষ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

প্রথম কাহিনিচিত্র ১৯৪১ সালে তেলেঙ্গানা কৃষক আন্দোলনের পটভূমিকায় তৈরি মাভূমি (১৯৭১)। তেলুগু ভাষায় নির্মিত এই ছবি প্রাদেশিক ভাষায় নির্মিত শ্রেষ্ঠ ছবির মর্যাদা পায়। সমাজের প্রাস্তিক সীমায় বসবাস করা মানুষদের সমস্যা নিয়ে তৈরি করেন দখল (১৯৮১) এবং পার (১৯৮৪, হিন্দী)। দখল ছবিটি ১৯৮২ সালের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে স্বর্ণকমল লাভ করে, পার ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে নাসিরুদ্দিন শাহ এবং শাবানা আজমী যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় সম্মানে ভূষিত হন। দেশের বাইরে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিগুলি প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের সাথে সাথে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

কমলকুমার মজুমদারের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি অন্তলী যাত্রা (১৯৮৭) বাংলা/হিন্দী দ্বিভাষিক ছবি হিসাবে মুক্তি পায়। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নির্মিত এই ছবিও সমাজ সচেতন শিল্পী হিসাবে তাঁকে মর্যাদা এনে দেয়।

 

গৌতম ঘোষ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯২) ছবিও গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে তোলা। বৃহৎ প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবির চিত্রগ্রহণও দশর্কদের প্রশংসা লাভ করে। গৌতম ঘোষ পরিচালিত কাহিনিচিত্র লালন ফকিরের জীবনী অবলম্বনে তৈরি মনের মানুষ (২০১০), শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র হিসাবে পুরষ্কৃত হয়। ছবিটি বক্স অফিসেও সাফল্য লাভ করে। নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তাঁর ছবি । দেশের সাথে বিদেশের বহু চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে।

চলচ্চিত্র জীবনে এখন পর্যন্ত গৌতম ঘোষ ১২টি কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন যার মধ্যে তিনটি হিন্দী ও একটি তেলুগু চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্য লেখা, চিত্রগ্রহণ এবং কখনও কখনও সংগীত পরিচালনার কাজও করেছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) ছবিতে নির্ভীক সাংবাদিক সন্দীপনের ভূমিকায় তিনি ভালো অভিনয় করেন।

তাঁর তথ্যচিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হাংরি অটাম (১৯৭৬), ল্যান্ড অফ স্যান্ডডিউন্স (১৯৮৬), কিংবদন্তী সানাই বাদক বিসমিল্লা খাঁর উপর মিটিং এ মাইলস্টোন (১৯৮৯), মোহর (১৯৯১), বিয়ন্ড দ্য হিমালয়াজ (১৯৯৫), ইত্যাদি। কাহিনিচিত্র, তথ্যচিত্রের পাশাপাশি তিনি অনেকগুলি বিজ্ঞাপন চিত্রও নির্মাণ করেন। অপর্ণা সেন পরিচালিত মিস্টার এ্যন্ড মিসেস আয়ার ছবির চিত্রগ্রহণও করেছিলেন।

 

গৌতম ঘোষ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি—

মাভূমি (তেলুগু, ১৯৭৯), দখল (১৯৮১), পার (হিন্দী, ১৯৮৪), অন্তর্জলী যাত্রা (১৯৮৭), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯২), পতঙ্গ (হিন্দী, ১৯৯৩), গুড়িয়া (হিন্দী, ১৯৯৭), আবার অরণ্যে (২০০৩), যাত্রা (হিন্দী, ২০০৬), কালবেলা (২০০৯), মনের মানুষ (২০১০), শূন্য অঙ্ক (২০১২)।

তথ্যচিত্র—

নিউ আর্থ (১৯৭৩), হাংরি অটাম (১৯৭৬), চেনস অফ বনডেজ (১৯৭৬), পরম্পরা (১৯৮৪), ল্যান্ড অফ স্যান্ডডিউন্স (১৯৮৬), এ ট্রিবিউট টু ওড়িসি (১৯৮৬), মিটিং এ মাইলস্টোন (১৯৮৯), ইন সার্চ অফ থিয়েটার (১৯৯০), মোহর (১৯৯১), বিয়ন্ড দ্য হিমালয়াজ (১৯৯৫), রে (১৯৯৯), কালাহান্ডি (২০০১), এ ট্রেজার ইন দ্য স্নো (২০০২), ইমপারমানেন্স (২০০৪), এ জার্নি উইথ জ্যোতি বসু (২০০৫)।

 

Google News গৌতম ঘোষ
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

পুরস্কার—

তাঁর ছবি ১৬টি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নানৎ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিলভার বেলুন’ পুরস্কার, কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইউনেসকো’ পুরস্কার, তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গ্রীপ্রী’ পুরস্কার, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইউনেসকো’ পুরস্কার, ভেরনা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রেড ক্রস’ পুরস্কার।

এ ছাড়াও তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি ইতালিতে ভিট্টোরিও ডি সিকা’ (১৯৯৭) পুরস্কার লাভ করেন, এবং কিংড অফ দ্য স্টার অফ ইটালিয়ান সলিডারিটি ইন জুলাই (২০০৬) সম্মানে ভূষিত হন।

প্রকাশনা—

সায়ন রায় কৃত অ্যান এন্ডলেস জার্নি রিভিজিটিং গৌতম ঘোষ স সিনেমা।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment