ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র নিয়ে আজকের আলোচনা। ঘরে-বাইরে বাঙালি চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একই নামের একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। এই ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, জেনিফার কাপুর ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। সত্যজিৎ রায় ১৯৪০-এর দশকে তাঁর প্রথম ছবি পথের পাঁচালী নির্মাণেরও আগে এই ছবির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন। এই ছবির বিষয়বস্তু নারীমুক্তি, যা সত্যজিতের বহু ছবিতে বহু ভাবে উঠে এসেছে। নারীর মুক্তিকামনার তার ভালবাসার পাত্রকে কীভাবে স্পর্শ করে, তা এই ছবিতে বিশেষভাবে পরিস্ফুট। ছবিটি ১৯৮৪ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অর-এর জন্য প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে দেখানো হয়।

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা – ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
  • কাহিনি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা – সত্যজিৎ রায়।
  • চিত্রগ্রহণ – সৌমেন্দু রায়।
  • শিল্প নির্দেশনা- অশোক বসু
  • সম্পাদনা— দুলাল দত্ত।
  • শব্দগ্রহণ – রবীন সেনগুপ্ত, জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, অনুপ মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মঙ্গেশ দেশাই।
  • গীতিকার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার বড়াল।
  • কণ্ঠসংগীত — কিশোরকুমার।
  • সাজসজ্জা – হারু দাস, বাবলু দাস।

 

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রের অভিনয়ে:

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা চট্টোপাধ্যায়, গোপা আইচ, জেনিফার কাপুর, মনোজ মিত্র, ইন্দ্রপ্রমিত রায়, বিমল চট্টোপাধ্যায় ও আরো অনেকে।

 

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রের কাহিনি:

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন সংগঠিত হয়। কাহিনির সময় ১৯০৮ সাল, স্থান পূর্ববঙ্গের সুখসায়র গ্রাম। জমিদার নিখিলেশের (ভিক্টর) বাড়িতে অতিথি হয়ে আসে তার বন্ধু স্বদেশি নেতা সন্দীপ (সৌমিত্র)। নিখিলেশ কার্জনের প্রস্তাবের বিরোধী হলেও স্বদেশিদের বয়কট প্রস্তাবকে সমর্থন করে না, তার ধারণা এর ফলে গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই নিয়ে দুই বন্ধুতে তর্ক হয়।

নিখিলেশ বিশ্বাস করে পর্দাপ্রথা ভালো নয় এবং মুসলমানদের আমলেই দেশে পর্দাপ্রথা শুরু হয়েছে। সে তার স্ত্রী বিমলাকে (স্বাতীলেখা) অন্তঃপুর থেকে বাইরে এনে সন্দীপের সাথে আলাপ করিয়ে দেয়। বিমলা এতদিন স্বামীর প্রস্তাবে সম্মত না হলেও সন্দ্বীপের বক্তৃতা শুনে সে তার সাথে আলাপ করতে আগ্রহী হয়। সন্দীপের ব্যক্তিত্বে বিমলা মুগ্ধ এবং সন্দীপও বিমলার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। নিখিলেশের আপত্তি সত্ত্বেও সন্দীপ সুখসায়রকে তার আন্দোলনের কেন্দ্রে স্থান দেয়, আসলে সে বিমলার সান্নিধ্যে থাকতে চেয়েছিল।

 

Google News ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

নিখিলেশ জানত সন্দীপের দেশপ্রেমে ভেজাল আছে, এবং সে নেতা হওয়ার সুবাদে বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত। বিমলা প্রথম দিকে সন্দীপের মোহে আচ্ছন্ন হলেও পরে তার স্বরূপ বুঝতে পেরে স্বামীর কাছে ফিরে আসতে চায়, নিখিলেশও বিমলাকে অন্তর থেকে গ্রহণ করে। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা বাধলে সন্দীপ স্বার্থপরের মতো সুখসায়র ছেড়ে চলে যায়। নিখিলেশ তার সীমিত ক্ষমতাতে, দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং মুসলমান দাঙ্গাবাজদের হাতে তার মৃত্যু হয়, বিমলা বিধবা হয়।

 

google news logo ঘরে বাইরে চলচ্চিত্র

 

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রের পুরস্কার:

বছরের সেরা ছবি হিসাবে ১৯৮৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মানের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় নির্মিত সেরা ছবির মর্যাদা লাভ করে। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় সেরা সহ অভিনেতার পুরস্কার পান। ছবির পোশাক পরিকল্পনার জন্য হারু দাস ও বাবলু দাস রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন।

ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রের প্রকাশনা:

ছবির চিত্রনাট্য এক্ষণ পত্রিকায় ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।

 

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment