ছবি বিশ্বাস এর জন্ম কলকাতায়। আসল নাম শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। পরে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে বিদ্যাসাগর কলেজে চলে আসেন। বিদ্যাসাগরে পড়াকালীন ‘নদীয়া বিনোদ’ পালায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। অভিনয়ের সূত্রেই শিশিরকুমার ভাদুড়ী এবং নরেশচন্দ্র মিত্রর সান্নিধ্য লাভ করেন।
ছবি বিশ্বাস
চলচ্চিত্রে প্রথম আবির্ভাব কালী ফিল্মস প্রযোজিত এবং তিনকড়ি চক্রবর্তী পরিচালিত অন্নপূর্ণার মন্দির (১৯৩৬) ছবিতে নায়ক বিশুর ভূমিকায়। প্রায় তিন দশকের অভিনয় জীবনে ২৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রতিকার (১৯৪৪) এবং যার যেথা ঘর (১৯৪৯) ছবি দুটি পরিচালনা করেন।
বাংলা ছবিতে পিতা বা পিতৃপ্রতিম চরিত্রে তাঁর অভিনয় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। চল্লিশের দশকে পিতার ভূমিকায় গরমিল (১৯৪২), পরিণীতা (১৯৪২), সমাধান (১৯৪৩), তুমি আর আমি (১৯৪৬), সংগ্রাম (১৯৪৬), নার্স সিসি (১৯৪৬) ইত্যাদি ছবিগুলিতে তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। এমন অনেক নায়ক বা নায়িকার পিতার চরিত্রেই তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন যাদের সাথে তাঁর বয়সের অল্পই পার্থক্য ছিল।
পঞ্চাশের দশকে উত্তম-সুচিত্রা জুটির জয়যাত্রার সময়ও কখনও নায়ক বা নায়িকার পিতা বা পিতৃপ্রতিম চরিত্রে তিনি দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন, তাঁর অভিনয়ের দাপটের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই নায়ক বা নায়িকার অভিনয়ও মান হয়ে গিয়েছে।
অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র মিঃ মুখার্জী (পারমিল, ১৯৪২) টু মোফার (দুই পুরুষ, ১৯৪৫), ভূপতি চৌধুরী (সাত নম্বর বাড়ী, ১৯৪৬), হরিশঙ্কর চৌধুরী (শঙ্করনারায়ণ ব্যাঙ্ক, ১৯৫৬), শ্রীপতি ব্যানার্জী (পথে হল দেরী, ১৯৫৭), রহমত (কাবুলিওয়ালা, ১৯৫৭), বিশ্বস্তর রায় (জলসাঘর, ১৯৫৮), কালীকিঙ্কর (দেবী, ১৯৬০): ভুবন দত্ত (শেষ পর্যন্ত, ১৯৬০), নায়ক কৃষ্ণেন্দুর বাবা (সপ্তপদী, ১৯৬১): ইন্দ্রনাথ চৌধুরী (কাঞ্চনা, ১৯৬২), দাদাঠাকুর (দাদাঠাকুর, ১৯৬২), নায়ক জয়ন্তর বাবা (অতল জলের আহ্বান, ১৯৬২) প্রভৃতি।
কখনও আদর্শবাদী, কখনও অসহায় পিতা, আবার কখনও অভিজাত পিতার পাশাপাশি খল চরিত্রেও তাঁর অভিনয় দর্শকদের সঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও প্রশংসা অর্জন করেছিল। ১৯৫৭ সালে তপন সিংহ পরিচালিত কাবুলিওয়ালা ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগদান করেন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর, দেবী এবং কাঞ্চনজঙ্ঘায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে। আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে জাকার্তা চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত পেশাদার রঙ্গমঞ্চেও অভিনয় করেছেন। শিশিরকুমারের দুর্দিনে শ্রীরঙ্গমে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে তিনি সংগীত নাটক অকাদেমির অভিজ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬২ সালে একটি পথ দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

চলচ্চিত্রপঞ্জি:
- ১৯৩৬ অন্নপূর্ণার মন্দির,
- ১৯৩৭ হারানিধি, দিদি:
- ১৯৩৮ চোখের বালি:
- ১৯৩৯ শর্মিষ্ঠা, জীবনমরণ, চাণক্য:
- ১৯৪০ স্বামী স্ত্রী, নিমাই সন্ন্যাস,
- ১৯৪১ নর্তকী, কর্ণার্জুন, বাংলার মেয়ে পরিচয়, এপার ওপার, প্রতিশোধ, প্রতিশ্রুতি;
- ১৯৪২ পাষাণ দেবতা, মহাকবি কালিদাস, শোধবোধ, অভয়ের বিয়ে, নারী, গরমিল, জীবন সঙ্গিনী, মিলন, অশোক, বন্দী, পতিব্রতা, পরিণীতা,
- ১৯৪৩ আলেয়া সমাধান, দ্বন্দু, দিকশূল, নীলাঙ্গুরীয়, দাবী, পাপের পথে, দম্পতি, দেবর
- ১৯৪৪ ছদ্মবেশী, মাটির ঘর, প্রতিকার,
- ১৯৪৫ পথ বেঁধে দিল, বন্দিতা, দুই পুরুষ, শ্রীদুর্গা,
- ১৯৪৬ সাত নম্বর বাড়ি, বিরাজ বৌ, সংগ্রাম, নিবেদিতা, বন্দেমাতরম, তুমি আর আমি,
- ১৯৪৭ অভিযাত্রী নাগ সিসি রায়চৌধুরী, মন্দির, অভিযোগ, চন্দ্রশেখর:
- ১৯৪৮ শেষ নিবেদন, শাঁখা সিঁদুর, দৃষ্টিদান, উমার প্রেম, অনির্বাণ, নন্দরাণীর সংসার, সাধারণ মেয়ে:
- ১৯৪৯ দেবী চৌধুরাণী, সিংহদ্বার, যার যেথা ঘর,
- ১৯৫০ মানদণ্ড, মহাসম্পদ, বিদ্যাসাগর, গরবিনী
- ১৯৫১ অপরাজিতা, দুর্গেশনন্দিনী, কালসাপ, অনুরাগ, স্পর্শমণি, সুনন্দার বিয়ে, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম:
- ১৯৫২ জবানবন্দী, আলাদিন ও আশ্চর্য প্রদীপ, নিরক্ষর, কৃষ্ণকান্তের উইল, প্রার্থনা, রাত্রির তপস্যা, কার পাপে, শুভদা,
- ১৯৫৩ সাত নম্বর কয়েদী, বৌদির বোন, মাকড়সার জাল, সবুজ পাহাড়, বৈমানিক, যোগবিয়োগ, লাখ টাকা, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, ব্লাইন্ড লেন, শেষের কবিতা,
- ১৯৫৪ মা ও ছেলে, ওরা থাকে ওধারে, না, কল্যাণী, প্রফুল্ল, ঢুলী, বাঙলার নারী, সদানন্দের মেলা, সতী বেহুলা, ছেলে কার, ষোড়শী, যদুভট্ট, ভাঙাগড়া,
- ১৯৫৫ সাঁঝের প্রদীপ, রাণী রাসমণি, দত্তক, পরিশোধ, পথের শেষে, ঝড়ের পরে, বিধিলিপি, জয় মা কালী বোর্ডিং, কথা কও, প্রশ্ন, হ্রদ, উপহার, কালো বৌ, দেবী মালিনী, রাতভোর, ব্রতচারিণী, দৃষ্টি, শ্রীবৎসচিত্তা, সবার উপরে, ভগবান শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ,
- ১৯৫৬ ভোলামাষ্টার, কীর্তিগড়, অসবর্ণা, সাহেব বিবি গোলাম, শুভরাত্রি, শঙ্করনারায়ণ ব্যাঙ্ক, অসমাপ্ত, ত্রিযামা, মামলার ফল, মানরক্ষা, কবি গোবিন্দদাস, একদিন রাত্রে, রাজপথ, ছায়াসঙ্গিনী, সূর্যমুখী, সাধক রামপ্রসাদ, মদন মোহন, পুত্রবধূ, ফল্গু, দানের মর্যাদা, পরাধীন, টাকা আনা পাই, সিঁথির সিঁদুর:
- ১৯৫৭ কাবুলিওয়ালা, শেষ পরিচয়, বড়দিদি, ঘুম, বড়মা, একতারা, তাপসী, আদর্শ হিন্দু হোটেল, পৃথিবী আমারে চায়, খেলা ভাঙার খেলা, হরিশ্চন্দ্র, নতুন প্রভাত, সুরের পরশে, রাস্তার ছেলে, কাঁচামিঠে, ছায়াপথ, অভিষেক, কৃষ্ণকান্তের উইল, অভয়ের বিয়ে, মাথুর, বাসিত, অন্তরীক্ষ, গড়ের মাঠ, নীলাচলে মহাপ্রভু, সন্ধান, কড়ি ও কোমল, মাধবীর জন্য, তমসা, পথে হল দেরী, ১৯৫৮ লৌহকপাট, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, প্রিয়া, বৃন্দাবনলীলা, বন্ধু, নূপুর, ডেলি প্যাসেঞ্জার, ও আমার দেশের মাটি, তানসেন, নাগিনী কন্যার কাহিনী, সাধক বামাক্ষ্যাপা, জলসাঘর ইন্দ্রাণী, ধূমকেতু, সূর্যতোরণ, মর্মবাণী,
- ১৯৫৯ চাওয়া পাওয়া, বিচারক, ঠাকুর হরিদাস, দেড়শো খোকার কাণ্ড, শশীবাবুর সংসার, প্রাপ্তি, গলি থেকে রাজপথ, ছবি, নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে, আম্রপালী, খেলাঘর, অগ্নিসম্ভবা, নৃত্যেরই তালে তালে, হেডমাষ্টার, সোনার হরিণ, রাতের অন্ধকারে, শুভবিবাহ, মৃতের মর্ত্যে আগমন, ক্ষণিকের অতিথি।
- ১৯৬০ মায়ামৃগ, দেবর্ষি নারদের সংসার, রাজ্যসাজা, দেবী, হাত বাড়ালেই বন্ধু, ক্ষুধিত পাষাণ, চুপি চুপি আসে, গরীবের মেয়ে, ত্রৈলঙ্গস্বামী, হসপিটাল, স্মৃতিটুকু থাক, শেষ পর্যন্ত, সখের চোর, অজানা কাহিনী, নদের নিমাই, সুরের পিয়াসী, শুন বরনারী, ১৯৬১ মানিক, কেরী সাহেবের মুন্সী, বিষকন্যা, অগ্নিসংস্কার, মধ্যরাতের তারা, স্বয়ম্বরা, নেকলেস, কাঞ্চনমূল্য, ডাইনি, আশায় বাঁধিনু ঘর, মধুরেণ, মিথুন লগ্ন, সপ্তপদী, মা
- ১৯৬২ সরি ম্যাডাম, বিপাশা, কাঁচের স্বর্গ, সূর্যস্নান, শিউলিবাড়ি, কাঞ্চনজঙ্ঘা, বধূ, অতল জলের আহ্বান, অগ্নিশিখা, কাজল, মায়ার সংসার, শুভদৃষ্টি, দাদাঠাকুর, ধূপছায়া,
- ১৯৬৩ হাই হিল, সূর্যশিখা, কাঁটাতার
- ১৯৭৩ বিজ্ঞান ও বিধাতা।
প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ তুমি কি কেবলই ছবি ।
আরও দেখুনঃ