জামাইবাবু চলচ্চিত্র নিয়ে আজকের আলোচনা। এই ছবিটি প্রযোজনা করে হীরা ফিল্ম কোম্পানি। ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেন কালীপদ দাস। চিত্রগ্রহণ করেন বড়োদেকর।
জামাইবাবু চলচ্চিত্র
অভিনয়:
- কালীপদ দাস
- শিবপদ ভৌমিক
- রাধারাণী
- অমূল্য বন্দ্যোপাধ্যায়
- সাধনা দেবী
- প্রভাতকুমার
- রাজেন্দ্র
কাহিনি:
গোবর্ধন (কালীপদ) নামে গ্রামের একটি লোক কলকাতায় তার শ্বশুরবাড়িতে আসে স্ত্রীর (রাধারাণী) সাথে দেখা করার জন্য। তার মনের ইচ্ছে কলকাতা শহরটি ঘুরে দেখার। স্ত্রীর ভাই কলেজ থেকে ফিরে তাকে শহরের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। সময় নষ্ট না করে গোবর্ধন নিজেই বেরিয়ে পড়ে শহরটা একবার ঘুরে দেখার জন্য।
শহরের কিছুই না জানার কারণে গোবর্ধন পথ হারিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সামনে পড়ে। কখনও হকারের সাথে বচসায় জড়িয়ে জনতার তাড়া খায়, কখনও বা দাঙ্গার হাত থেকে বাঁচার জন্য ম্যানহোলে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত সে তার শালার সাক্ষাৎ পায় এবং শ্বশুরবাড়ি ফিরে আসে, কিন্তু সেখানেও তার দুর্ভাগ্যের শেষ হয় না, রাত্রে স্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়ে ভুলক্রমে চোর বলে ধরা পড়ে এবং মার খায়। গ্রামের জামাই এর শহুরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নানা ভাবে হেনস্থা হওয়ার গল্প নিয়েই এই ছবি।
অবিভক্ত বাংলাদেশে তৈরি এই নির্বাক ছবিটির সন্ধান পাওয়া যায় মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’ শুটিং করার সময় গ্রামের এক জমিদার বাড়িতে। ঘটনাক্রমে গ্রামের জমিদারবাড়ির হীরেন্দ্রনাথ ঘোষ ছবিটির প্রযোজক ছিলেন, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র সংগ্রহশালা ছবিটি পুনরুদ্ধার করে। এই ছবিটিই নির্বাক যুগের বাংলা ছবির একমাত্র প্রতিনিধি।
শুধুমাত্র এই ছবিটি দেখে নির্বাক যুগের বাংলা ছবির মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। প্রযোজক, পরিচালক বা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেউই সেই সময়ের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে পড়েন না। নায়কের চলা ফেরার মধ্যে চ্যাপলিনের ব্যর্থ অনুকরণ লক্ষ করা যায়। ছবিতে চ্যাপলিন বা হলিউডের প্রভাব লক্ষ করা গেলেও পরিচালক বাংলা ও বাঙালির সামাজিক অবস্থানের মধ্যে ছবির ঘটনাগুলিকে সন্নিবিষ্ট করেছেন।
বাংলা, হিন্দী এবং ইংরাজি ভাষার টাইটেল সহ এই ছবির বেশির ভাগ অংশই স্টুডিওর বাইরে তোলা। ছবিতে তৎকালীন কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ঢাকুরিয়া লেক, চৌরঙ্গী রোড, রসা রোড ইত্যাদি স্থানগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাও দেখতে পাওয়া যায় যা আশি বছর আগের।

কলকাতার Documentary Evidence প্রবন্ধ-নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির মুখপত্র ‘চিত্রভাষ’ পত্রিকার ১৮ বর্ষ ২য় সংখ্যা, ১৯৮৩তে এই ছবির উপর দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
আরও দেখুনঃ