অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর জীবনী

বাংলাদেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয়তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনয়শিল্পীদের তালিকায় যে কজন শিল্পীর নাম প্রথমে আসে, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব তাঁদের অন্যতম। অভিনয়ের সূক্ষ্মতা, প্রেম-ভাষার দখল এবং বাস্তব জীবনের ছোঁয়া—এই তিনের অনন্য মিশ্রণ তাঁর অভিনয়কে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র রূপ।

তিনি কেবল একজন রোমান্টিক নায়ক নন, বরং একজন সৃজনশীল কনটেন্ট নির্মাতা, নাট্যপরিচালক এবং সাবলীল সংগীতশিল্পী। তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে রয়েছে নানামাত্রিক চরিত্রে অসাধারণ দক্ষতা, যা তাঁকে বেছে নিয়েছে “জাত অভিনেতা” হিসেবে।

 

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

জিয়াউল ফারুক অপূর্বর জীবনী

 

ব্যক্তিগত শিক্ষাজীবন

বিষয়তথ্য
পূর্ণ নামজিয়াউল ফারুক অপূর্ব
ডাক নামঅপূর্ব
জন্ম২৭ জুন, ১৯৮৩, ঢাকা, বাংলাদেশ
বয়স (২০২৫ অনুযায়ী)৪১ বছর
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
ধর্মইসলাম
রাশিসিংহ
উচ্চতা৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
ওজন৭৬ কেজি
চোখ ও চুলের রঙকালো
ট্যাটুনেই

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

 

শিক্ষাজীবন

স্তরপ্রতিষ্ঠানবিষয়
স্নাতকনর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (BBA)

অপূর্বর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবসায় প্রশাসনে হলেও তাঁর হৃদয় ছিল শিল্পে নিবেদিত। ছোটবেলা থেকেই মায়ের প্রেরণায় তিনি সংগীত ও পারফর্মিং আর্টসে আকৃষ্ট হন।

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

 

পেশাগত যাত্রা জনপ্রিয়তা

অপূর্বর শোবিজ জগতে আগমন ঘটে ছোটবেলার জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা নতুন কুঁড়ি” দিয়ে। এরপর তিনি ২০০০-এর দশকে মডেলিং-এর মাধ্যমে মিডিয়া জগতে পরিচিতি পান।

উল্লেখযোগ্য মাইলফলক:

  • প্রথম নাটক: বোয়াম (২০০৬), পরিচালনায় হানিফ সংকেত।
  • প্রথম চলচ্চিত্র: গ্যাংস্টার রিটার্নস (২০১৫) – এখনও পর্যন্ত এটি তাঁর একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

জনপ্রিয় নাটকসমূহ:

  • বড় ছেলে (২০১৭) – বাংলাদেশের ওয়ান আওয়ার নাটকের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত।
  • আয়নার ভালোবাসা
  • তুমি আমারে চেনো না
  • আলো
  • হারানো একটি গল্প
  • প্রেম আমার
  • তোমায় ঘিরে ভালোবাসা

তাঁর নাটকগুলোতে প্রেম, আবেগ, সম্পর্ক ও বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন অসাধারণভাবে ফুটে ওঠে।

 

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

 

পরিচালনা অন্যান্য সৃজনশীল কাজ

অভিনয়ের পাশাপাশি অপূর্ব একজন নাট্যপরিচালক হিসেবেও প্রশংসিত।

  • Back Bencher (২০২১) – তাঁর পরিচালিত নাটক, যা টিনএজ-নস্টালজিয়া ও রোমান্টিক আবহে আলোচিত হয়।
  • নাটকের চিত্রনাট্যে তাঁর ভাবনা ও বাচনভঙ্গি যুক্ত হয়ে তৈরি করে বিশেষ ঘরানার আবহ।

তিনি সঙ্গীত চর্চাতেও সক্রিয় ছিলেন এবং শখের বশে গান করেন—বিশেষত আধুনিক ও রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর প্রিয়।

 

পুরস্কার সম্মাননা

বছরপুরস্কারবিভাগ
২০১৭ATN BANGLA পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডশ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা
২০১৮মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারজনপ্রিয়তার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা
২০২০RTV স্টার অ্যাওয়ার্ডওয়ান হাউর ড্রামা বড়ো ছেলে-এর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা

 

পরিবার ব্যক্তিগত জীবন

সম্পর্কনাম
মাফিরোজা আহমেদ (রাজশাহী বেতারের সংগীতশিল্পী)
প্রথম স্ত্রীসাদিয়া জাহান প্রভা (বিবাহ: ২০১০–২০১১)
দ্বিতীয় স্ত্রীনাজিয়া হাসান অদিতি (বিবাহ: ২০১১–২০২০)
বর্তমান স্ত্রীশম্মা দেওয়ান (বিবাহ: ২০২১–বর্তমান)
সন্তানপুত্র – জায়ান ফারুক আয়াস
প্রেমিকানেই (প্রকাশ্যে কোনো সম্পর্ক নেই)

অপূর্ব বরাবরই পুত্র আয়াসের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং তাঁকে “জীবনের প্রেরণা” বলে উল্লেখ করেন।

 

আয় সম্পদ

বিষয়তথ্য
গাড়িহোন্ডা সিভিক, টয়োটা প্রিমিও
আনুমানিক সম্পদ১,৬৯,৪৬,১৯৬০ টাকা (বাংলাদেশি)
প্রতি সিনেমা সম্মানী৪০–৬০ লক্ষ টাকা
নাটক প্রতি পারিশ্রমিকউল্লেখযোগ্য হারে (১–২ লক্ষ টাকা+)

 

পছন্দঅপছন্দ আগ্রহ

বিষয়পছন্দ
প্রিয় খাবারভাত ও গরুর মাংস
প্রিয় পানীয়লেমন টি
প্রিয় সিনেমাবড়ো ছেলে (নিজের অভিনীত নাটক)
প্রিয় গানরবীন্দ্রসঙ্গীত
প্রিয় গায়কআয়ুব বাচ্চু
প্রিয় খেলাফুটবল
প্রিয় দলব্রাজিল ফুটবল দল
প্রিয় রঙসবুজ

 

অতিরিক্ত তথ্য প্রেক্ষাপট

  • অপূর্বর মাতার সংগীত শিক্ষা সাংস্কৃতিক অনুপ্রেরণায় তাঁর শৈল্পিক বোধ গড়ে ওঠে।
  • ব্যক্তিজীবনের ওঠানামা ও সামাজিক সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি নিজের কাজে সদা নিবেদিত।
  • তিনি গণমাধ্যমে সবসময় একজন মার্জিত ভদ্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিত, যা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
  • বর্তমানে তিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজের সম্ভাবনা নিয়েও আগ্রহী, এবং ভবিষ্যতে সিনেমা নির্মাণেও তাঁর আগ্রহ রয়েছে।

 

“জাত অভিনেতা” হিসেবে অপূর্বর অবস্থান

বাংলাদেশে “জাত অভিনেতা” শব্দটি কেবল তাঁর মতো শিল্পীদের সঙ্গেই মানায়—যাঁদের অভিনয়ে থাকে বাস্তব জীবনের আবেগ, সূক্ষ্ম অনুভব এবং চরিত্র বিশ্লেষণের দারুণ দক্ষতা। অপূর্বর সংলাপ বলা, চোখের ভাষা, শরীরী অভিব্যক্তি – সবকিছুই তাঁর অভিনয়কে করে তুলেছে জীবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য।

 

 

Google News অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর জীবনী
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

জিয়াউল ফারুক অপূর্বর জীবনপথ হলো সংগ্রাম, সৃজনশীলতা সংবেদনশীল অভিনয়ের এক মহাকাব্য। টেলিভিশন নাটকে রোমান্টিসিজম ও আবেগের যে ছাপ তিনি রেখে চলেছেন, তা দীর্ঘদিন মনে রাখবে দর্শক ও ভক্তরা।

নতুন প্রজন্মের জন্য অপূর্বর অভিনয় ও জীবনজার্নি হতে পারে প্রেরণার বাতিঘর। তাঁর প্রতিটি চরিত্র যেন একটা আবেগের আয়না—যেখানে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়।

Leave a Comment