অভিনেত্রী জ্যোৎস্না গুপ্ত

জ্যোৎস্না গুপ্তর জন্ম কলকাতায়, পিতা শঙ্কর গুপ্ত ছিলেন প্রথম বাঙালি ফিল্ম অপারেটর। অল্প বয়সেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ে যুক্ত হন। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত এবং জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত চণ্ডীদাস (১৯২৭) ছবিতে।

জ্যোৎস্না গুপ্ত

জ্যোৎস্না গুপ্ত । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

চলচ্চিত্রে প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হচ্ছেন হীরালাল সেনের ভাগনে বৃহত্তর ঢাকার বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলার কুমার গুপ্তের ( ভোলানাথ গুপ্ত) মেয়ে জ্যোৎস্না গুপ্তা । ১৯১৪ সালে জ্যোৎস্না গুপ্তা পিতা ভোলানাত গুপ্তের কর্মস্থল কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন । ভোলানাত গুপ্ত হীরালাল সেনের সঙ্গে বায়োস্কোপ প্রদর্শন ও নির্মাণে জড়িতে ছিলেন এবং লন্ডন বায়োস্কোপ ও ম্যাডান থিয়েটারসেও কাজ করতেন । এই সূত্রে জন্মের পর থেকেই জ্যোৎস্না গুপ্তা একটি চলচ্চিত্রিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন । ১৯৩০ সালে ১৬ বছর বয়সে জ্যোৎস্না গুপ্তা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান । নির্বাক ও সবাক যুগে চিত্রজগতে পুরুষ শিল্পী পাওয়া গেলেও মেয়ে শিল্পী পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য ।

সে সময় যে সব মেয়ে শিল্পী অভিনয় করতেন তারা প্রায় সবাই ছিলেন বাইজি বা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান । বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে জ্যোৎস্না প্রথম অভিনয় করেন নিউ থিয়েটারস প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘চোরা কাঁটা’য় । এ ছবির পরিচালক ছিলেন চারু রায় । নির্বাক ‘চোরা কাটাঁ’ মুক্তি পায় ১৯৩১ সালে ৩ এপ্রিল কলকাতার ‘চিত্রা’ হলে । দ্বিতীয় ছবি ‘চাষার মেয়ে’ মুক্তি পায় ১৯৩১ সালে ৪ সেপ্টেম্বর । এ ছবির পরিচালক ছিলেন প্রফুল্ল রায় । ছবিটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । সেই সঙ্গে জ্যোৎসা গুপ্তাও সকলের কাছে জনপ্রিয় হতে শুরু করেন । একক নায়িকা হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন ফিল্মসের ‘তরুণী’ (১৯৩৪) ছবিতে । ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ সুপারহিট হলে জ্যোৎসাও খ্যাতির শীর্ষে উঠে যান ।

১৯৫০ সাল পর্যন্ত জ্যোাৎস্না আরো অনেক ছবিতে অভিনয় করেন । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবি বিদ্রোহী (১৯৩৫), তরুবালা (১৯৩৬), পথের শেষে (১৯৩৬), পরপারে (১৯৩৬), ইন্দিরা (১৯৩৭), পরশমনি(১৯৩৯), শকুন্তলা (১৯৪১), অভিসারে (১৯৪৩), জননী(১৯৪৪), দেশের দাবী (১৯৪৭) ইত্যাদি ।

নির্বাক যুগে জ্যোৎস্না ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রাফট প্রযোজিত চোরকাটা (১৯৩১) এবং চাষার মেয়ে (১৯৩১) ছবিতে অভিনয় করেন। সবাক যুগে প্রথম অভিনয় কালী ফিল্মস প্রযোজিত এবং প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত তরুণী (১৯৩৪) ছবিতে নায়িকা উমার ভূমিকায়। জ্যোৎস্না অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল তুলসী (বিদ্রোহী, ১৯৩৫), পারুল (পথের শেষে, ১৯৩৬), সরযূ (শশীনাথ, ১৯৩৭), ছন্দা (মাটির ঘর, ১৯৪৪), মালতী (দেশের দাবী, ১৯৪৭) প্রভৃতি।

 

জ্যোৎস্না গুপ্ত । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

 

সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে মাত্র ২৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। যে সব সাথে কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চারু রায়, প্রফুল্ল রায়, সুশীল মজুমদার, প্রেমাছুর আতর্থী, হরি ভঞ্জ, হিরন্ময় সেন প্রভৃতি। বাংলা ছাড়া কয়েকটি হিন্দী ছবিতেও কাজ করেছেন।

 

google news , গুগল নিউজ
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯২৭ চন্ডীদাস
  • ১৯৩১ চোরকাটা, চাষার মেয়ে
  • ১৯৩৪ তরুণী,
  • ১৯৩৫ মানময়ী গার্লস স্কুল, বিদ্রোহী,
  • ১৯৩৬ পথের শেষে, পরপারে, তরুবালা,
  • ১৯৩৭ ইন্দিরা, শশীনাথ,
  • ১৯৩৯ পরশমণি,
  • ১৯৪১ শকুন্তলা, অবতার:
  • ১৯৪৩ অভিসার,
  • ১৯৪৪: মাটির ঘর:
  • ১৯৪৭ দেশের দাবী, ঝড়ের পরে, বর্মার পথে, আমার দেশ,
  • ১৯৫১ রাজমোহনের বৌ,
  • ১৯৫৮ বাঘাযতীন।

 

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment