ডাক হরকরা চলচ্চিত্র নিয়ে আজকের আলাপ। এই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছিল অগ্রগামী প্রোডাকসন্স। চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছিল অগ্রগামী। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এই মর্মস্পর্শী কাহিনিটির লেখক।
ডাক হরকরা চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা —অগ্রগামী প্রোডাকসন্স।
- কাহিনি ও গীতরচনা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
- চিত্রনাট্য ও পরিচালনা — অগ্রগামী।
- সংগীত পরিচালনা – সুধীন দাশগুপ্ত।
- চিত্রগ্রহণ – রামানন্দ সেনগুপ্ত।
- শিল্প নির্দেশনা— সুধীর খান।
- শব্দগ্রহণ —অবনী চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, বি. এন. শর্মা।
- সম্পাদনা কালী রাহা।
- নৃত্য পরিচালনা — অনাদি প্রসাদ।
অভিনয় —
কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষ (শান্তিনিকেতন), গঙ্গাপদ বসু, শোভা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, কমলা অধিকারী, মঞ্জুলা ভট্টাচার্য, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, জহর রায় এবং অন্যান্য।
নেপথ্য কণ্ঠ —
গীতা দত্ত, মান্না দে।
ছবিটির জন্য নিজে দু-একটি গানও রচনা করে রেখেছেন। এমনই একটি গান হল ‘ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায়।’ ছবিটি তৈরি হয়েছে ১৯৫৮ সালে। পরিচালক সুধীনবাবুকে মানে সুধীন দাশগুপ্তকে দিয়ে সুর করাবেন বলে ঠিক করলেন। সুধীনবাবু রাজিও হলেন এক কথায়। তারপর একে একে ছবির গায়ক গায়িকাকেও সুধীনবাবু ঠিক করলেন নিজের মনের মতো করে। নিলেন মান্না দে, গীতা দত্ত প্রমুখকে। বাংলার লোকাঙ্গিক ছাঁচে, ভাটিয়ালির করুণ রসামৃত, গানের ধারায় ‘ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায়’ গানটিকে সুর দিলেন সুধীন দাশগুপ্ত। সুধীনবাবুর দেওয়া এই সুর তারাশঙ্করবাবুর মনে গভীরভাবে দাগ কেটে গেল।
সুধীনবাবুর মুখে গানটি শুনতেও ভালোবাসতেন। দেখা হলেই হাত ধরে অনুরোধ করেন গানটি শোনানোর জন্য। স্থান-কালেরও তোয়াক্কা করতেন না। এরকমই একদিন চৌরঙ্গী রোডে স্ত্রী মঞ্জুশ্রী দাশগুপ্ত-র সঙ্গে একটা বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে শোকেসে বই দেখছেন সুধীনবাবু। হঠাৎই লক্ষ্য করলেন দূর থেকে তারাশঙ্করবাবু ছুটতে ছুটতে আসছেন। সুধীর যেন কাউকে দেখেননি, এমনভাবেই মঞ্জুশ্রীকে বললেন ‘চলো চলো শিগগির পালাই। নইলে এখনই বলবেন গানটা শোনাও।” তারপর বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে সুধীনবাবু বললেন “ওরে বাবারে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি, তারাবাবুকে দেখেই পালালাম, নইলে দেখা হলেই বলতেন সুধীন ‘ওগো তোমার’ গানটা শোনাও দেখি।” গানটির কথার সঙ্গে সুরের এমন দরদি মিশ্রণ বাংলা গানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর তার জন্যই গানের স্রষ্টার এই শুনতে চাওয়ার প্রবল আকুতি।
‘ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায়’
অন্যদিকে প্রাণ ঢেলে গানটি গেয়েছিলেন মান্না দে। মান্না দে যেহেতু তখন মুম্বইতে, তাই গানটি রেকর্ড করার জন্য মুম্বইতেই স্টুডিও ভাড়া করা হল। সে দিনও এক বিরল ঘটনার সাক্ষী রইলেন সবাই। কথার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি হওয়া গানটির এমনই সুর যে রেকর্ডিং শেষ হওয়া মাত্র মান্না দে এবং সুধীন দাশগুপ্ত পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আসলে দেখার জায়গাটা বৈরাগ্যের আবেগে। কারণ গায়কের বয়স তখন ঊনচল্লিশ আর সুরকারের বয়স তখন মাত্র আঠাশ। এই গানটি রইল আপনাদের জন্য।
কাহিনি—
গ্রামের সহজ সরল চাষি দীনবন্ধু দাস (কালী) সনাতন চিন্তাধারার মানুষ। সংসারে আছে স্ত্রী (শোভা) এবং ছেলে নিতাইচরণ (অজিত)। দীনবন্ধু গ্রামে দীনু নামেই পরিচিত। চাষের সাথে সাথে সে ডাকহরকরার কাজও করে। দীনুর ছেলে নিতাই গ্রামে থাকতে রাজি নয়, তার ইচ্ছে ড্রাইভারি শিখে শহরে বাস করার এবং ভালোবাসে বাসন্তীকে (সাবিত্রী)।
নিতাই হঠাৎ বড়লোক হওয়ার আশায় বাবার মেলব্যাগ ডাকাতি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এবং দানু পুলিসের কাছে ছেলের নামে অভিযোগ দায়ের করে। নিতাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ দিন তার কোনো খবর পাওয়া যায় না। বেশ কিছুদিন পর দীনু সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি মারফত জানতে পারে যে নিতাই মিলিটারিতে চাকরি নিয়েছিল এবং দেশরক্ষার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় তার মৃত্যুর কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে মেডেল দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে।

ইতিমধ্যে নিতাইয়ের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কারণে বাসন্তী সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছিল। এবং যথাসময়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। দীনু নিতাইয়ের সন্তানকে নিজের নাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত বছরের সেরা ছবি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মান ‘সার্টিফিকেট অফ মেরিট’ লাভ করে।
আরও দেখুনঃ