তনুজা সমর্থ

তনুজা সমর্থ জন্ম বোম্বেতে হলেও প্রথাগত শিক্ষা সুইজারল্যান্ডে। মা শোভনা সমর্থ ছিলেন অভিনেত্রী। প্রথম বাংলা ছবি সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত দেয়ানেয়া (১৯৬৩) এবং প্রথম হিন্দী ছবি কেনার শর্মা পরিচালিত হামারি ইয়াদ আয়োগী (১৯৬১)।

 

তনুজা সমর্থ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তনুজা সমর্থ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

মুম্বাইয়ের (সাবেক: বোম্বে) মারাঠি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ‘তনুজা সমর্থ’ নামে। বাবা কুমারসেন সমর্থ এবং মা শোভনা সমর্থের চার সন্তানের মধ্যে তিনি একজন। কুমারসেন সমর্থ ছিলেন একজন কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক। ‘শোভনা সমর্থ’ ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। শৈশবকালেই পিতা-মাতার মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। বড় বোন নূতন ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।[১] তার ‘চতুরা’ নাম্নী আরেকটি বোন রয়েছে, যিনি কখনো অভিনয় জগতে প্রবেশ করেননি। কুমারসেন সমর্থ মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে (পূর্ব) এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই বড় হন।

মূলত হিন্দী ছবির অভিনেত্রী হলেও কুড়িটিরও বেশি বাংলা ছবিতে নায়িকা বা সম গুরুত্বের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যে সব পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে তপন সিংহ, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, ইন্দর সেন, সুধীর মুখোপাধ্যায়, সলিল সেন, অজয় কর পার্থপ্রতিম চৌধুরী, শক্তি সামস্ত, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃতির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

তনুজা সমর্থ । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

বড় বোন নুতনের সাথে হামারি বেটি (১৯৫০) ছবিতে ‘বেবি তনুজা’ নামের চরিত্রে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূত্রপাত ঘটে।[২] ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে অভিনয় করে গেছেন। ছাবিলি (১৯৬০) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ছবিটির পরিচালক ছিলেন তার মা এবং তার বোনও এতে নেতৃত্ব দেন। পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে তিনি কিদার শর্মা’র হামারি ইয়াদ আয়েগী (১৯৬১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খ্যাতির শিখরে পৌঁছান। ১৯৫০ এর দশকে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী গীতা বালি’র ন্যায় তিনিও ছিলেন ভীষণ একগুঁয়ে ও জেদী স্বভাবের ।

তার প্রথমদিককার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বাহারেন ফির ভি আয়েঙ্গী (১৯৬৬) ছবির পরিচালক ছিলেন শহীদ লতিফ।[৩] ‘ওহ্‌ হাসকে মিলে হামসে’ গানের মাধ্যমে তিনি সকলের নজর কাড়েন। সহজাত ও স্বভাবশৈলী অভিনয় নৈপুণ্যের মাধ্যমে তিনি খুব শীঘ্রই প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। জিনে কি রাহে (১৯৬৯) ছবিতে জীতেন্দ্রের সাথে অভিনয় করেন ও আশ্চর্য্যজনকভাবে ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। ঐ বছরই তনুজা পয়সা ইয়ে পেয়ার ছবির মাধ্যমে ‘ফিল্ম ফেয়ারঃ সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার’ পান। হাতি মেরে সাথী (১৯৭১) চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে। পরবর্তীতে মেরে জীবন সাথী, দো চোর এবং এক বার মুসকরা দো (১৯৭২) ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন। এছাড়াও, পবিত্র পাপী (১৯৭০), ভুত বাংলা, অনুভব ইত্যাদি তার কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি।

১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তনুজা কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রেও সমানতালে অভিনয় করতে শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে দেয়া নেয়া চলচ্চিত্রে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া, অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হিসেবে এন্টনি-ফিরিঙ্গী (১৯৬৭) এবং রাজকুমারী (১৯৭০) অন্যতম। তনুজা তার অত্যন্ত চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় মুখশ্রী নিয়ে অন্যতম সুপারস্টার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতেও বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তন্মধ্যে – তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), প্রথম কদম ফুল এবং আগুন (১৯৮৮ চলচ্চিত্র) অন্যতম। এছাড়াও তিনি বেশকিছু ভিন্নধর্মী আর্থসামাজিক বিষয়নির্ভর বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন যার মধ্যে আদালত ও একটি মেয়ে, মধুবন ইত্যাদি উল্লেখনীয়। তিনি নির্ভুল পরিষ্কার উচ্চারণে বাংলা সংলাপ বলার দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

পরবর্তীতে তনুজা বেশ কয়েক বছর চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। শমু মুখার্জী’র সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার পর তিনি পুনরায় চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন। সহকারী অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয়ের জন্য তিনি তার পূর্বের নায়কদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা পান। পেয়ার কি কাহানী’র নায়ক অমিতাভ বচ্চন খুদ্দার (১৯৮২) ছবিতে তাকে ‘ভাবী’ হিসেবে সম্বোধন করেন। রাজ কাপুরের প্রেম রোগ (১৯৮২) ছবিতেও তিনি সহ-অভিনেত্রী ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সাথিয়া (২০০২), রুলস্‌ (২০০৩) এবং খাকী (২০০৩) চলচ্চিত্রগুলোয় তিনি সহ-অভিনেত্রী হিসেবে অংশ নেন।

 

অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র সুচরিতা (দেয়ানেয়া, ১৯৬৩): সুলতা (নতুন তীর্থ, ১৯৬৪), সুমনা (দোলনা, ১৯৬৫), নিরুপমা (এন্টনী ফিরিঙ্গী, ১৯৬৭), শিবানী (দুই প্রজাপতি,১৯৬৭), ঊর্মি (আদালত ও একটি মেয়ে, ১৯৮২) ইত্যাদি।

বাংলা, হিন্দী ছাড়াও মারাঠি, ইংরাজি, মালয়ালম, গুজরাটি ভাষায় নির্মিত ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি দূরদর্শন ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে হিন্দী ছবির প্রখ্যাত অভিনেত্রী নূতন তনুজার দিদি এবং এখনকার হিন্দী ছবির স্বনামধন্যা অভিনেত্রী কাজল তাঁর কন্যা। পরিচালক সমু মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

 

google news , গুগল নিউজ
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯৬৩ দেয়া নেয়া।
  • ১৯৬৪ নতুন তীর্থ,
  • ১৯৬৫ দোলনা,
  • ১৯৬৭ এন্টনী ফিরিঙ্গী, দুই প্রজাপতি:
  • ১৯৬১ তিন ভুবনের পারে, পিতাপুত্র,
  • ১৯৭০ রাজকুমারী, প্রথম কদম ফুল:
  • ১৯৭১ চৈতালী:
  • ১৯৭২ অপর্ণা:
  • ১৯৭৮ লালকুঠী:
  • ১৯৮২ আদালত ও একটি মেয়ে:
  • ১৯৮৩ চেনা অচেনা
  • ১৯৮৪ শিলালিপি,
  • ১৯৮৮ আগুন, মধুবন:
  • ১৯৯০ অন্ধ বিচার, আঘাত:
  • ১৯৯৪ শেষ চিঠি:
  • ১৯৯৭ আজকের সন্তান।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment