তরুণ মজুমদার

তরুণ মজুমদার এর জন্ম কলকাতায় মামার বাড়িতে হলেও বড় হয়েছেন পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) বগুড়া নামে একটি ছোট শহরে। পিতা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বগুড়া করোনেশান হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন। সেন্ট পলস থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন।

 

তরুণ মজুমদার । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তরুণ মজুমদার

মামার বাড়িতে চলচ্চিত্রের চর্চা ছিল, এক মামা (সুকুমার ঘোষ) চলচ্চিত্র বিজ্ঞাপনের এবং প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলেন। স্নাতক হবার পর বড়মামার সাহায্যে পার্ক সার্কাসে একটি স্টুডিওতে চিত্রগ্রাহক সন্তোষ গুহরায়ের অধীনে পরিদর্শক হিসাবে যোগ দিলেও কিছুদিন পর ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং ফিল্ম পাবলিসিটি ফার্মে যোগ দেন।

চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনে প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ দেবকী বসু পরিচালিত পথিক (১৯৫৩) ছবিতে। এই সংস্থায় কাজের সূত্রে বিভিন্ন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচয়।

কানন দেবীর ফিল্ম ইউনিটে unpaid apprentice হিসাবে পাঁচ বছর কাজ করেন। ঐ ইউনিটে কাজের সময় দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং শচীন মুখোপাধ্যায়-এর সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনজনে মিলে গঠন করেন ‘যাত্রিক গোষ্ঠী’। রূপবাণী, অরুণা, ভারতীর মালিক অমর নান-এর আর্থিক সহযোগিতায় যাত্রিক গোষ্ঠীর পরিচালনায় প্রথম ছবি চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯)। এই ছবিতে উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন নায়ক ও নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি আর্থিক সাফল্য পেয়েছিল।

 

তরুণ মজুমদার । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

এই গোষ্ঠীর পরের ছবি স্মৃতিটুকু থাক (১৯৬০), কাঁচের স্বর্গ (১৯৬২) এবং পলাতক (১৯৬৩)। পলাতক যাত্রিক গোষ্ঠীর পরিচালনায় তৈরি হলেও এটিকে তরুণ মজুমদারের একক ছবি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মানসাটা ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটার্সের মিঃ মানসাটার উদ্যোগে তরুণ মজুমদারের পরিচয় হয় ভি. শাস্তারামের এবং শান্তারামের রাজকমল কলামন্দিরের প্রযোজনায় মনোজ বসুর কাহিনি অবলম্বনে পলাতক ছবি তৈরি হয়।

শান্তারামের অনুরোধ সত্ত্বেও তরুণ মজুমদার একক নামে ছবিটি পরিচালনা করেন নি, ফলে ছবিটিতে চিত্রনাট্য ও পরিচালক হিসাবে যাত্রিক এর নাম পাওয়া যায়।

স্বাধীন পরিচালক হিসাবে প্রথম ছবি আলোর পিপাসা (১৯৬৫)। একক পরিচালনায় ২৯টি কাহিনিচিত্র, তার মধ্যে ২৬টি বাংলা, ২টি হিন্দী, ১টি গুড়িয়া এবং দুটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

তরুণ মজুমদার । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল আলোর পিপাসা (১৯৬৫), একটুকু বাসা (১৯৬৫), বালিকা বধু (১৯৬৭), নিমন্ত্রণ (১৯৭১), কুহেলি (১৯৭১), শ্রীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), ঠগিনী (১৯৭৪), সংসার সীমান্তে (১৯৭৫), গণদেবতা (১৯৭৯), দাদার কীর্তি (১৯৮০) ইত্যাদি।

দীর্ঘদিন নন্দনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি নির্মাণ করেছেন দূরদর্শন ধারাবাহিকও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কুহেলি ছবিটি তিনি পরিচালনা করেছিলেন ‘অভিমন্যু’ ছদ্মনামের আড়ালে তার নিমন্ত্রণ ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত বছরের সেরা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায় ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় শ্রেষ্ঠ নেপথ্য সংগীতশিল্পীর সম্মান লাভ করেন।

সংসার সীমান্তে ১৯৭৫ সনে ইন্ডিয়ান প্যানোরামায় অন্তর্ভুক্ত হয়। গণদেবতা ১৯৭৯-র সেরা ছবির জন্য স্বর্ণকমল লাভ করে ও কাঞ্চন দে বিশ্বাস সেরা শিশুশিল্পী হিসাবে পুরস্কৃত হয়।

 

Google News তরুণ মজুমদার
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

চলচ্চিত্র পঞ্জি —

  • ১৯৬৫ আলোর পিপাসা, একটুকু বাসা,
  • ১৯৬৭ বালিকা বধু:
  • ১৯৬৯ রাহগীর (হিন্দী),
  • ১৯৭১ নিমন্ত্রণ, কুহেলি,
  • ১৯৭৩ শ্রীমান পৃথ্বীরাজ,
  • ১৯৭৪ ফুলেশ্বরী, ঠগিনী:
  • ১৯৭৫ সংসার সীমান্তে
  • ১৯৭৬ বালিকা বধু (হিন্দী),
  • ১৯৭৯ গণদেবতা
  • ১৯৮০ দাদার কীর্তি,
  • ১৯৮১ শহর থেকে দূরে,
  • ১৯৮২ মেঘমুক্তি, খেলার পুতুল,
  • ১৯৮৪ অমরগীতি,
  • ১৯৮৫ ভালবাসা ভালবাসা
  • ১৯৮৬ পথভোলা
  • ১৯৮৮ পরশমণি, আগমন
  • ১৯৯০ আপন আমার আপন,
  • ১৯৯১ পথ ও প্রাসাদ, সজনী গো সজনী,
  • ১৯৯৪ কথা ছিল, অকুয়া কথা (ওড়িয়া)
  • ১৯৯৮ অরণ্যের অধিকার,
  • ২০০১ রাঙামাটির পথ (তথ্যচিত্র),
  • ২০০৩ আলো,
  • ২০০৫ ও আমার দেশের মাটি (তথ্যচিত্র):
  • ২০০৬ ভালোবাসার অনেক নাম
  • ২০০৭ চাদের বাড়ি।

প্রকাশনা—

বৈশাখী, তরুণ মজুমদার সংখ্যা।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment