তিন কন্যা চলচ্চিত্র

তিন কন্যা চলচ্চিত্র তিন কন্যা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র যা ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তি পায়। এটি প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোট গল্প থেকে করা তিনটি চলচ্চিত্রের সংকলন। রবি ঠাকুরের তিনটি গল্পের তিনটি প্রধান চরিত্রই নারী, এই তিন নারী চরিত্রকে বোঝানোর জন্য সিনেমার নাম দেয়া হয়েছে তিন কন্যা। এর মধ্যে প্রথম সিনেমা পোস্টমাস্টার-এ কন্যা থাকে খুব ছোট, ৮-৯ বছরের হবে। দ্বিতীয় সিনেমা মণিহারা-তে কন্যা থাকে বিবাহিতা, ২০-২৫ তো হবেই। আর তৃতীয় ও শেষ সিনেমা সমাপ্তি-তে কন্যা থাকে ষোড়শী।

 

তিন কন্যা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তিন কন্যা চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা—সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স।
  • ছবিটির সহ প্রযোজক – অমিয়নাথ মুখোপাধ্যায়।
  • কাহিনি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • চিত্রনাট্য, সংগীত, প্রযোজনা ও পরিচালনা – সত্যজিৎ রায়।
  • চিত্রগ্রহণ – সৌমেন্দু রায়।
  • শিল্প নির্দেশনা – বংশী চন্দ্র।
  • শব্দগ্রহণ দুর্গাদাস মিত্র, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • সম্পাদনা – দুলাল দত্ত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে তিনটি নায়িকা প্রধান ছোট গল্প (মণিহারা, পোষ্টমাষ্টার এবং সমাপ্তি) অবলম্বনে তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র এক সাথে তিন কন্যা নামে মুক্তি পায়।

 

তিন কন্যা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

মণিহারা

অভিনয়-

কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, কণিকা মজুমদার, কুমার রায়, খগেশ চক্রবর্তী, সুবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোবিন্দ চক্রবর্তী। গীতিকার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কাহিনি—

বড়লোক এবং জমিদার কাকার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসাবে ফণীভূষণ (কালী) মানিকপুরের জমিদারি লাভ করে। নিঃসন্তান ফণীভূষণ মনে করেছিল স্ত্রী মণিমালা (কণিকা) নতুন জায়গায় এসে পুত্র না হওয়ার দুঃখ ভুলতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে মণিমালার গয়নাগাটির উপর তীব্র আসক্তি দেখা গেল। হঠাৎ ফণীভূষণের পাটের গুদামে আগুন লেগে আর্থিক সংকট দেখা দেয়।

মণিমালার ধারণা হল আর্থিক সংকট মেটাতে ফণীভূষণ তার গয়নায় হাত দেবে। টাকা জোগাড় করতে ফণীভূষণ কলকাতায় যায়, মণিমালা তার সব গয়না নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার পথে নৌকাডুবি হয়ে মারা যায়। স্ত্রীর জন্য নতুন একটি হার কিনে ফিরে এসে ফণীভূষণ জানতে পারে স্ত্রীর মৃত্যুর কথা। গয়নার প্রতি তীব্র আসক্তি নিয়ে মণিমালা পরলোক থেকে ফিরে আসে হারের দাবি নিয়ে।

 

তিন কন্যা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

পোষ্টমাষ্টার

অভিনয়-

অনিল চট্টোপাধ্যায়, চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, খগেন পাঠক, গোপাল সেন। গীতিকার, সুরকার এবং কন্ঠসংগীত – কৃষ্ণকালী ভট্টাচার্য।

কাহিনি—

শহরের যুবক নন্দলাল (অনিল) পোষ্টমাষ্টারের চাকরি নিয়ে পাড়াগ্রামে আসে। তার বাড়ির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হয় গ্রামের মেয়ে রতন (চন্দনা)। আগের বদমেজাজি পোষ্টমাষ্টারের বাড়ির কাজও রতন করত, কোনো দিন ভালো ব্যবহার পায় নি।

নন্দলালের ব্যবহারে সে মুগ্ধ, সামান্য সহানুভূতি ও ভদ্র ব্যবহারে নন্দলাল রতনের মন জয় করে। একদিকে অনভ্যস্ত গ্রাম্য জীবন তার উপর ম্যালেরিয়া জ্বরে কাহিল নন্দলাল চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে শহরে ফিরে যায়। যাওয়ার সময় সে বুঝতে পারে অসহায় রতন তাকে কতটা ভালোবেসেছিল। প্রকাশনা ছবির চিত্রনাট্য চলচ্চিত্র পত্রিকায় মার্চ ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

 

Google News তিন কন্যা চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সমাপ্তি

অভিনয়-

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা দাশগুপ্ত, সীতা মুখোপাধ্যায়, গীতা দে, সন্তোষ দত্ত, মিহির চক্রবর্তী, দেবী নিয়োগী।

কাহিনি—

অমূল্য (সৌমিত্র) মায়ের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে না করে মৃন্ময়ীকে (অপর্ণা) বিয়ে করে। ডানপিটে মৃন্ময়ীকে প্রথম দেখাতেই অমুল্য তাকে ভালোবেসেছিল। বিয়ের রাতেই মৃন্ময়ী অমূল্যকে জানায় যে জোর করে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং প্রথম সুযোগেই সে স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মৃন্ময়ীকে জোর করে ফিরিয়ে এনে ঘরে বন্দী করে রাখা হয়।

পরে হতাশ অমূল্য তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে কলকাতায় চলে আসে। কিছুদিনের মধ্যে স্বামীর অনুপস্থিতি মৃন্ময়ীর মানসিক পরিবর্তন ঘটায়, বালিকা থেকে নারীতে উত্তীর্ণ মৃন্ময়ী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসে।

 

google news logo তিন কন্যা চলচ্চিত্র

 

পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির রৌপ্য (সমাপ্তি) ১৯৬১। মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬২তে গোল্ডেন বুমেরাং (সমাপ্তি ও পোষ্টমাষ্টার)। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেলঝেনিক গোল্ডেন লরেল ১৯৬৩।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment