তুলসী লাহিড়ী

তুলসী লাহিড়ীর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের রংপুর জেলার নলডাঙা গ্রামে। পিতা সুরেন্দ্রচন্দ্র লাহিড়ী ভালো কনেট বাজাতে পারতেন। পরিবারে গানবাজনার প্রচলন ছিল।

 

তুলসী লাহিড়ী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তুলসী লাহিড়ী

ছোটবেলায় নাম ছিল হেমে প্রচার, ছাত্রাবস্থায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ বিরোধী পিকেটিং করার অপরায়ে স্কুল থেকে বিতাড়িত হন। এমনকী ব্রিটিশ শাসিত ভারতে তাঁর শিক্ষার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তুলসীর ঠাকুরদা কুচবিহার রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। হেমেন্দ্রচন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে তুলসীদাস করায়, কুচবিহার রাজ স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স, রাজ কলেজ থেকে আই. এ. এবং বি.এ. পাস করেন।

কলকাতার রিপন (সুরেন্দ্রনাথ) কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে বি. এল. পাস করে আলিপুর আদালতে স্বাধীন আইন ব্যবসায়ী হিসাবে যুক্ত হন। ছাত্রাবস্থায় কুচবিহারের রাজগায়িকা তারাবাঈ এর কাছে সংগীত শিক্ষা এবং তাঁর উৎসাহে লক্ষ্ণৌ-এর মরিস কলেজ (সংগীত মহাবিদ্যালয়) থেকে সংগীতে স্নাতক হন।

 

তুলসী লাহিড়ী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

বন্ধু বিমল গুপ্তর অনুরোধে আইনজীবীর পেশা ছেড়ে সাংস্কৃতিক জগতের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। দানীবাবুর চেষ্টায় পেশাদার নাটকের সাথে যুক্ত হন। তৎকালীন আর্ট থিয়েটারের (বর্তমান স্টার) যোগ দেন সংগীত নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে, নিজে বাজাতেন এস্রাজ।

১৯২১ সালে আকাশবাণীতে যুক্ত হন নাট্যকার হিসাবে। তাঁর লেখা ঠিকাদার নাটকটি প্রথম প্রচারিত হয় ১৯২৯ সালে। এই নাটকটি অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয় শ্রী ভারতলক্ষ্মী পিকচার্সের প্রযোজনায়, পরিচালনা করেন প্রফুল্ল রায়, ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪০ সালে।

১৯২৮-১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তাঁর লেখা ও সুর দেওয়া গানের সংখ্যাও প্রচুর। শিল্পী হিসাবে গানগুলি গেয়েছিলেন কমলা ঝরিয়া, মিস মানিকমালা, আশ্চর্যময়ী দাসী, রাজলক্ষ্মী দেবী (বড়), মিস ফস্ট (তারকরালা), সরবালা, রানীবালা, জ্ঞান গোস্বামী, কাজী নজরুল, আঙুরবালা, ইন্দুবার… আব্বাসউদ্দীন প্রভৃতি। প্রথম মঞ্চাভিনয় চিরকুমার সভা নাটকে।

চলচ্চিত্রে প্রথম আবির্ভাব চুপ বা Hush (১৯৩১) ছবিতে। ছবিটি ছিল নির্বাক, পরিচালনা করেন হীরেন বসু।

 

তুলসী লাহিড়ী । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

সবাক যুগের প্রথম অভিনয় ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত কৃষ্ণকান্তের উইল (১৯৩২) ছবিতে পরিচালক ছিলেন জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৩৩ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানির প্রযোজনায় মুক্তি প্রাপ্ত যমুনা পুলিনে ছবির কাহিনিকার ছিলেন তুলসী লাহিড়ী, কাহিনির পাশাপাশি এই ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন।

ছবিটির পরিচালক ছিলেন প্রিয়নাথ গাঙ্গুলী। ১৯৩০ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানি প্রযোজিত সাবিত্রী ছবির সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৩৪ সালে যোগ দেন ভারতলক্ষ্মী পিকচার্সে, কেরানী জীবন, বেজায় রগড়, মায়াকাজল, ফিভার মিক্সচার, হ্যাপি ক্লাব, মণিকাঞ্চন ইত্যাদি প্রহসন রচনা ও পরিচালনা করেন।

স্বল্প দৈর্ঘ্য ও পূর্ণ দৈর্ঘ্য মিলিয়ে ৮০টি ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি গান লিখেছেন তিনটি ছবির সংগীত পরিচালনা করেন চারটি ছবির কাহিনি লিখেছেন সতেরোটি ছবির এবং পরিচালনা করেছেন ১৪টি ছবি।

 

Google News তুলসী লাহিড়ী
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

দেবকী বসু পরিচালিত সোনার সংসার (১৯৩৬) ছবিতে শঙ্করনাথের আপ্তসহায়ক পণ্ডিতের চরিত্রে, বামুনের মেয়ে (১৯৪৯) ছবিতে ভিলেন চরিত্রে, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর ছবিতে জমিদার বিশ্বস্তর রায়ের কর্মচারীর চরিত্রে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। প্রধানত সিরিও কমিক চরিত্রে অভিনয় করলেও অন্যান্য চরিত্রাভিনয়েও দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছেন।

তাঁর লেখা ‘দুঃখীর নাটক অবলম্বনে সর্বহারা (১৯৪৮) ছবিটি তৈরি হয়। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২৩শে জুলাই ১৯৪৮ সালে এবং পরিচালনা করেন সুশীল মজুমদার, আবার প্রাণীর ইমান নাম নিয়ে সুশীল মজুমদারের পরিচালনায় একটি ছবি মুক্তি পায় ৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে। ছবি দুটির নাম ভিন্ন হলেও একই ছবি দুবার মুক্তি পেয়েছিল বলে মনে হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য প্রাণীর ইমান নাটকটি মঞ্চস্থ করেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী। তাঁর লেখা কাহিনি অবলম্বনে শেষ ছবি রিফা (১৯৬০)। এই ছবিটিও পরিচালনা করেন সুশীল মজুমদার।

১৯৪৪ সালে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য মারফত ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাথে যুক্ত হন। কিছুদিন গণনাট্য সংঘের সভাপতি ছিলেন, পরবর্তী কালে শম্ভু মিত্র, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সবিতারত দত্তর সাথে বহুরূপী প্রতিষ্ঠা করেন। বহুরূপী অভিনীত দুটি নাটক পথিক এবং ছেঁড়া তার তাঁর লেখা।

 

google news logo তুলসী লাহিড়ী

 

প্রকাশনা-

১. শব্দ ও শাব্দিক তুলসী লাহিড়ী জন্ম শতবর্ষ সংখ্যা ১ এবং ২ সম্পাদনা করেছেন কৃষ্ণেন্দু দে। ২০ বর্ষ ২য় ও ৪র্থ সংখ্যা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ১৯৯৫।

২. তুলসী লাহিড়ী। বিজিত কুমার দত্ত। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অকাদেমি, ২০০৫।

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯৩১ চুপ
  • ১৯৩২ কৃষ্ণকান্তের উইল
  • ১৯০৩ যমুনা পুলিনে শ্রী- গৌরাঙ্গ,
  • ১৯৩৪ মণিকাঞ্চন, কেরানীর জীবন:
  • ১৯৩৫ দিকদারী, বিরহ
  • ১৯৩৬ একটি কথা, হ্যাপি ক্লাব, বেজায় রগড়, বাঙ্গালী, মন্দ কি সোনার সংসার:
  • ১৯৩৭ মায়াকাজল:
  • ১৯৩৮ হাল বাংলা, অভিনয়
  • ১৯৩৯ হারজিৎ, পরশমণি, রিফা
  • ১৯৪০ সাবধান, ফিতার মিক্সচার, অমরগীতি, ঠিকাদার, রাজকুমারের নির্বাসন,
  • ১৯৪১ ভালোবাসা, বিজয়িনী, অবতার,
  • ১৯৪২ জীবন সঙ্গিনী,
  • ১৯৪৪ বিরিঞ্চিবাবা, মাটির ঘর
  • ১৯৪৫ পথ বেঁধে দিল, গৃহলক্ষ্মী,
  • ১৯৪৬ মৌচাকে ঢিল, এই তো জীবন, নতুন বৌ, নিবেদিতা, তুমি আর আমি।
  • ১৯৪৭ পরভৃতিকা, চোরাবালি, রামপ্রসাদ
  • ১৯৪৮ স্যার শঙ্করনাথ, বঞ্চিতা, সর্বহারা,
  • ১৯৪৯ বামুনের মেয়ে
  • ১৯৫০ দিগ্‌ভ্রান্ত, মহাসম্পদ
  • ১৯৫১ গাঁয়ের মেয়ে।
  • ১৯৫২ রাত্রির তপস্যা, মন্দির, ভুলের শেষে
  • ১৯৫৩ মহারাজা নন্দকুমার, পথিক:
  • ১৯৫৪ জাগৃহি, মা ও ছেলে, দুঃখীর ইমান, বাঙলার নারী, সতী, ষোড়শী, রিফিউজি
  • ১৯৫৫ ভালবাসা, ঝড়ের পরে, জয় মা কালী বোর্ডিং, গোধূলি,
  • ১৯৫৬ মামলার ফল, একদিন রাত্রে, রাজপথ, শুভলগ্ন, চোর, নবজন্ম
  • ১৯৫৭ বড়দিদি, উচ্চা, আদর্শ হিন্দু হোটেল, বাকসিদ্ধ, মাধবীর জন্য, চন্দ্রনাথ;
  • ১৯৫৮ মানময়ী গার্লস স্কুল, পরশপাথর, ডেলি প্যাসেঞ্জার, জলসাঘর:
  • ১৯৫৯ সাগর সঙ্গমে, মৃতের মর্ত্যে আগমন, ক্ষণিকের অতিথি
  • ১৯৬০ গঙ্গা।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment