দহন চলচ্চিত্র

দহন চলচ্চিত্রটি ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। এই চলচ্চিত্রটি সুচিত্রা ভট্টাচার্য রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনি নারী অধিকার, যৌন নিগ্রহ এবং সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে এক শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে। এতে অভিনয় করেছেন শকুন্তলা বড়ুয়া, অভিষেক চ্যাটার্জী, ইন্দ্রানী হালদার, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুচিত্রা মিত্র এবং আরও অনেক।

 

দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)
দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)

 

দহন চলচ্চিত্র

চলচ্চিত্রের কাহিনি:

চলচ্চিত্রের কাহিনি revolves around রমিতা (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) এবং পলাশ (অভিষেক চ্যাটার্জী) নামক এক নবদম্পতি, যাদের একদিন রাস্তায় আক্রান্ত করা হয়। গুন্ডারা রমিতাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করার চেষ্টা করে, কিন্তু পাশেই থাকা লোকজন বা পুলিশ কেউ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। এই ঘটনা দেখে স্কুল শিক্ষিকা ঝিনুক (ইন্দ্রানী হালদার) ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান এবং পুলিশকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তবে, আক্রমণকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ঝিনুকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ রমিতা এবং পলাশ মামলাটি থানায় নিতে চায় না এবং শেষ পর্যন্ত তারা মামলা তুলে নিতে চায়।

এটি সমাজের এক গভীর সমস্যাকে সামনে তুলে ধরেছে, যেখানে নারীকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হওয়ার পরও তার আত্মমর্যাদার প্রশ্নে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধা এবং অভ্যন্তরীণ চাপের বিরুদ্ধে তাকে লড়াই করতে হয়। একদিকে পুরুষশাসিত সমাজের শাসন, অন্যদিকে নারীর নিজের দায়িত্ব—এই দ্বিধার মধ্যে ঝিনুকের চরিত্রটির আত্মবিশ্বাসী সংগ্রাম চলচ্চিত্রে বিশেষভাবে উঠে এসেছে।

 

দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)
দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)

 

চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রগুলি:

চরিত্রঅভিনেতা/অভিনেত্রী
রমিতাঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
পলাশঅভিষেক চ্যাটার্জী
ঝিনুকইন্দ্রানী হালদার
সঞ্জীবসঞ্জীব দাশগুপ্ত
অদিতিঅদিতি চট্টোপাধ্যায়
সুচিত্রাসুচিত্রা মিত্র

 

চলচ্চিত্রের অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্যরা:

  • প্রযোজক: বিজয় আগরওয়াল, কল্পনা আগরওয়াল।

  • কাহিনি: সুচিত্রা ভট্টাচার্য।

  • চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ঋতুপর্ণ ঘোষ।

  • চিত্রগ্রহণ: হরি নায়ার।

  • সংগীত পরিচালনা: দেবজ্যোতি মিশ্র, পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

  • শব্দগ্রহণ: চিন্ময় নাথ।

  • শিল্প নির্দেশনা: সূর্য চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়।

  • সম্পাদনা: অর্থকমল মিত্র।

 

দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)
দহন চলচ্চিত্র (১৯৯৭)

 

ছবির মূল থিম:

দহন একটি দুর্দান্ত সামাজিক নাটক যা নারীর সম্মান ও তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। ছবিতে প্রমাণিত হয় যে, কতটুকু ক্ষমতাবান একজন নারী তার সমাজের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। সিনেমার সবচেয়ে বড় বার্তা হলো পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারী তার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচণ্ড সংগ্রাম চালায়, এবং কখনও কখনও, তাকে তার আত্মসম্মান বজায় রাখার জন্য তার সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধন ভাঙতে হয়।

চলচ্চিত্রটি নারীর সমাজে অবস্থান, যৌন নিগ্রহের ফলে তার মানসিক অবস্থা এবং তার অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে। রমিতার চরিত্রের মধ্যে সেই সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস এবং সাহস ফুটে উঠেছে, যা দর্শকদের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।

পুরস্কার:

দহন চলচ্চিত্রটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল এবং বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়। ১৯৯৮ সালে, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ইন্দ্রাণী হালদার যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া, ঋতুপর্ণ ঘোষ সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান, যা চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য এবং সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরার সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয়।

সমাজের প্রতি বার্তা:

এটি একটি সমাজের মর্মস্পর্শী চিত্র, যেখানে নারীর আত্মমর্যাদা এবং তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প বলা হয়েছে। ছবির মাধ্যমে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীকে সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি দর্শকদের মনে এক প্রশ্ন জাগায়—যদি একজন নারী তার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা না করতে পারে, তাহলে তা সমাজের উন্নতি কতটুকু সম্ভব?

দহন চলচ্চিত্রটি শুধু একটি গল্প নয়, এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা। এটি দেখানো হয়েছে কিভাবে নারীরা সমাজে নিজেদের অবস্থান এবং সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তা সমাজের জন্য এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

 

 

Google News দহন চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

দহন চলচ্চিত্রটি একটি ক্লাসিক সামাজিক চলচ্চিত্র হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। এটি শুধুমাত্র নারীর সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্ন উত্থাপন করেনি, বরং সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদও করেছে। ছবিটি দর্শকদের মাঝে এক নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছে এবং বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment