নগর দর্পণে চলচ্চিত্রটি একটি জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেন যাত্রিক। এই চলচ্চিত্রটি আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর গল্প অবলম্বনে নির্মিত। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭৫ সালে এম এস প্রোডাকশান্স ব্যানারে মুক্তি পেয়েছিল এবং এই চলচ্চিত্রটি সংগীত পরিচালনা করেছিলেন নচিকেতা ঘোষ। এই চলচ্চিত্রটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া চৌধুরী, ছায়া দেবী, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়।
গল্পটি একজন উদীয়মান লেখককে নিয়ে, যে তার নিজের চিন্তাধারার সাথে আশেপাশে লোকেদের চিন্তাধারার মিল খুঁজে পান না। সে এক অন্য জগতের ঘূর্ণিতে আটকা পড়ে যায়।একটু একটু করে সে তার মন হারাতে শুরু করে এবং নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টায় পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করে। সে এমন এক অবস্থায় যায় যেখান থেকে কেউ তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
নগর দর্পণে চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা — শ্রী গিরিধারী পিকচার্স।
- কাহিনি—আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
- চিত্রনাট্য- পার্থপ্রতিম চৌধুরী, যাত্রিক
- পরিচালনা- যাত্রিক।
- সংগীত পরিচালনা- নচিকেতা ঘোষ।
- চিত্রগ্রহণ – অনিল গুপ্ত, জ্যোতি লাহা।
- শিল্প নির্দেশনা— সুবোধ দাস।
- শব্দগ্রহণ – অনিল দাশগুপ্ত, সোমেন চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন চট্টোপাধ্যায়।
- সম্পাদনা – অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়।
- গীতিকার – অতুলপ্রসাদ সেন।
- নেপথ্য সংগীত-সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
নগর দর্পণে চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
উত্তম কুমার, কাবেরী বসু, সুপ্রিয়া দেবী, নন্দিতা বসু, ছায়া দেবী, দিলীপ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক বসু, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত সেনশর্মা, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরেন চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম চৌধুরী, শিশির মিত্র, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, গীতা প্রধান, তন্দ্রা পাল, প্রমীলা ত্রিবেদী।
নগর দর্পণে চলচ্চিত্রের কাহিনি—
অনুপম (উত্তম) লেখাপড়া শিখে চাকরি পায়, দেশ থেকে মা (ছায়া) এবং ছোট দুই ভাই অজিতেশ (দিলীপ) এবং অমিয়কে (কৌশিক) নিজের কাছে নিয়ে আসে। চাকরির সাথে অনুপম লেখালেখিও করত। ক্রমশই লেখক হিসাবে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। নিরিবিলিতে লেখার তাগিদে অনুপম পুরী যায়, ঘটনাক্রমে পুরীতে তার সাথে পরিচয় হয় শ্রীলেখার (কাবেরী)।
মায়ের অনুমতি নিয়ে অনুপম শ্রীলেখাকে বিয়ে করে। অনুপম সৎ স্বাভাবিক একজন মানুষ। ক্রমবর্ধমান সামাজিক অবক্ষয় তাকে ক্রমশ ক্ষিপ্ত করে তোলে। চাকরিক্ষেত্রে ওপরওয়ালার অন্যায় সে বরদাস্ত করতে পারে নি, চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়।
অজিতেশ পুলিসে চাকরি করে, নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে শুক্লাকে (নন্দিতা), কিন্তু অজিতেশ এবং শুক্লার দাম্পত্য নিয়েও অনুপম হতাশ। ছোট ভাই অমিয়কে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত পাঠিয়েছিল, সেও অকৃতকার্য হয়ে ফিরে আসে। অমিয় ও শুক্লার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে।
অনুপমের স্ত্রী শ্রীলেখাও এখন চাকরি করে। বাড়ির ও সমাজের যে সব বিভিন্ন ঘটনা অনুপমকে ক্ষিপ্ত করে তুলছে, সেগুলি সম্পর্কে তার স্ত্রীর উপেক্ষা, এমনকী শুক্লার সাথে অমিয়র সম্পর্ক মেনে নেওয়ার প্রবণতা সে সহ্য করতে পারে না। সকলেই মনে করে সমসাময়িক ঘটনাগুলিতে অনুপম প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তার মাথায় গোলমাল আছে।
অজিতেশ এখন পুলিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, দাদার এই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত এবং নিজের চাকরির ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে বিবেচনা করে দাদাকে মানসিক রুগিদের হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
শ্রীলেখা নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে হাসপাতালে যায়, কিন্তু স্ত্রী এবং ভাইএর এই আচরণ অনুপম সহ্য করতে পারে নি, সে এখন সত্যিই মানসিক রুগিতে পরিণত হয়েছে। এই ছবিতে উত্তমকুমারের অসাধারণ অভিনয় ছবিটিকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।