নুসরাত ইমরোজ তিশা

নুসরাত ইমরোজ তিশা বাংলাদেশের বিনোদন জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তার অভিনয় ও মডেলিং দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন। তার জীবন ও কর্মযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।​

 

নুসরাত ইমরোজ তিশা

 

তিশার জন্ম প্রাথমিক জীবন

নুসরাত ইমরোজ তিশার জন্ম ১৯৮২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে। তবে তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শৈশব থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে গান বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন, যা তার মিডিয়া জগতে প্রবেশের পথ সুগম করে।​

 

তিশার মিডিয়ায় প্রবেশ ক্যারিয়ারের শুরু:

গানের মাধ্যমে মিডিয়ায় প্রবেশ করলেও, তিশা অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৯৭ সালে অনন্ত হীরার রচনা ও আহসান হাবীবের প্রযোজনায় ‘সাতপেড়ে কাব্য’ নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে ‘সাত প্রহরের কাব্য’ নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশন পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। ২০০৩ সাল থেকে তিনি অভিনয় ও মডেলিংয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি মেরিল, কোকা-কোলা, সিটিসেল এবং কেয়া কসমেটিকসের মতো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন।

 

তিশার চলচ্চিত্রে অভিষেক সাফল্য:

তিশার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ২০০৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ছবির মাধ্যমে, যেখানে তার অভিনয় দক্ষতা প্রশংসিত হয়। এরপর তিনি ‘টেলিভিশন’ (২০১২), ‘অস্তিত্ব’ (২০১৬), ‘ডুব’ (২০১৭) এবং ‘হালদা’ (২০১৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীর চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

 

 

Google News নুসরাত ইমরোজ তিশা
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

তিশার উল্লেখযোগ্য কাজ অনন্য ভূমিকা:

তিশা তার অভিনীত বিভিন্ন চরিত্রে বৈচিত্র্য প্রদর্শন করেছেন। ‘ডুব’ চলচ্চিত্রে তিনি একজন স্বনামধন্য পরিচালকের কন্যার চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে তার বাবার চরিত্রে ছিলেন ইরফান খান। ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে হাসু চরিত্রে তার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। টেলিভিশন নাটকে তিনি ‘নুরুল হুদা একদা ভালবেসেছিল’, ‘অরণ্যে জ্যোৎস্না’, ‘লাইফ’, ‘পূর্ণ দৈর্ঘ্য’, ‘এলো মেলো মন’, ‘মুনিরা মফস্বলে’, ‘ঈদের টিকেট’, ‘আরমান ভাই’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেছেন।​

 

নুসরাত ইমরোজ তিশা

 

তিশার ব্যক্তিগত জীবন:

২০১০ সালের ১৬ জুলাই তিশা বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ইলহাম নুসরাত ফারুকী নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে。 ২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তার অ্যাপেনডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন, তবে ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ভক্তদের প্রতারণা রোধে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন, যা পপকর্ন ডিজিটাল দ্বারা পরিচালিত হয়।

 

তিশার পুরস্কার সম্মাননা:

  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: ‘অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০১৬)
  • মেরিলপ্রথম আলো পুরস্কার: ১০টি পুরস্কার অর্জন করেছেন।​
  • নতুন কুঁড়ি জাতীয় পুরস্কার: গান বিভাগে প্রথম স্থান (১৯৯৫)
  • অন্যান্য পুরস্কার: CZFV পুরস্কার (২০০৪-২০০৫), চ্যানেল আই-এর দুবাই পুরস্কার, এনটিভি-এর লন্ডন পুরস্কার।​

 

তিশা সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য:

তিশা চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করেন। তার প্রিয় চলচ্চিত্র হলো ন্যাটালি পোর্টম্যান অভিনীত ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ এবং জুলিয়ান মুরের ‘স্টিল অ্যালিস’। তিনি বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন এবং অবসর সময়ে কার্টুন দেখতে ও গল্প করতে পছন্দ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ও অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী মুঠোফোন সেবাদানকারী কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শুভেচ্ছাদূত হন এবং আটটি বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।

নুসরাত ইমরোজ তিশা তার প্রতিভা, পরিশ্রম ও নিবেদন দিয়ে বাংলাদেশের বিনোদন জগতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। তার অভিনয় দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছেন, যা তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment