বিশ্বজুড়ে তারকাদের আনোগোনা রাজনীতির ময়দানে। ব্যাতিক্রম নয় ভারতেও। বলিউড থেকে তো কম তারকা রাজনীতিতে আসেননি। নারগিস, সুনীল দত্ত থেকে কিরণ খের, জয়া বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী– তালিকাটি বেশ লম্বা। এর পরেও রয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম খ্য়াতিসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী-প্রযোজক-কলাকুশলীরা। সদ্যসমাপ্ত ১৭তম লোকসভা (ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ) নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এক ঝাঁক তারকার। যাদে মধ্যে জয়ীদের দেখা যাবে নয়াদিল্লির সংসদ মার্গের সংসদ ভবনে। আর পরাজিতের মধ্যে কেও থেকে যাবে রাজনীতির ময়দানে কেও থুক্কু বিদায় জানাবে রাজনীতিকে।
শত্রুঘ্ন সিনহা
অভিনয়ের পাট চুকিয়ে অনেক আগেই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। দুই মেয়াদে লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচিতও হয়েছেন বিজেপি থেকে। রাজ্যসভা দুইবার সংসদ সদস্য ছাড়াও মন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে। তবে এবার বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিন্ন করে কংগ্রেসের টিকিটে পাটনা সাহিব থেকে নির্বাচন করা পরাজিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের থেকে ২,৮৪,৬৫৭ ভোটে পরাজিত। আরেকদিকে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ তে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী এবং সোনাক্ষী সিনহার মা পুনম সিনহাও হেরে যান।
হেমা মালিনী
ধর্মেন্দ্রর স্ত্রী এবং সানি দেওলের সৎমা বলিউডের ড্রিম গার্ল হেমা মালিনী বিজেপির হয়ে জিতেছেন উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকে। শতকরা ৬০ দশমিক ৯ ভাগ ভোটার তাঁকে ভোট দিয়েছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি)-র কুয়াঁর নরেন্দ্রসিং-এর থেকে ২,৯৩,৪৭১ ভোটে তিনি বিজয়ী। ভোটের মাঠে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন চমক দেখিয়েছেন হেমা মালিনী। একেক কেন্দ্রে একেক রকম চমক। কোথাও হেলিকপ্টারে আবার কোথাও কাঁস্তে হাতে গমক্ষেতে। এসব চমকের উদ্দেশ্য একটিই- ভোটাররা যেন বোঝে হেমা তাদেরই লোক। ভোটের এ মোহিনী প্রচারে রীতিমতো ট্রাক্টরে চালকের আসনেও উঠে বসেছিলেন। ২০১৪ সালেও এ আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
সানি দেওয়ল
অভিনয়ের মত রাজনীতিতেও বাবা ধরম সিং দেওল (ধর্মেন্দ্র)র পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিতে আগমন সানি দেওলের। বিজেপির টিকেটে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর সংসদ হয়ে যাবেন লোকসভায়। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান ও সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া সাংসদ সুনীল জাখরের থেকে ৮২,৪৫৯ ভোটে তিনি বিজয়ী।
গুরুদাসপুর আসনটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এ আসন চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা বিনোদ খান্না। তার মৃত্যুর পরে জল্পনা হয়েছিল যে, তার স্ত্রী কবিতা খান্নাকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। কিন্তু মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সানি দেওলকে।
সানির প্রচারণায় কোন কমতি রাখেনি দেওয়ল পরিবার। সানির নির্বাচনী প্রচারে বাবা ধর্মেন্দ্র ও ভাই ববিকে দেখা গেছে। ধর্মেন্দ্র ছেলের হয়ে অনেক সমাবেশ ছাড়াও প্রচুর সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। ছেলের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব ছিলেন ধর্মেন্দ্র। মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সানির পাশে ববিকে দেখা গেছে।
২০০৪ সালে বিকানের সিট থেকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ধর্মেন্দ্র। নির্বাচিত হয়ে লোকসভার সদস্য হিসেবে ২০০৯ পর্যন্ত কাজ করেন। কিন্তু সাংসদ হিসেবে তাঁকে বেশ অসফলই বলা যায়।
ঊর্মিলা মাতন্ডকর
বলিউড অভিনেত্রী ঊর্মিলা মাতন্ডকরের জাদু রাজনীতির ময়দানে কাজ করেনি। ‘রাঙ্গিলা’ ঊর্মিলা রাজনীতির আঙিনায় পা রাখামাত্রই বিতর্ক তাকে ঘিরে ধরে। মহারাষ্ট্রের উত্তর মুম্বাই আসন থেকে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন লড়ে পারিজিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির গোপাল শেট্টি-র থেকে ৪,৬৫,২৪৭ ভোটে তিনি পরাজিত হন।
মুনমুন সেন
পশ্চামবঙ্গের বাঁকুড়া থেকে এবার আসানসোলে পা রেখেছিলেন তিনি। গতবার লোকসভা নির্বাচনে ৯ বারের সংসদ সিপিআই(এম)-র বাসুদেব আচারিয়ার মতো বাঘা প্রতিদ্বন্দীকে ভোটের ময়দানে হারিয়ে সংসদে পা রেখেছিলেন মুনমুন সেন। সুচিত্রা সেন কন্যাকে এবার বাঁকুড়ার বদলে আসানসোলে টিকিট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আসানসোলে মমতার ‘কৌশল’ কাজে এল না। শেষ পর্যন্ত ‘বাচ্চা ছেলে’র কাছে হেরে যেতে হচ্ছে সুচিত্রা কন্যা মুনমুনকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, এ আসনে বিপুল ভোটে হেরেছে মুনমুন। আর যা দেখে ভীষণই দুঃখ পেয়েছেন টলিউডের অভিনেত্রী মুনমুন সেন। অভিমানী মুনমুন সেনে গণমাধ্যমকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন – “প্রণব মুখোপাধ্যায়ও আমাকে ডেকেছিলেন। আমি রাজনীতির লোক নই। তবে রাজনীতিতে এসেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। এর পরে আমায় ডাকলে আর পাবে না।”
শতাব্দী রায়
পশ্চামবঙ্গের বীরভূমের মাটিতে বিজেপির টক্কর দিয়ে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী শতাব্দী রায়ের হ্যাটট্রিক। এই আসন থেকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ২০০৯ সাল থেকে সংসদ সদস্য তিনি।
নুসরাত জাহান
পশ্চামবঙ্গের বসিরহাট আসনে ৩,১১,৮৩৫ বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। যা পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যে শাসক দলের জয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আসনটি আগে থেকেই তৃণমূলের হাতে ছিল। এবারের নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু এতো ভোটে জিতবেন তা হয়তো ভাবেনি অভিনেত্রী নিজেও।
টলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের একজন নুসরাতকে প্রার্থী ঘোষণার পরেই তাকে নিয়ে বিরোধী পক্ষ ব্যাপক অপপ্রচারে নামে। তাকে নিয়ে অশ্লীল ছবি বানিয়ে তা ইন্টারনেটে ট্রল করেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে নতুন আসা এই অভিনেত্রী বিজয়ী হন।
মিমি চক্রবর্তী
‘বোঝে না সে বোঝে না’ তারকা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী পশ্চামবঙ্গের যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী অনুপম হাজরা এক সময় তৃণমূলে ছিলে, কিছুদিন আগেই বহিষ্কৃত হওয়ার পর বিজেপিতে যোগ দেন। প্রায় সোয়া দুই লাখ ভোট বেশি পেয়ে লোকসভা যাচ্ছেন তিনি। টলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের একজন মিমি। মমতা ব্যানার্জীর আহ্বানেই নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতিতে। আর প্রথমবার নির্বাচনে নেমেই রীতিমত বাজিমাত করলেন এই নায়িকা।
দেব (দীপক অধিকারী)
মোদী ঝড়ের মাঝেও দ্বিতীয় বার জয়ের ধারা বজায় রেখেছেন টালিগঞ্জের শীর্ষ নায়ক দেব (দীপক অধিকারী)। ১ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পশ্চামবঙ্গের ঘাটাল কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ৭ লাখের বেশি। ৪৮ দশমিক ৪৫ শতাংম ভোট পেয়েছেন ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। প্রসঙ্গত, গত লোকসভায় ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন টালিউডের এই সুপারস্টার।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপি’র ভারতী ঘোষ। এই নির্বচনে জয়ী হতে ভারতী ঘোষ জিততে বহু নাটক করেছিলেন। একসময়ের দাপুটে আইপিএস অফিসার এখন পরাজিত সৈনিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা
বাবুল সুপ্রিয়
পশ্চামবঙ্গের আসানসোল কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ হয়েছেন বিজেপির প্রার্থী গায়ক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ওই কেন্দ্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কন্যা ও রাইমা আর রিয়া সেনের মা মুনমুন সেন।
স্মৃতি ইরানি
উত্তর প্রদেশের আমেঠির ভূমিকন্যা ছিলেন না স্মৃতি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, বাইরে থেকে আসা একজন সাধারণ প্রার্থী হিসাবে হাইভোল্টেজ আমেঠিতে ২০১৪ সালে লড়াইয়ে নেমেছিলেন এই বিজেপি প্রার্থী। নামের সঙ্গে শুধু জুড়েছিল ‘অভিনেত্রী’ শব্দটি। কারণ তখনও সেভাবে বিজেপির দাপুটে ‘নেত্রী’ হয়ে উঠতে পারেননি স্মৃতি। আর উল্টো দিকে ছিল দেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। বলা চলে, লড়াইটা ছিল, গান্ধী পরিবারের দাপটের সঙ্গে এক সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা মহিলার।
২০১৪ সালে আমেঠি তাঁকে ১ লাখ ভোটের পরাজয় ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে হার মানেননি এই আত্মবিশ্বাসী বিজেপি কর্মী। কার্যত হারের দিন থেকে নিজের জয়ের গেমপ্ল্যান একটু একটু করে ছকে ফেলেছিলেন স্মৃতি ইরানি। ফলাফল রাহুল গান্ধীতে পরাজিত করে লোকসভায় যাচ্ছেন ছোট পর্দার এই তারকা।
জয়াপ্রদা
বলিউডের নামজাদা অভিনেত্রী জয়াপ্রদা দ্বিতীয়বার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছেন। উত্তর প্রদেশের রামপুর কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে নির্বাচন লড়ে হেরেছেন সমাজবাদী পার্টি এবং মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী আজম খানের কাছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ১,০৯,৯৯৭ ভোট কম পেয়েছিলেন তিনি।
রাজ বব্বর
মোদী ঝড়ে পর্যুদস্ত হলেও মোটের উপর পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশের সব কেন্দ্রেই বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অখিলেশ-মায়াবতীর ‘মহাগঠবন্ধন’। ব্যতিক্রম ফতেপুর সিক্রি। মহাজোটের বিএসপি প্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছেন কংগ্রেসের চিত্রতারকা-নেতা রাজ বব্বর। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির বহিষ্কৃত নেতা অমর সিং কংগ্রেসের সমর্থনে লড়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রাজকুমার চহারের থেকে ৪৯৫০৬৫ ভোটে রাজ বব্বর পরাজিত।
কিরণ খের
পাঞ্জাবের চণ্ডীগড় থেকে বড় পর্দার জনপ্রিয় ‘মা’ বিজেপির হয়ে জিতেছেন শতকরা ৫০ দশমিক ৬ ভাগ ভোট পেয়ে। বলিউডের দাপুটে অভিনেতা অনুপম খেরের স্ত্রী অভিনেত্রী কিরণ খেরের বিপক্ষে ছিলেন কংগ্রেসের পবন কুমার। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ৪৬,৯৭০ ভোটে বিজয়ী তিনি।
রবি কিষণ
উত্তরপ্রদেশের গোরাকপুর থেকে বিজেপির হয়ে জয় পেয়েছেন ছোট পর্দার ও বড় পর্দায় জনপ্রিয় মুখ রবি কিষণ। প্রায় তিন দশক ধরে বিহারের গোরখপুরের ওপর বিজেপির আধিপত্য চলে আসছে। উপনির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির (সপা) প্রবীণ রামভুয়াল নিষাদ এ আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নেন। এবার এই আসন ফিরে পেতে বিজেপি ভোজপুরি সিনেমার অভিনেতা রবি কিষণকে প্রার্থী করে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রামভুয়াল নিশাদের থেকে ৩,০১,৬৬৪ ভোটে বিজয়ী রবি কিষণ।
মনোজ তিওয়ারি
দিল্লির উত্তর–পূর্বাঞ্চল থেকে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ হয়েছেন ভোজপুরি অভিনেতা মনোজ তিওয়ারি। ২০০৯ সালে সমাজবাদী পার্টির হয়ে নির্বাচন লড়েছিলেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি বিজিপির প্রার্থী হয়েছিলেন। দিল্লির উত্তর-পূর্ব কেন্দ্র থেকে মনোজ আপ পার্টির প্রার্থী আনন্দ কুমারকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন। এবার কংগ্রেস নেত্রী দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের থেকে ৩,৬৬,১০২ ভোটে বিজয়ী।

হ্যান্স রাজ হ্যান্স
দিল্লির উত্তর–পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিজেপি থেকে হয়ে জয়ী হয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গিত তারকা হংস রাজ হংস। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আম আদমি পার্টির গগণ সিং রঙ্গার থেকে ৫,৫৩,৮৯৭ ভোটে তিনি বিজয়ী।
প্রকাশ রাজ
দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা প্রকাশ রাজ ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল আসন থেকে নির্দলীয় ভাবে নির্বচন করে ২৮,৯০৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এ কেন্দ্রে বিজয়ী বিজেপির পি সি মোহন। ভোটের ফলাফলের পরে অভিনয় থেকে রাজনীতিতে পা রাখা প্রকাশ রাজ টুইট করে লেখেন, ‘আমার গালে সপাটে চড় … আরও ট্রল, বেইজ্জতি আর গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। তবুও আমি আমার লক্ষ্যে অবিচল থাকব। সেকুলার ভারতের জন্য আমার লড়াই জারি থাকবে। এখন এক কঠিন সফর শুরু হয়েছে। যারা এই সফরে আমার সাথে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। জয় হিন্দ।”
লকেট চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি আসন থেকে বিজেপির হয়ে জয়ী হয়েছেন বাংলাচলচ্চিত্রের অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এই হুগলি জেলার একটি থানা হলো সিঙ্গুর। ২০০৭ সালে সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর জমি দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার সিঙ্গুরে টাটার সস্তায় ন্যানো মোটরগাড়ির কারখানা গড়ার জন্য। সেদিন বামফ্রন্ট সরকারের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পেরে মমতা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শুরু করেছিলেন টাটার জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলনও চরমে পৌঁছেছিল। এই আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো গাড়ির কারখানা গুজরাটের সানন্দে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এই আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন। এরপর এই অধিগৃহীত জমির বিরুদ্ধে ওঠা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মমতা চাষিদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সিঙ্গুরের জমি। এরপর ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে মমতা ফের জেতেন। ক্ষমতায় আসেন। সেদিন এই সিঙ্গুরে হেরে যায় বিজেপিসহ বাম দল। এবার লোকসভা নির্বাচনের পর ওলটপালট হয়ে গেল সিঙ্গুর। ১০ হাজার ৪২৯ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জেতেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ফল ঘোষণার পর লকেট চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা দেন সিঙ্গুরে ফের টাটার গাড়ি কারখানা নির্মাণের। এরপরই সিঙ্গুরে টাটাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মিছিল করেন এলাকাবাসী। দাবি ওঠে সিঙ্গুরের সেই জমিতে ফের গড়া হোক টাটার শিল্প।