শেকসপিয়রের নাটকে চরিত্র গঠনের কৌশল

উইলিয়াম শেকসপিয়র (১৫৬৪–১৬১৬) শুধু ইংরেজি সাহিত্যের নয়, বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসেও এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর নাটকগুলো কেবল চমৎকার কাহিনি, ছন্দময় সংলাপ বা কাব্যিক রূপকারণের জন্য অমর হয়ে ওঠেনি; বরং মানুষের মনের জটিলতা, আবেগ ও সামাজিক বাস্তবতাকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করার জন্য আজও শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। শেকসপিয়র এমন সব চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, যাদের ভেতরে আমরা দেখতে পাই জীবনের অনিবার্য দ্বন্দ্ব—বিশ্বাস ও সন্দেহ, প্রেম ও হিংসা, আশা ও হতাশা, ক্ষমতা ও পতন।

তাঁর চরিত্রগুলো কখনো রাজা, কখনো সেনাপতি, কখনো সাধারণ ভদ্রজন বা ভাঁড়; কিন্তু প্রতিটি চরিত্রের ভেতরে এমন মানবিক সত্তা ফুটে ওঠে যা সর্বযুগের দর্শকের কাছে আপন হয়ে ওঠে। হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, ওথেলো, লিয়ার কিংবা জুলিয়েট—সবাই তাদের নাটকীয় ভূমিকাকে ছাড়িয়ে মানবিক জটিলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শেকসপিয়রের নাটকে চরিত্র গঠনের কৌশল

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

 

১. বাস্তবতা ও মানবিকতার সংমিশ্রণ

শেকসপিয়রের নাটকের অন্যতম প্রধান শক্তি হলো চরিত্রের মানবিক বাস্তবতা।

  • আবেগের সর্বজনীনতা: তাঁর চরিত্ররা কেবল রাজার আসনে বসা মহারথী নন; তারা একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মতো আনন্দ, দুঃখ, রাগ, প্রেম, হিংসা বা ভয় অনুভব করে। ফলে চরিত্রগুলো নাটকের গণ্ডি পেরিয়ে দর্শকের জীবনের অংশ হয়ে যায়।

  • হ্যামলেটের দ্বিধা: ডেনমার্কের রাজপুত্র হয়েও হ্যামলেট আমাদের চোখে কেবল এক সাধারণ মানুষ—যিনি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবেন কি নেবেন না, সেই অনিশ্চয়তায় পীড়িত। তাঁর মনোবেদনা আমাদের নিজের মানসিক দ্বিধাগ্রস্ততার প্রতিফলন।

  • জুলিয়েটের প্রেম: জুলিয়েটের ভালোবাসা কেবল এক রোমান্টিক কাহিনি নয়; এটি সেই আবেগ যা তরুণ-তরুণীর জীবনে সর্বদা প্রাসঙ্গিক।

এখানেই শেকসপিয়রের অসাধারণত্ব—তিনি চরিত্রগুলোকে ঐতিহাসিক বা সামাজিক পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং তাঁদেরকে এমন মানবিক রূপ দিয়েছেন, যা সর্বকালের দর্শক-শ্রোতার কাছে জীবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য।

 

২. মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা

শেকসপিয়রের চরিত্রগুলো আমাদের সামনে কেবল ঘটনাপ্রবাহের অংশ হিসেবে আসে না, বরং মানুষের মনের লুকোনো স্তরগুলো উন্মোচন করে।

  • ম্যাকবেথ: তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রথমে তাকে সিংহাসনের পথে ঠেলে দিলেও, পরবর্তীতে ভয় ও অপরাধবোধ তাকে ভেঙে দেয়। এই অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন তাঁকে একদিকে ভীতু, অন্যদিকে নিষ্ঠুর করে তোলে।

  • ওথেলো: একজন মহান সেনাপতি হয়েও তিনি নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও ঈর্ষার ফাঁদে আটকে পড়েন। ইয়ারোর কূটচাল তাঁর মনে যে সন্দেহের বীজ বপন করে, সেটি একসময় আত্মবিনাশে রূপ নেয়।

  • কিং লিয়ার: পিতৃস্নেহ ও অহংকারের দ্বন্দ্বে তিনি নিজেই নিজের পতনের পথ তৈরি করেন। তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত শুধু রাজ্য হারানোর কারণ হয় না, বরং তাঁকে ভেতর থেকে ভেঙে চুরমার করে দেয়।

শেকসপিয়রের এই মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা চরিত্রগুলোকে সাধারণ নাটকীয় পুতুল থেকে ভিন্ন করে তোলে। দর্শক বুঝতে পারে—এরা আমাদের মতোই মানুষ, যাদের ভেতরেও আছে দুর্বলতা, দ্বন্দ্ব, অপরাধবোধ আর আত্মপীড়া।

 

৩. ভাষার ব্যবহারে বৈচিত্র্য

শেকসপিয়রের অন্যতম বড় শক্তি হলো ভাষার প্রতি তাঁর দখল। তিনি প্রতিটি চরিত্রকে আলাদা রূপ দিতে ভাষার ধরন, টোন এবং শৈলীকে সচেতনভাবে ব্যবহার করেছেন।

  • রাজকীয় চরিত্রের ভাষা: রাজা লিয়ার, হ্যামলেট বা ম্যাকবেথের মতো রাজপরিবারের চরিত্ররা সাধারণত কবিত্বময় ও গম্ভীর শৈলীতে কথা বলেন। তাদের সংলাপে থাকে ছন্দ, উপমা ও দর্শনচর্চার ধ্বনি। উদাহরণস্বরূপ, হ্যামলেট যখন জীবনের অর্থ নিয়ে ভাবেন, তখন তাঁর ভাষা গভীর দার্শনিকতায় ভরা—যা রাজকীয় মর্যাদা ও মানসিক জটিলতার প্রতীক।

  • সাধারণ বা কৌতুক চরিত্রের ভাষা: অন্যদিকে, গ্রেভডিগার (Hamlet) বা ফলস্টাফ (Henry IV)–এর মতো চরিত্ররা কথা বলেন সাধারণ, হাস্যরসাত্মক এবং প্রায়শই খোঁচামূলক ভাষায়। তাঁদের সংলাপে কবিত্ব নেই, কিন্তু জীবনের সরল সত্য ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর আছে।

  • শ্রেণি ও সামাজিক ভেদ: এই ভাষাগত বৈচিত্র্যের কারণে দর্শক সহজেই বুঝতে পারে কারা অভিজাত, কারা সাধারণ মানুষ, কারা দার্শনিক আর কারা কৌতুকপ্রিয়।

এখানেই শেকসপিয়রের শিল্পকৌশল—তিনি ভাষাকে কেবল যোগাযোগের মাধ্যম রাখেননি, বরং চরিত্রের সামাজিক অবস্থান, আবেগ এবং মানসিক ভঙ্গি প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

 

৪. স্বগতোক্তি (Soliloquy)-এর ব্যবহার

শেকসপিয়রের নাটকে স্বগতোক্তি একটি বিশেষ কৌশল, যা তাঁর চরিত্রগুলোকে জীবন্ত ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে গভীর করে তোলে।

  • স্বগতোক্তি কী? নাটকের চরিত্র যখন মঞ্চে একা থাকে এবং নিজের মনের কথা উচ্চারণ করে, সেটিই স্বগতোক্তি। এর মাধ্যমে চরিত্রের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব, ভয়, আশা বা সিদ্ধান্ত দর্শকের কাছে সরাসরি প্রকাশ পায়।

  • হ্যামলেটের “To be or not to be”: বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত স্বগতোক্তিগুলির একটি। এখানে হ্যামলেট নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—জীবন কি সহ্য করার মতো, নাকি মৃত্যুই মুক্তি? এই দোটানা তাঁর মানসিক জটিলতাকে ফুটিয়ে তোলে।

  • ম্যাকবেথের অপরাধবোধ: লেডি ম্যাকবেথের ঘুমের মধ্যে নিজের অপরাধবোধ উজাড় করা বা ম্যাকবেথের সিংহাসনের স্বপ্নে ভীতু হয়ে পড়া—এসবই স্বগতোক্তির মাধ্যমে দর্শক জানতে পারে।

  • দর্শক–চরিত্রের সম্পর্ক: স্বগতোক্তির মাধ্যমে দর্শক সরাসরি চরিত্রের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে দর্শক কেবল ঘটনা প্রত্যক্ষ করে না, বরং চরিত্রের মানসিক যাত্রাতেও শরিক হয়।

শেকসপিয়রের স্বগতোক্তি চরিত্রকে দ্বিমাত্রিক নাট্যরূপ থেকে ত্রিমাত্রিক বাস্তবে পরিণত করে।

 

৫. দ্বন্দ্ব ও ট্র্যাজেডির নির্মাণ

শেকসপিয়রের চরিত্রগুলোকে অমর করে তুলেছে তাদের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব এবং সেখান থেকে জন্ম নেওয়া ট্র্যাজেডি। তাঁর নাটকে নায়ক-নায়িকারা কেবল বাহ্যিক পরিস্থিতির শিকার নন; বরং তাঁদের ভেতরের মানসিক সংগ্রামই অনেক সময় তাঁদের পতনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

  • ম্যাকবেথ: তাঁর কাছে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা ছিল জীবনের চরম লক্ষ্য। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি জানতেন, রাজহত্যা পাপ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা বনাম নৈতিকতার দ্বন্দ্বই তাঁকে ধীরে ধীরে পাগলামি ও অপরাধবোধের গভীরে টেনে নেয়।

  • ওথেলো: তিনি একদিকে গভীরভাবে দেশডিমোনাকে ভালোবাসতেন, অন্যদিকে নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও ইয়ারোর ষড়যন্ত্রে সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েন। ভালোবাসা ও সন্দেহের এই সংঘাতই তাঁকে ধ্বংস করে।

  • কিং লিয়ার: একদিকে তিনি কন্যাদের ভালোবাসতে চান, অন্যদিকে ক্ষমতা ও অহংকারের কারণে তাঁদের আন্তরিকতা বোঝার ভুল করেন। পরিবার বনাম ক্ষমতার অহংকারের দ্বন্দ্ব তাঁকে রাজ্য ও প্রিয়জন দুটোই হারাতে বাধ্য করে।

এই দ্বন্দ্বই শেকসপিয়রের ট্র্যাজেডিকে অনন্য করেছে। দর্শক বুঝতে পারে—পতন কেবল বাইরের পরিস্থিতির কারণে নয়, চরিত্রের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের ফলেও ঘটে। ফলে ট্র্যাজেডি হয়ে ওঠে মানবজীবনের সার্বজনীন প্রতিচ্ছবি

 

৬. বহুমাত্রিকতা ও অসম্পূর্ণতা

শেকসপিয়রের আরেকটি অসাধারণ কৌশল হলো চরিত্রকে একরৈখিক না রেখে বহুমাত্রিক ও অসম্পূর্ণভাবে নির্মাণ করা।

  • ভালো-মন্দের মিশ্রণ: তাঁর চরিত্ররা কখনোই নিখুঁত নায়ক বা নিখাদ খলনায়ক নয়। তাঁরা একই সঙ্গে শক্তি ও দুর্বলতার মিশ্রণ। এই মানবিক বৈপরীত্যই তাঁদের বাস্তব করে তোলে।

  • শাইলক (The Merchant of Venice): শাইলককে একদিকে আমরা লোভী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মনে করি, কিন্তু অন্যদিকে তাঁর সংলাপ—“If you prick us, do we not bleed?”—আমাদের মনে সহানুভূতি জাগায়। দর্শক বুঝতে পারে, তাঁর লোভ ও রাগ আসলে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বৈষম্যের ফল।

  • হ্যামলেট: তিনি দার্শনিক, চিন্তাশীল এবং সংবেদনশীল, কিন্তু একই সঙ্গে অতি দ্বিধাগ্রস্ত ও দেরি করতে করতে সুযোগ হারানো মানুষও।

  • লেডি ম্যাকবেথ: প্রথমে নির্মম উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক হলেও শেষপর্যন্ত অপরাধবোধে ভেঙে পড়েন—এখানেও অসম্পূর্ণতার বাস্তবতা।

এই অসম্পূর্ণতাই শেকসপিয়রের চরিত্রকে জীবন্ত করে। বাস্তব জীবনে যেমন কেউ সম্পূর্ণ ভালো বা সম্পূর্ণ খারাপ নয়, তাঁর চরিত্রগুলিও তাই—বহুমাত্রিক, অসম্পূর্ণ, অথচ বাস্তবের কাছাকাছি।

 

৭. কৌতুক ও গম্ভীরতার সমন্বয়

শেকসপিয়রের নাটকে কেবল ট্র্যাজেডি বা রোমান্সই নেই; বরং কৌতুক চরিত্রদের উপস্থিতি নাটকের আবহকে বহুমাত্রিক করে তোলে। এই কৌতুক চরিত্ররা শুধুমাত্র দর্শককে হাসানোর জন্য নয়, বরং নাটকের গম্ভীর আবহে এক ধরনের সামঞ্জস্য ও অন্তর্দৃষ্টি যোগ করে।

  • সমালোচনার পরশ: কৌতুক চরিত্ররা প্রায়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে নাটকের গভীর সত্য প্রকাশ করে। তারা যেন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, যারা ক্ষমতাবান বা রাজকীয় চরিত্রের ভুলগুলো সহজভাবে তুলে ধরে।

  • কিং লিয়ার-এর “Fool”: লিয়ারের রাজত্ব হারানো ও পরিবারিক ভাঙনের মাঝেও Fool চরিত্রটি তীক্ষ্ণ রসিকতার মাধ্যমে বাস্তবতার কথা বলে। সে একদিকে মূর্খের বেশে বিনোদন দেয়, অন্যদিকে দর্শককে লিয়ারের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতা বোঝায়।

  • হ্যামলেট-এর গ্রেভডিগার দৃশ্য: ট্র্যাজেডির চূড়ান্ত আবহেও গ্রেভডিগারের সাধারণ ও রসিক ভাষা দর্শককে জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা মনে করিয়ে দেয়।

এভাবে শেকসপিয়র প্রমাণ করেছেন যে হাস্যরস ও গম্ভীরতা পাশাপাশি চলতে পারে, আর এই দ্বৈততা চরিত্র ও কাহিনিকে আরও বাস্তব ও মানবিক করে তোলে।

 

৮. নারী চরিত্রের শক্তি

শেকসপিয়রের নাটকে নারী চরিত্ররা কেবল পুরুষ চরিত্রের পরিপূরক বা অলঙ্কার নয়; বরং তাঁরা প্রায়শই নাটকের চালিকাশক্তি। শেকসপিয়র নারীকে প্রান্তিক ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখেননি—তাঁরা ছিলেন শক্তি, প্রজ্ঞা ও আবেগের প্রতীক

  • লেডি ম্যাকবেথ: উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দৃঢ়তার প্রতীক। স্বামীর দুর্বলতা কাটিয়ে তাঁকে রাজহত্যায় প্ররোচিত করেন। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাধবোধে ভেঙে পড়েন, যা তাঁকে মানবিকও করে তোলে।

  • পোরশিয়া (The Merchant of Venice): বুদ্ধি, ন্যায়বোধ ও কৌশল দক্ষতায় তিনি কেবল নাটকের নারী চরিত্র নন, বরং নায়কোচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর আদালতের “quality of mercy” বক্তৃতা ন্যায়বিচারের চিরন্তন প্রতীক।

  • ডেসডিমোনা (Othello): প্রেম ও আত্মত্যাগের প্রতীক। স্বামীর সন্দেহ ও সহিংসতার শিকার হলেও তাঁর নিষ্পাপ ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা দর্শককে আবেগপ্রবণ করে তোলে।

  • জুলিয়েট (Romeo and Juliet): তরুণ প্রেমের সাহসী রূপক। পরিবার ও সমাজের বাধা অগ্রাহ্য করে ভালোবাসার জন্য লড়াই করেছেন।

এই চরিত্রগুলো প্রমাণ করে শেকসপিয়র নারীদের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর ও প্রভাবশালী ভূমিকা দিয়েছেন। তাঁরা কেবল নায়কের ছায়ায় নন, বরং নিজেদের জটিলতা, আবেগ ও শক্তি দিয়ে নাটকের গতিপথ নির্ধারণ করেছেন।

 

৯. সর্বজনীনতা

শেকসপিয়রের চরিত্রগুলোর দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের মূল কারণ হলো তাদের সর্বজনীন মানবিকতা। তাঁর চরিত্ররা নির্দিষ্ট কোনো দেশ, সমাজ বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাঁরা প্রতিটি যুগের, প্রতিটি সংস্কৃতির মানুষের অন্তর্গত অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে।

  • হ্যামলেটের দুঃখ: জীবনের অনিশ্চয়তা, প্রতিশোধ ও সিদ্ধান্তহীনতার যন্ত্রণা আজও আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়।

  • ওথেলোর সন্দেহ: প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার ভয়াবহ পরিণতি আজকের যুগেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমান প্রাসঙ্গিক।

  • ম্যাকবেথের উচ্চাকাঙ্ক্ষা: সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সা মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক পতনের কারণ হতে পারে—এ শিক্ষা সর্বকালেই সত্য।

  • জুলিয়েটের প্রেম: ভালোবাসার জন্য সামাজিক রীতিনীতি ভেঙে দেওয়ার সাহস প্রতিটি প্রজন্মের তরুণ-তরুণীর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।

এই কারণেই শেকসপিয়রের চরিত্রগুলো কেবল নাটকীয় বিনোদন নয়, বরং মানুষের চিরন্তন অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। ফলে তাঁরা ইউরোপ থেকে এশিয়া, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা—সবখানেই সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ও আলোচিত।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

শেকসপিয়রের নাটকে চরিত্র গঠনের কৌশল মূলত মানবিক গভীরতা, আবেগের বৈচিত্র্য, ভাষার স্বাতন্ত্র্য নাটকীয় দ্বন্দ্বের দক্ষ ব্যবহার। তাঁর চরিত্র কখনও নিখুঁত নয়, বরং অসম্পূর্ণতাই তাদের বাস্তব করে তুলেছে। তাই হ্যামলেট, ওথেলো বা লিয়ার শুধু নাটকের চরিত্র নয়—তারা মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি।

শেকসপিয়রের নাট্যকলা আমাদের শেখায়, চরিত্রই নাটকের প্রাণ। কাহিনি সময়ের সঙ্গে বদলাতে পারে, কিন্তু জীবন্ত চরিত্র শতাব্দীর পর শতাব্দী দর্শক ও পাঠকের মনে থেকে যায়।