সাবিলা নূর, বাংলাদেশের টেলিভিশন পর্দার এক উজ্জ্বল নাম। গ্ল্যামার, অভিনয়, সৌন্দর্য ও স্মার্টনেস—এই চার উপাদানের চমৎকার সমন্বয় তিনি। শুধুই জনপ্রিয়তা নয়, দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া, শক্তিশালী নারীচরিত্র ফুটিয়ে তোলা, এবং মিডিয়ার সব জঞ্জাল থেকে দূরে থেকে নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়াই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।
শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি
সাবিলা নূরের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৭ মে, চট্টগ্রাম জেলায়। বাবা মীর আবদুল্লা একজন বিশিষ্ট টেলিভিশন প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শৈশব থেকেই পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা সাবিলার মাঝে নাচ, গান, অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ গড়ে ওঠে।
তিনি নাচ শিখেছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে এবং খুব ছোট বয়সেই ‘পদ্ম কুঁড়ি’ জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় নৃত্য বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন।
শিক্ষাজীবন ও একাডেমিক অর্জন
সাবিলা নূরের একাডেমিক জীবন তাঁর শৈল্পিক জীবনযাত্রার সমান গুরুত্ব পেয়েছে।
- স্কুলজীবন: (বিশদ তথ্য অস্পষ্ট, আপডেট প্রয়োজন)
- বিশ্ববিদ্যালয়:
- প্রাথমিকভাবে ভর্তি হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ (AIUB)-এ।
- পরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে (BBA) স্নাতক সম্পন্ন করেন।
তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি ও পেশাগত স্মার্টনেসের মেলবন্ধন তাঁর অভিনয়ে একটি পরিপক্ব ছাপ ফেলেছে।
ক্যারিয়ারের সূচনা ও বিস্তার
প্রথম পদক্ষেপ (২০১৪):
- সাবিলা মিডিয়ায় প্রথম কাজ করেন গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে। তার প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি ও ক্যামেরার সামনে সাবলীলতা নজর কাড়ে সবার।
- এরপর একে একে Nescafe, Pran Fit, Aarong Dairy-সহ একাধিক ব্র্যান্ডের মুখ হয়ে ওঠেন।
নাট্যজগতে অভিষেক:
- প্রথম অভিনীত নাটক: ইউ টার্ন (২০১৪)।
সেখানে তাঁর অভিনয়শৈলী দর্শকদের মনে নতুন একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর আগমনের বার্তা দেয়।
জনপ্রিয় নাটক ও চরিত্র বৈচিত্র্য
সাবিলা নূরের অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু নাটক:
নাটকের নাম | সহ-অভিনেতা | বৈশিষ্ট্য |
ইউ টার্ন | জিয়াউল ফারুক অপূর্ব | আত্মবিশ্বাসী তরুণী |
ভাইয়া | তৌসিফ মাহবুব | কমেডি-রোমান্স |
বেড রুম | নাঈম | সম্পর্কের জটিলতা |
ক্যান্ডি ক্রাশ | আফরান নিশো | কিশোরী মনের দ্বন্দ্ব |
লাইফ ইন আ লাইন | রাফসান রোকন | আত্মবিশ্বাস ও আত্ম-অনুসন্ধান |
তাঁর অভিনয়শৈলী একদিকে যেমন নরম-স্নিগ্ধ প্রেমিকা চরিত্রে সফল, অন্যদিকে বিপ্লবী, রাগী ও প্রতিবাদী চরিত্রেও তিনি অনন্য।
তিনি বাংলা নাটকে “নারীর অভ্যন্তরীণ শক্তি ও আত্মমর্যাদা”-র প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন—যেখানে দেখা যায়, সাবিলা কখনো বখাটেদের শাসান, কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন।
ব্যক্তিগত জীবন
- বিবাহ: সাবিলা ২০২১ সালে বিয়ে করেন নেহাল সুনন্দ তাহের-কে, যিনি একজন শিক্ষাবিদ এবং প্রকৌশলী।
- সংসারজীবনে তিনি নিভৃত, মিডিয়া কন্ট্রোভার্সি থেকে দূরে থেকে জীবনযাপন করেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
যদিও এখন পর্যন্ত জাতীয় বা বড় কোনও পুরস্কার পাননি, তবুও তিনি দর্শকপ্রিয়তা এবং নির্মাতাদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছেন। তিনি পরপর বহু ঈদ নাটকের মুখ্য অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।
আর্থিক ও পেশাগত অর্জন
বিষয় | পরিমাণ |
নাটকপ্রতি পারিশ্রমিক | আনুমানিক ৩০ হাজার–১ লক্ষ টাকা |
আনুমানিক সম্পদ | ১–২ কোটি টাকা |
নিজস্ব ফ্ল্যাট | ঢাকার অভিজাত এলাকায় |
আয় উৎস | নাটক, বিজ্ঞাপন, ইউটিউব কনটেন্ট, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট |
সাবিলা নূরের অভিনয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- মুখের এক্সপ্রেশন ও চোখে অভিনয়—তাঁর শক্তিশালী দিক।
- সংলাপহীন দৃশ্যেও নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন।
- সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা।
- প্রেমিকা থেকে প্রতিবাদী নারীতে দ্রুত রূপান্তরের দক্ষতা।
কিছু কম জানা তথ্য
- তিনি একজন প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী।
- কোনও কন্ট্রোভার্সি বা স্ক্যান্ডাল ছাড়াই ক্যারিয়ার গড়েছেন।
- সাবিলা নিজেকে “একজন সাধারণ মেয়ে যার স্বপ্ন বড়”—এইভাবে পরিচয় দেন।

সাবিলা নূর এমন এক অভিনেত্রী, যিনি জনপ্রিয়তার মোহে নয়, শিল্পে বিশ্বাস রাখেন। তার অভিনয়ে যেমন আছে বাস্তবতা, তেমনি আছে কল্পনার ছোঁয়া। তিনি প্রমাণ করেছেন, নায়িকা মানেই শুধু রোমান্টিক দৃশ্যের জন্য নয়—নায়িকা মানে সমাজে, গল্পে এবং পর্দায় এক শক্তিমান উপস্থিতি।
বাংলাদেশের টেলিভিশন মিডিয়ায় সাবিলা নূর শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি আজকের প্রজন্মের নারীর আত্মপ্রত্যয়ী, সাহসী এবং পরিশ্রমী প্রতীক।