অগ্নিপরীক্ষা চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন অভিনীত একটি জনপ্রিয় রোমান্টিক বাংলা চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেন অগ্রদূত। এই চলচ্চিত্রটি আশাপূর্ণা দেবীর বিখ্যাত উপন্যাস অগ্নিপরীক্ষার কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল এবং সংগীত পরিচালনা করেছেন অনুপম ঘটক। প্রধান ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন,অনুপ কুমার ইত্যাদি।
এই গল্পটি একটি তরুণ দম্পতি – কিরীটী এবং তাপসীর মধ্যে। তাপসীর মা তার মেয়ের বিয়ে মানতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আঘাত সহ্য না করতে পেরে মারা গেলেন তাপসীর বাবা। তাপসী সুশিক্ষিত ছিল ছুটি কাটাতে হিল স্টেশনে গিয়ে কিরীটী নামে এক ধনী যুবকের সাথে দেখা করেন। তারা প্রেমে পড়ে তবে তাপসী গ্রামের জমিদার ছেলে বুলুকে বিয়ে করেছিলেন।
একটি দোষ অনুভূতি তাকে প্রতিদিন তাড়া করে কারণ সে তার অতীতকে ভুলতে পারে না। তিনি আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে তার ভাই তার অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যদিও তার মা চাইছিল বিয়েটি হোক। তাপসী তার ঠাকুমার কাছে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করলেন তাকে কী করা উচিত তাঁর ঠাকুমা রামায়ণে সীতার “অগ্নি পরিক্ষা” সম্পর্কে তাকে স্মরণ করিয়ে দেন।
সীতার পরীক্ষা প্রতিটি প্রতিবন্ধকতার উপরে জয়লাভ করেছিল। তিনি আশা করেন একই ধরনের পরীক্ষার পরে তাপসীও বিজয়ী হয়ে উঠবেন। তাপসী সত্যের মুখোমুখি হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হন এবং তিনি পুরানো গ্রামে এসেছিলেন সেখানে বুলুর সাথে দেখা করার চেষ্টা করে, কিন্তু কিরীটিকে তার সামনে দেখে। সে জানতে পেরেছিল যে কিরীটি হলেন বুলু, তাঁর দীর্ঘ প্রেম। এইভাবে সে তার হারানো ভালবাসা এবং তার অপরাধবোধের উপর জয়লাভ করে।
অগ্নিপরীক্ষা চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা – এম.পি. প্রোডাকসন।
- কাহিনি—বআশাপূর্ণা দেবী।
- চিত্রনাট্য— নিতাই ভট্টাচার্য ।
- পরিচালনা— অগ্রদূত।
- গীতিকার— গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
- সংগীত পরিচালনা—অনুপম ঘটক।
- চিত্রগ্রহণ—বিভূতি লাহা, বিজয় ঘোষ।
- শিল্প নির্দেশনা—সত্যেন রায়চৌধুরী।
- শব্দগ্রহণ—যতীন দত্ত।
- সম্পাদনা—সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায়।
- নৃত্য পরিচালনা—বিনয় ঘোষ।
অগ্নিপরীক্ষা চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার, চন্দ্রাবতী দেবী, সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়, যমুনা সিংহ, শিখারানী বাগ, অপর্ণা দেবী, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, জহর রায়, কমল মিত্র, অনুপকুমার, শ্যামলী চক্রবর্তী, সবিতা ভট্টাচার্য, মাঃ বিভু, পঞ্চানন ভট্টাচার্য, গোকুল মুখোপাধ্যায়, মনোজ বিশ্বাস। নেপথ্য সংগীত—সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ৷
অগ্নিপরীক্ষা চলচ্চিত্রের কাহিনি—
নব্য শিক্ষায় শিক্ষিত তাপসীর (সুচিত্রা) মা চিত্রলেখা (চন্দ্রাবতী) বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার পাত্র কিরীটি মুখার্জীর (উত্তম) সাথে কন্যার বিয়ে দিতে চান। তাপসী এর আগে মার মনোনীত অন্য পাত্রদের প্রত্যাখ্যান করতে পারলেও কিরীটিকে উপেক্ষা করতে পারে না, সে একটা অদ্ভুত দোলাচলে ভুগতে থাকে।

ছেলেবেলায় তাপসী (শিখারানী) কুসুমপুরে তাদের দেশের বাড়িতে ঠাকুমা হেমপ্রভার (সুপ্রভা) কাছে থাকত। কুসুমপুরের পার্শ্ববর্তী জমিদার কীর্তি মুখার্জী (জহর) হেমপ্রভার প্রয়াত স্বামীর বন্ধু ছিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী কীর্তির অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে হেমপ্রভা নাতনি তাপসীর সাথে কীর্তির নাতি বুলুর বিয়ে দেন।
চিত্রলেখা কোনো দিনই এই বিয়েকে স্বীকার না করলেও তার স্বামী (কমল) মন থেকে এই বিয়েকে অস্বীকার করতে পারেন নি। শাশুড়ি ও স্বামীর মৃত্যুর পরে চিত্রলেখা উঠে পড়ে লাগে কন্যার অন্যত্র বিয়ে দিতে যদিও তাপসী তার ছেলেবেলার বিয়েকে, ঠাকুমার এবং বাবার ইচ্ছার, অমর্যাদা করতে চাইত না। তার ছেলেবেলার খেলাঘরের স্বামী বুলুও তার দাবি নিয়ে উপস্থিত হয় নি। অদ্ভুত একটা দোলাচলের মধ্যে তাপসীর জীবন কাটে।
তাপসীর জীবন কিরীটির উপস্থিতি তার মধ্যে একটা মানসিক সংকট সৃষ্টি করে। তাপসী সব বাধা উপেক্ষা করে বাড়ির লোকদের অগোচরে কুসুমপুরে যায়। কুসুমপুরে সে আবার কিরীটি মুখার্জীর সাক্ষাৎ পায়। কিরীটিই তার ছেলেবেলার খেলাঘরের স্বামী বুলু।
ছবিটি তৎকালীন সময়ে অসাধারণ জনসমাদর লাভ করেছিল।
আরও দেখুনঃ