অঙ্কুশ চলচ্চিত্র

অঙ্কুশ চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- চলচ্চিত্রটি চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তপন সিংহ। চলচ্চিত্রটির গীতিকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। চলচ্চিত্রটিতে সাঁওতালদের জীবন কাহিনী দেখানো হয়েছে। জমিদার চন্দ্র চৌধুরী এই স্থানে বসবাসের অধিকার দিয়ে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র ইন্দ্র  জমিদারির মালিক হয়। চন্দ্র চৌধুরীর প্রিয় হাতি নীলবাহাদুর আজ অবাঞ্ছিত। ইন্দ্র এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা নিয়ে সাত দিনের অভুক্ত নীলবাহাদুরকে সাঁওতালদের দিকে লেলিয়ে দেয়। নীলবাহাদুর ইন্দ্রর ব্যবহৃত গাড়িটিকে ধ্বংস করে নিজেও মারা যায়। সনাতনী যুগ বনাম যান্ত্রিক যুগের মধ্যকার সংগ্রামের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রটির  সমাপ্তি ঘটে।

অঙ্কুশ চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অঙ্কুশ চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা—লিটল পিকচার্স।
  • কাহিনি ও সংলাপ – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
  • চিত্রনাট্য —তপন সিংহ, বলীন সোম।
  • পরিচালনা — তপন সিংহ।
  • সংগীত পরিচালনা — কালীপদ সেন।
  • চিত্রগ্রহণ—অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • শিল্প নির্দেশনা – বিজয় বসু।
  • সম্পাদনা—রবি সেন।
  • শব্দগ্রহণ—গৌর দাস।
  • নৃত্য পরিচালনা—অনাদিপ্রসাদ।
  • গীতিকার—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।

অঙ্কুশ চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

অনুভা গুপ্তা, মঞ্জু দে, অভি ভট্টাচার্য, বীরেশ্বর সেন, বলীন সোম, শ্যাম লাহা, প্রীতি মজুমদার, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, ননী মজুমদার, সলিল দত্ত, পারিজাত বসু, জহর রায়, বিশ্ববন্ধু সান্যাল, ঋষি বন্দ্যোপাধ্যায় ।

 

অঙ্কুশ চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অঙ্কুশ চলচ্চিত্রের কাহিনি—

জমিদার চন্দ্র চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র ইন্দ্র (অভি) জমিদারির মালিক হয়। ইন্দ্র তার স্ত্রী ইন্দ্রাণীকে (অনুভা) নিয়ে কলকাতা থেকে তাদের জমিদারিতে আসে। তার দীর্ঘদিনের বিশ্বাস তাদের জমিদারির মধ্যে একটা স্থানের নীচে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন লুকিয়ে আছে, এই নিদর্শন বৃহৎ বঙ্গের ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়নে সাহায্য করবে। এই অঞ্চলে বসবাস করে সাঁওতালরা যাদের একসময় চন্দ্র চৌধুরী এই স্থানে বসবাসের অধিকার দিয়ে ছিলেন। চন্দ্র চৌধুরীর জীবদ্দশায় ইন্দ্র সাঁওতালদের ভিটে থেকে উৎখাতের চেষ্টা করে নি, কারণ সে জানত এই কাজে সে পিতার সমর্থন পাবে না।

আবার অন্যদিকে চন্দ্র চৌধুরীর প্রিয় হাতি নীলবাহাদুর আজ অবাঞ্ছিত। ইন্দ্র ও তার স্ত্রী এই আদিম যুগের বাহনটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে। নীলবাহাদুর ইন্দ্রর ব্যবহৃত গাড়িটিকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবে, সে বোঝে তার অবহেলার প্রধান কারণ এই গাড়ি।

ইন্দ্রাণী নীলবাহাদুর এবং সাঁওতালদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হলেও ইন্দ্রের তাদের উপর কোনো সহানুভূতি নেই। ইন্দ্র এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা নিয়ে সাত দিনের অভুক্ত নীলবাহাদুরকে সাঁওতালদের দিকে লেলিয়ে দেয়, আবার নিজের পেটোয়া লোকদের দিয়ে তাদের উপর গুলি চালায়। গুলিতে মোড়লের ছেলের মৃত্যু সাঁওতালদের খেপিয়ে দেয়, তারা তির ছুঁড়তে শুরু করে।

 

Google News অঙ্কুশ চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ইন্দ্রাণী এই গোলমালের জায়গায় ছুটে আসে, সাঁওতালদের ছোঁড়া তিরে ইন্দ্রাণী আহত হয়।

ইন্দ্র, ইন্দ্রাণীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অন্যদিকে আহত নীলবাহাদুরের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে গাড়িটার উপরে, সে গাড়িটাকে ধ্বংস করে নিজেও মারা যায়। সনাতনী যুগ বনাম যান্ত্রিক যুগের মধ্যকার সংগ্রামের এইভাবেই সমাপ্তি ঘটে।

প্রথম ছবি হিসাবে এই ধরনের বিষয়ের নির্বাচন তপন সিংহকে ব্যতিক্রমী চিত্রপরিচালক হিসাবেই চিহ্নিত করে। ছবিটি আর্থিকভাবে সফল না হলেও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিল।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment