অভিযান চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- অভিযান সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্র যা ১৯৬২ সালে মুক্তি পায়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একই নামের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য রচিত হয়েছে।
নরসিং জাতিতে রাজপুত, ট্যাক্সি চালানো তার পেশা। নরসিং-এর ট্যাক্সি চালানোর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। নিরুপায় নরসিং শ্যামনগর ছেড়ে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী সুখন রামের দেখা পায়। সুখন রামের রক্ষিতা গোলাপী নরসিংকে নিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করার কথা ভাবে। নরসিং-এর মন তখন বন্ধু যোসেফের বোন নীলির প্রতি আকৃষ্ট। শেষ পর্যন্ত গোলাপীকে ফিরে পাওয়ার আশায় নরসিং সুখনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।
অভিযান চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা—অভিযাত্রিক।
- কাহিনি—তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
- চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও সংগীত—সত্যজিৎ রায়।
- চিত্রগ্রহণ—সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা—বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
- শব্দগ্রহণ—দুর্গাদাস মিত্র, নৃপেন পাল, সুজিত সরকার, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
- সম্পাদনা—দুলাল দত্ত।
অভিযান চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ওয়াহিদা রহমান, রুমা গুহঠাকুরতা, রবি ঘোষ, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, চারুপ্রকাশ ঘোষ, অজিতনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখর চট্টোপাধ্যায়, রেবা দেবী, অবনী মুখোপাধ্যায়, কালী চক্রবর্তী, ভানু ঘোষ, শৈলেন ঘোষ, ননী গঙ্গোপাধ্যায়, রথীন ঘোষ, বীরেশ্বর সেন, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণ রায়, কৃষ্ণকালী ভট্টাচার্য, হরিধন মুখোপাধ্যায়, হরিচরণ নাগ, নারায়ণ দাস, শান্তি চট্টোপাধ্যায়, কার্তিক মুখোপাধ্যায়, মহীন চৌধুরী, গদাধর সেন, বীরেশ্বর সরখেল, সমর নাগ, শঙ্কর লাহিড়ী, ভোলা ভট্টাচার্য, আরতি দাস।

অভিযান চলচ্চিত্রের কাহিনি—
নরসিং (সৌমিত্র) জাতিতে রাজপুত, তিন পুরুষ ধরে বাংলাদেশেই বাস (শ্যামনগর নামে এক মফস্সল শহরে)। ট্যাক্সি চালানো তার পেশা, তার শাকরেদ হল রামা (রবি), দুজনে একসাথেই থাকে। একদিন সে এস ডি ও সাহেবের গাড়ি ওভারটেক করে। এস ডি ও-র আত্মসম্মানে আঘাত লাগে, তিনি নরসিং-এর ট্যাক্সি চালানোর লাইসেন্স বাতিল করে দেন। নিরুপায় নরসিং শ্যামনগর ছেড়ে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী সুখন রামের (চারুপ্রকাশ) দেখা পায়। সুখন রাম তার রক্ষিতা গোলাপীকে (ওয়াহিদা) নিয়ে শ্যামনগর ফেরার পথে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় নরসিং-এর সাহায্যে বাড়ি ফিরে আসে।
গোলাপীর এই রক্ষিতার জীবন ভালো লাগে না, সে নরসিং-এর প্রতি অনুরক্ত হয় এবং তাকে নিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করার কথা ভাবে। নরসিং-এর মন তখন বন্ধু যোসেফের (জ্ঞানেশ) বোন নীলির (রুমা) প্রতি আকৃষ্ট।
যোসেফ এস ডি ও-র গাড়ি চালায় এবং নীলি একটি স্থানীয় স্কুলে শিক্ষিকার কাজ করে। নরসিং জানত না নীলি অন্য একটি মানুষকে ভালোবাসে, জানার পর আশাহত নরসিং সুখন রামের চোরাই ব্যবসায় যোগ দিতে চায় অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য। সুখন রাম আগেই তাকে এই ব্যবসায় যোগ দেওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিল।
নরসিং যেদিন তার গাড়ি নিয়ে আফিম চালান দেওয়ার জন্য যায়, পথে যোসেফের সাথে দেখা, যোসেফ তাকে এই পথ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে । নীলির প্রেমে আশাহত নরসিং যোসেফের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। মাঝপথে নরসিং-এর অনুতাপ হয়, সে সুখনের মাল ফেরত দিতে গিয়ে দেখে পুলিসের ভয়ে সুখন গোলাপীকে নিয়ে অন্য কোথাও পালিয়ে গিয়েছে। গোলাপীকে ফিরে পাওয়ার আশায় নরসিং সুখনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।
১৫০ মিনিটের এই ছবিতে চোরাই চালান করে বড়লোক হওয়া, আমলাদের অহেতুক ক্ষমতা প্রদর্শন এবং আর্থিক অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণে মানুষ খারাপ হতে বাধ্য এই বিষয়গুলির উপর শ্লেষ থাকলেও ছবিটি সত্যজিতের ছবির উচ্চতাকে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর্থিক সাফল্য ঘটলেও ছবিটি সত্যজিৎ-অনুরাগী দর্শকদের মনোরঞ্জনে বিফল হয়।
পুরস্কার :
১৯৬২ সালে ছবিটি রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক লাভ করে।
আরও দেখুনঃ