অসিত সেনের জন্ম পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) ঢাকা শহরে। প্রথাগত শিক্ষা সম্পূর্ণ করে কলকাতায় আসেন। চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ শেখার জন্য। হিরণ্ময় সেন পরিচালিত বর্মার পথে (১৯৪৭) ছবিতে চিত্রগ্রাহক জি. কে. মেহতার সহকারী হিসাবে কাজ শেখেন এবং পরবর্তী কালে অর্ধেন্দু মুখার্জী পরিচালিত পূর্বরাগ (১৯৪৭) ছবির চিত্রগ্রাহক রামানন্দ সেনগুপ্তর সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে স্বাধীন চিত্রগ্রাহক হিসাবে এটিই রামানন্দ সেনগুপ্তর প্রথম ছবি। গান্ধীর দাবি নোয়াখালী পরিদর্শন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন। বিপ্লবী নামে একটি অসমিয়া ছবির সাথেও সহকারী হিসাবে যুক্ত ছিলেন।
অসিত সেন
স্বাধীন পরিচালক হিসাবে প্রথম ছবি চলাচল (১৯৫৬) একটি ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। অরুন্ধতী দেবী, নির্মলকুমার এবং অসিতবরণ অভিনীত ছবিটি আর্থিক সাফল্য লাভ করে। পরবর্তী ছবি পঞ্চতপা (১৯৫৭) ও বক্স অফিসে সাফল্য পায়। সুচিত্রা সেন ও উত্তমকুমারকে নিয়ে জীবনতৃষ্ণা (১৯৫৭), সুচিত্রা সেন, বসন্ত চৌধুরী অভিনীত দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯) ছবি দুটিও আর্থিক ভাবে সফল হয়েছিল।
সুপ্রিয়া সৌমিত্র অভিনীত স্বরলিপি (১৯৬১) এবং স্বয়ম্বরা (১৯৬১) ছবি দুটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিকাশ রায় ও সুচিত্রা সেনকে (শ্রিত ভূমিকা) জুটি করে তৈরি উত্তর ফাল্গুনী (১৯৬৩) ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি আর্থিক সাফল্য লাভ করে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত কোনো বাংলা ছবি পরিচালনা করেন নি। এই সময়কালে তিনি বোম্বেতে ১১টি হিন্দী ছবি পরিচালনা করেন এবং তার মধ্যে কয়েকটি আর্থিক ভাবে সফল হয়েছিল।
সমগ্ৰ চলচ্চিত্র জীবনে ১৩টি বাংলা কাহিনিচিত্র ও ১১টি হিন্দী ছবি পরিচালনা করেন। সাধারণত ছবির চিত্রনাট্য নিজে রচনা করলেও উত্তর ফাল্গুনী ছবিটির চিত্রনাট্য করেছেন। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। এবং প্রতিজ্ঞা (১৯৮৫) ছবিটি তৈরি করেন ভরত সমসের জংবাহাদুর। রানার তৈরি চিত্রনাট্য অবলম্বনে। উত্তর ফাল্গুনী ছবির হিন্দী রিমেক মমতা (১৯৬৬) এবং দীপ জ্বেলে যাই ছবির হিন্দী রিমেক খামোশী (১৯৬৯) ছবি দুটিও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। অসিত সেন পরিচালিত শেষ দুটি ছবি প্রার্থনা এবং প্রতিজ্ঞা যথাক্রমে ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায়, ছবি দুটিতে ভিক্টর ব্যানার্জী এবং মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন।

চলচ্চিত্রপন্থি—
- ১৯৫৬ চলাচল, পরিবার (হিন্দী);
- ১৯৫৭: পঞ্চতপা, জীবনতৃষ্ণা, অপরাধী কৌন (হিন্দী);
- ১৯৫৮ : জোনাকির আলো;
- ১৯৫৯ : দীপ জ্বেলে যাই;
- ১৯৬১ ; স্বরলিপি, স্বয়ম্বরা,
- ১৯৬২: আগুন;
- ১৯৬৩ : উত্তর ফাল্গুনী;
- ১৯৬৫ : তৃষ্ণা;
- ১৯৬৬ : মমতা (হিন্দী);
- ১৯৬৮ : আনোগী রাত (হিন্দী);
- ১৯৬৯ : খামোশী (হিন্দী);
- ১৯৭০ : মা অউর মমতা (হিন্দী), সফর (হিন্দী), সারাফত (হিন্দী);
- ১৯৭২ : অন্নদাতা, আনোখা দান (হিন্দী);
১৯৭৫ : আনাড়ী (হিন্দী): - ১৯৭৬ বৈরাগ
- ১৯৮১ ভকিল বাবু (হিন্দী);
- ১৯৮৩ মেহেন্দী (হিন্দী);
- ১৯৮৪ প্রার্থনা;
- ১৯৮৫ প্রতিজ্ঞা।
প্রকাশনা :
অসিত সেনের লেখা ‘স্মৃতির সোনালি রেখা’ গ্রন্থটি দে’জ পাবলিশিং থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়।
আরও দেখুনঃ