কাচের স্বর্গ চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- ১৯৬২ সালে ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত সেরা ছবি। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন যান্ত্রিক । এতে সংগীত পরিচালনা করেছেন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র।
সঞ্জয় চৌধুরীর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। ক্লাসের সেরা ছাত্র হয়েও মাত্র কটা টাকার জন্য ফাইনাল পরীক্ষার ফিস জমা দিতে না পারার কারণে তার স্বপ্ন সফল হয় নি।
হঠাৎই একদিন সুশোভনের (অনিল) সাথে সঞ্জয়ের দেখা হয়। সুশোভন তখন বাতাসপুর মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান। । সুশোভনের অনুরোধ এবং সুপারিশে সঞ্জয় বাতাসপুর মিউনিসিপাল হাসপাতালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন হিসাবে যোগ দেয়।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্জয় তার রোগীদের এবং কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জনে সফল হয়। অন্য ডাক্তাররা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে সঞ্জয় চিকিৎসাশাস্ত্র জানলেও তার কোনো ডিগ্রি নেই। বিচারক সমস্ত বিষয়টি জেনে তাকে যথাসম্ভব লঘু দণ্ডে দণ্ডিত করেন।
কাচের স্বর্গ চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা — চিত্রযুগ।
- প্রযোজক – প্রকাশচন্দ্র নান।
- কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা – যান্ত্রিক।
- সংগীত পরিচালনা – জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র।
- চিত্রগ্রহণ – অনিল গুপ্ত, জ্যোতি লাহা।
- শিল্প নির্দেশনা— সুবোধ দাস।
- শব্দগ্রহণ – মৃণাল গুহঠাকুরতা, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
- সম্পাদনা— দুলাল দত্ত।
- গীতিকার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- নেপথ্য সংগীত — সুমিত্রা সেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়।
কাচের স্বর্গ চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
দিলীপ মুখোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, কাজল গুপ্ত, মঞ্জুলা বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জু দে, বিকাশ রায়, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, অসিতবরণ, উৎপল দত্ত, ছায়া দেবী, গীতা দে, জীবেন বসু, তরুণকুমার, সবিতা দত্ত, আরতি দাস, অমর মল্লিক, শিশির বটব্যাল, শিশির মিত্র, তমাল লাহিড়ী, মালা বাগ, ধীরাজ দাস, সন্তোষ সিংহ, প্রীতি মজুমদার।
কাচের স্বর্গ চলচ্চিত্রের কাহিনি—
সঞ্জয় চৌধুরীর (দিলীপ) ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। বড় হয়ে সে ডাক্তারি পড়তে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। ক্লাসের সেরা ছাত্র হয়েও মাত্র কটা টাকার জন্য ফাইনাল পরীক্ষার ফিস জমা দিতে না পারার কারণে তার স্বপ্ন সফল হয় নি।
সঞ্জয় একটি মিলিটারি হাসপাতালে আরদালির চাকরি নিয়ে কলকাতা ছেড়ে চলে যায়। বার্মা সীমান্তে তখন যুদ্ধ চলছে, দলে দলে আহত সৈনিক হাসপাতালে ভর্তি, তাদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ডাক্তার মেজর চ্যাটার্জী (পাহাড়ী) সঞ্জয়ের বিষয়টি জানতেন।
তিনি সঞ্জয়কে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে অনুরোধ করেন, এমনকী শল্যচিকিৎসায় তার পারদর্শিতার জন্য অপারেশন করার সময় তাকে সঙ্গে রাখতেন, ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্জয় শল্যচিকিৎসায় একক ভাবেই পারদর্শী ডাক্তারদের মতো কাজ করতে সক্ষম হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সঞ্জয় আবার বেকার হয়ে পড়ে।
হঠাৎই একদিন সুশোভনের (অনিল) সাথে সঞ্জয়ের দেখা হয়। সুশোভন তখন বাতাসপুর মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান। এক সময় সুশোভন সঞ্জয়ের চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিল এবং সে তাকে ডাক্তার বলেই জানত। সুশোভনের অনুরোধ এবং সুপারিশে সঞ্জয় বাতাসপুর মিউনিসিপাল হাসপাতালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন হিসাবে যোগ দেয়।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্জয় তার রোগীদের এবং কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জনে সফল হয়। অন্য ডাক্তাররা তার এই জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারে না, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে সঞ্জয় চিকিৎসাশাস্ত্র জানলেও তার কোনো ডিগ্রি নেই। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। বিচারক সমস্ত বিষয়টি জেনে এবং তার পারদর্শিতার কথা মাথায় রেখে এবং এই সমাজে সব থাকা সত্ত্বেও শুধু অর্থের অভাবে ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে না পারার কথা বিবেচনা করে তাকে যথাসম্ভব লঘু দণ্ডে দণ্ডিত করেন।

পুরস্কার-
১৯৬২ সালে ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত সেরা ছবি হিসাবে রাষ্ট্রপতির রৌপা পদক লাভ করে।
আরও দেখুনঃ