কুন্দনলাল সায়গল এর জন্ম জম্মুতে, ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহ, কোনো গান একবার শুনেই গাইতে পারতেন। প্রথাগত সংগীত শিক্ষা সুফী সাধক সলমন ইউসুফের কাছে। জম্মুতে অনুষ্ঠিত রামলীলা উৎসবে সীতার ভূমিকায় অভিনয় করতেন।
কুন্দনলাল সায়গল
কিছুদিন দিল্লিতে নির্বাহী বাস্তুকারের বিদ্যুৎ বিভাগে, অল্প কিছুদিন উত্তর-পশ্চিম রেলে টাইম কিপারের চাকরির পর কলকাতায় রেমিংটন টাইপ রাইটার কোম্পানির সেলসম্যানের কাজ করেছেন। ১৯৩২ সালে রেমিটেন কোম্পানির চাকরি ছেড়ে গায়ক-অভিনেতা হিসাবে নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেন। নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বা তাঁকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার ভূমিকা প্রধান ছিল তা নিয়ে কিছু মতভেদ লক্ষ করা যায়।
চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ শুরু করার আগেই কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে সায়গলের গান সম্প্রচারিত হয়েছিল। ১৯৩২ সালে হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি থেকে তাঁর রেকর্ড প্রকাশিত হয়। কলকাতায় অবস্থান কালে সায়গল যে কটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তার সবগুলিই নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় তৈরি।
প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় গায়ক/নায়ক হিসাবে প্রেমায়ুর আতর্থী পরিচালিত হিন্দী ছবি মহকত কী আঁসু (১৯৩২)। দেবকী বসু পরিচালিত হিন্দী পুরাণ ভকত্ (১৯৩৩) ছবিতে গান ও অভিনয়ের সূত্রে সর্বভারতীয় পরিচিতি লাভ করেন। প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত বাংলা দেবদাস (১৯৩৫) ছবিতে গান গাওয়ার সঙ্গে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন। হিন্দী দেবদাস ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় ও গান তাঁকে তারকার মর্যাদা এনে দেয়।
দীনেশরঞ্জন দাস পরিচালিত বিজয়া (১৯৩৬) ছবিতেও তিনি একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন।
নীতিন বসু পরিচালিত দিদি (১৯৩৭) ছবিতে নাম ভূমিকায় (প্রকাশ) অভিনয় করেন। নীতিন বসু পরিচালিত দেশের মাটি (১৯৩৮) ছবিতে নায়ক অশোকের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল, ১৯৩৮ সালেই ফণী মজুমদার পরিচালিত সাথী ছবির নায়ক হিসাবে অনাথ ভুলুয়ার ভূমিকায় তাঁর এবং বিপরীতে কানন দেবীর অভিনয় জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ছবিতে সায়গল ও কানন দেবীর কণ্ঠের গানগুলি সমালোচকদের প্রশংসা পায়।
নীতিন বসু পরিচালিত জীবনমরণ (১৯৩৯) ছবিতে তিনি লীলা দেশাইয়ের সাথে রেডিওর গায়ক মোহনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিতে তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত দুটি ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেন গান’ এবং ‘তোমার বীণায় গান ছিল জনপ্রিয় হয়। বাংলা ভাষায় তাঁর শেষ ছবি পরিচয় (১৯৪১), এই ছবির নায়ক একজন কবি অনন্ত রায়। ছবিতে সায়গলের কণ্ঠে চারটি রবীন্দ্রসংগীতই জনপ্রিয় হয়।
নায়িকার ভূমিকায় কানন দেবীর কন্ঠের গানগুলিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ছায়াছবির জন্য প্রণব রায়ের লেখা ‘ আমি’, ‘অজয় ভট্টাচার্যের লেখা ‘পাখী আজ কোন কথা কয় এই পেয়েছি অনল ‘ গানগুলি সায়গলের কণ্ঠে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল। সুবল দাশগুপ্তের সুরে প্রণব রায়ের লেখা দুটি আধুনিক গান ‘নাই বা ঘুমালে প্রিয়’ এবং ‘এখনই উঠিবে চাদ আধোআলো আধোছায়াতে জনপ্রিয় হয়। সায়গলই বোধহয় প্রথম অবাঙালি সংগীতশিল্পী হিসাবে রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করার অনুমতি পান।
১৯৩২-৪১ পর্যন্ত নিউ থিয়েটার্সে তিনি একুশটি ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গেয়েছিলেন, তার মধ্যে সাতটি ছবি ছিল বাংলা ভাষায়। তৎকালীন ভারতবর্ষে গায়ক-নায়ক হিসাবে সায়গলের জনপ্রিয়তা ছিল অসাধারণ, এই জনপ্রিয়তার কারণেই তিনি কলকাতা ছেড়ে বোম্বেতে চলে যান ১৯৪২ সালে। ১৯৪২-৪৬ পর্যন্ত সেখানে তিনি নয়টি হিন্দী ছবিতে অভিনয় করেন। সাথে গানও খেয়েছিলেন।

১৯৪৭ সালে জলন্ধরে সায়গলের জীবনাবসান হয়।
চলচ্চিত্র পঞ্জি —
- ১৯৩৫ দেবদাস,
- ১৯৩৬ বিজয়া,
- ১৯৩৭ দিদি,
- ১৯৩৮ দেশের মাটি, সাথী,
- ১৯৩৯ জীবনমরণ,
- ১৯৪১ পরিচয়।
আরও দেখুনঃ