কিশোর কুমার

কিশোর কুমার এর আসল নাম আভাসকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, জন্ম তৎকালীন সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ) অন্তর্গত খান্ডোয়ায়। দাদা অশোককুমার হিন্দী ও বাংলা সিনেমার প্রখ্যাত অভিনেতা। আরেক দাদা অনুপকুমার ছিলেন অভিনেতা।

চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় বোম্বে টকীজে কোরাস সিঙ্গার হিসাবে। খেমচাদ প্রকাশ পরিচালিত শিকারী (হিন্দী, ১৯৪৬) ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। এই ছবির নায়ক ছিলেন অশোককুমার। ফণী মজুমদার পরিচালিত আন্দোলন (হিন্দী, ১৯৫১), বিমল রায়ের নৌকরি (হিন্দী, ১৯৫৪) এবং হৃষিকেশ মুখার্জীর প্রথম ছবি মুসাফির (হিন্দী, ছবিতেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

কিশোর কুমার
কিশোর কুমার

 

কিশোর কুমার । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

স্বনামধন্য শচীন দেববর্মণ কিশোরকে সংগীতশিল্পী হিসাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। সংগীতে কোনো প্রথাগত তালিম না থাকা সত্ত্বেও কিশোরকে মুনিমজি (হিন্দী, ১৯৫৪) ছবিতে নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসাবে ব্যবহার করেন। পরবর্তী কালে নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসাবে কিশোরের উত্থান শুরু হয়।

বাংলা ভাষায় নির্মিত প্রায় ৭৫টি ছবিতে কিশোর নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসাবে কাজ করেছেন। প্রথম ছবি নিজের প্রযোজনায় তৈরি লুকোচুরি। ছবিটি পরিচালনা করেন কমল । ঐ ছবিতে কিশোর দ্বৈত ভূমিকায় (শঙ্কর, বুদ্ধ) অভিনয়ের পাশাপাশি নেপথ্য সংগীত মজুমদার পরিবেশন করেন। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

 

কিশোর কুমার
কিশোর কুমার

 

কিশোর কুমার অভিনীত অন্য ছবিগুলি হল মধ্যরাতের তারা (১৯৬১. পিনাকী মুখোপাধ্যায়), একটুকু ছোঁয়া লাগে (১৯৬৫ কমল মজুমদার), দুষ্টু প্রজাপতি (১৯৬৭ শ্যাম চক্রবর্তী)। প্রসঙ্গত, একটুকু ছোঁয়া লাগে ছবিতে তিনি তপন এবং দুষ্টু প্রজাপতি ছবিতে কানুর ভূমিকায় অভিনয়ের সাথে নেপথ্য সংগীত পরিবেশন করেন।

রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চারুলতা (১৯৬৪) এবং ঘরে বাইরে (১৯৮৫) ছবি দুটিতে কিশোরের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। সত্যজিৎ রায় এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়াও যে সব উল্লেখযোগ্য সংগীত পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন তাঁরা হলেন গোপেন মল্লিক, নচিকেতা ঘোষ, অনিল বাগচী, শ্যামল মিত্র, রাহুল দেববর্মণ, শচীন দেববর্মণ, বাপী লাহিড়ী, সলিল চৌধুরী প্রমুখ।

 

Google News কিশোর কুমার
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

যে সব উল্লেখযোগ্য গীতিকারের লেখা গান তাঁর কণ্ঠে বাংলা ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে তাঁরা হলেন সলিল চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন চক্রবর্তী, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কিশোর কুমারের সাথে প্রথমে রুমা গুহঠাকুরতা, পরে মধুবালা, যোগীতা বালী এবং আরও পরে লীনা চন্দ্রভারকরের বিয়ে হয়। কিশোর ও রুমার সন্তান অমিতও প্রতিষ্ঠিত সংগীতশিল্পী। কিশোর কুমারের উপর বাংলা ছাড়াও হিন্দী ও ইংরাজিতে বহু গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দ্বীপ বাবা তার উপর একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটির নাম ‘জিন্দেগী এক সফর’।

 

কিশোর কুমার
কিশোর কুমার

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯৫৮ লুকোচুরি,
  • ১৯৬১ মধ্যরাতের তারা
  • ১৯৬৪ চারুলতা
  • ১৯৬৫ একটুকু ছোঁয়া লাগে;
  • ১৯৬৭ দুষ্টু প্রজাপতি:
  • ১৯৬৯ সাবরমতী, শেষ থেকে শুরু
  • ১৯৭২ অনিন্দিতা,
  • ১৯৭৪ অমানুষ
  • ১৯৭৭ প্রক্সি, আনন্দ আশ্রম, কবিতা,
  • ১৯৭৮ পদ্ম গোলাপ, রাজকুমারী, লালকুঠি, বন্দী, আরাধনা, নিশান
  • ১৯৭৯ মানার
  • ১৯৮১ অনুসন্ধান, কলঙ্কিনী, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, ওগো বধু সুন্দরী, প্রতিশোধ,
  • ১৯৮২ সংকল্প, ত্রয়ী,
  • ১৯৮৩ জীবনমরণ, প্রতিদান
  • ১৯৮৪ দাদামণি, দুজনে, মোহনার দিকে. পারাবত প্রিয়া, প্রার্থনা, তিনমূর্তি,
  • ১৯৮৫ অন্তরালে, অন্যায় অবিচার, ঘরে বাইরে, হরিশ্চন্দ্র শৈব্যা, মিলনতিথি, সন্ধ্যাপ্রদীপ:
  • ১৯৮৬ অভিমান, অমরকণ্টক, অনুরাগের ছোঁয়া, আর্তনাদ, বৌমা, দুই অধ্যায়, লাল মহল, মধুময়, উর্বশী:
  • ১৯৮৭ অমর সঙ্গী গুরুদক্ষিণা, মৌনমুখর, পাপপুণ্য;
  • ১৯৮৮ আগুন, অন্তরঙ্গ, অপমান, ছন্নছাড়া, দেবীবরণ, দেনাপাওনা, জ্যোতি, ওরা চারজন, সুরের আকাশে, তুমি কত সুন্দরা: ১৯৮৯ আশা ও ভালবাসা, বান্ধবী
  • ১৯৯১ কাগজের নৌকা
  • ১৯৯৫ সৃষ্টি
  • ১৯৯৮ আশ্রিতা, ছোটুর প্রতিশোধ, হীরক জয়ন্তী, মানসী, স্বর্ণ

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment