কোমল গান্ধার চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা-১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র। এই ছবিটির কাহিনিকার ও পরিচালক ছিলেন ঋত্বিক ঘটক।
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নিবেদিতপ্রাণ ও আপোশবিহীন মানসিকতার মাধ্যমে, ঋত্বিক ঘটক তার নিজস্ব ভঙ্গিতে দেশভাগ, আদর্শবাদ, দুর্নীতি, শিল্প ও জীবনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, শিল্পের পরিধি ও শ্রেণি-সংগ্রামের বিষয়টি তুলে ধরেন। এই ছবিতে তিনি দুই প্রেমিক-প্রেমিকার ইতিবাচক প্রেমের ধারণাটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং মিলনান্তক দৃষ্টিভঙ্গিতে ছবির সমাপ্তি ঘটেছে। এই ধারণা ঋত্বিক ঘটকের অন্যান্য ছবিতে দেখা যায় না।
কোমল গান্ধার চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা – চিত্রকল্প।
- কাহিনি, প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা – ঋত্বিককুমার ঘটক।
- সংগীত – জ্যোতিরিন্ন মৈত্র।
- চিত্রগ্রহণ – নিদীপ রঞ্জন মুখোপাধ্যায়।
- শিল্প নির্দেশনা—রবি চট্টোপাধ্যায়।
- শব্দগ্রহণ – মুশাল গুহঠাকুরতা, সুজিত সরকার, দেবেশ ঘোষ, সত্যেন চট্টোপাধ্যায়।
- সম্পাদনা—রমেশ যোশী।
- গীতিকার—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সলিল চৌধুরী, বিজন ভট্টাচার্য, সুকান্ত ভট্টাচার্য।
- লোক সংগীত সংগ্রহ – হেমাঙ্গ বিশ্বাস, রণেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী।
- কন্ঠসংগীত – দেবব্রত বিশ্বাস, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, প্রীতি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, বিজন ভট্টাচার্য, মন্টু ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, ররা সরকার, শ্রীজাতা চক্রবর্তী, চিত্রা মণ্ডল, রণেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী।
- সরোদবাদন – ওস্তাদ বাহাদুর খান।
কোমল গান্ধার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
সুপ্রিয়া চৌধুরী, অবনীশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য, চিত্রা মণ্ডল, গীতা দে, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য, মন্টু ঘোষ, বিষ্ণু ভাওয়াল, সরারত চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, নির্মল ঘোষ, তিলোত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবী নিয়োগী, মণি শ্রীমানী।
কোমল গান্ধার চলচ্চিত্রের কাহিনি—
গণনাটা আন্দোলন এবং নাট্যকর্মীদের প্রত্যাশা, আবেগ, হতাশা, আবার ঘুরে দাঁড়াবার প্রবণতাকে কেন্দ্র করে এই ছবি তৈরি হয়েছে। অবিভক্ত বাংলাকে ভাগ করে দেশে স্বাধীনতা আসে। নিপীড়িত মানুষের দুঃখ দুর্দশাকে মানুষের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে তৃত (অবনীশ) একটি নাটকের দল তৈরি করে। ভূত্তর দল আয়োজিত নাট্য উৎসবে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে অনসূয়া (সুপ্রিয়া) উৎসবে যোগ দেয়।
স্নিগ্ধ কোমল স্বভাবের মেয়ে অনসূয়া কটুভাষী। ভৃগুর কটু ব্যবহারে দুঃখিত হলেও যৌথ প্রযোজনার স্বার্থে ভৃগুর সাথে কাজ করতে রাজি হয়। একসাথে কাজ করতে গিয়ে ভৃগুর দলের মহৎ উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য ভৃগুর আন্তরিক প্রচেষ্টা অনসূয়াকে মুগ্ধ করে।
দলের মেয়ে শান্তা (গীতা) তাদের এই যৌথ প্রয়াসকে নষ্ট করার চেষ্টা করে। লালগোলায় অভিনয় করতে গিয়ে তারা মানসিক ভাবে কাছাকাছি আসে, জানতে পারে তারা দুজনেই দেশ বিভাগের ফলে অনেক কিছুই হারিয়েছে। অনসূয়া বুঝতে পারে ভূত্তর একাকিত্ব এবং জীবনে অনেক আঘাত সহ্য করার ফলেই তার আপাত রুক্ষ স্বভাব।
দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হলেও ভৃগু কলকাতায় ফিরে জানতে পারে অনসূয়া বাগদত্তা। অন্যদিকে শান্তার ঈর্ষার ফলে যৌথ প্রযোজনা ব্যর্থ হয়। এবার অনসূয়া সরাসরি ভূত্তর পাশে এসে দাঁড়ায়, সে যোগ দেয় ভূত্তর দলে।
অন্যদিকে অনসূয়ার বাগদত্ত সমর বিদেশ থেকে ফিরে আসে। সমরের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেই অনসূয়া ভৃগুর দলের হয়ে অভিনয় করার জন্য বজবজ যায়। সে বুঝতে পারে ভৃগুকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

এই ছবি মুক্তির পর অধিকাংশ খবরের কাগজে চিত্রসমালোচনা বিভাগে ছবিটির বিরূপ সমালোচনা করা হয়েছিল, মৃগাঙ্কশেখর রায় এবং ধ্রুব গুপ্ত এই সমালোচনার উত্তরে ছবিটির যথার্থতা তুলে ধরেন। লেখাগুলি বিভিন্ন পত্রিকায় সংকলিত হয় এবং পরবর্তী কালে ঋত্বিক ঘটকের উপর রজত রায় সংকলিত ঋত্বিক ও তাঁর ছবি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও দেখুনঃ