তপন সিংহের জন্ম কলকাতায়। জীবনের প্রথম দশ বছর কেটেছে গ্রামের বাড়িতে (হিপোড়া, বীরভূম)। ভাগলপুরের দুর্গাচরণ এম. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম. এসসি পাস করেন। ১৯৪৬ সালে নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেন শব্দযন্ত্রী বাণী দত্তর সহকারী হিসাবে। ১৯৪৮ সালে বাণী দত্ত নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে ক্যালকাটা মুভিটোন স্টুডিওতে যোগ দেন এবং তপন সিংহ তার সাথে সহকারী হিসাবে ক্যালকাটা মুভিটোনে যুক্ত হন। এই পর্যায়ে জাঁ রেনোয়ার ‘রিভার’ ছবির শব্দযন্ত্রী চার্লস পুলটনের সাথেও কাজ করেছেন।
তপন সিংহ
১৯৫০-৫৪ লন্ডনে পাইনউড স্টুডিওতে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ শেখেন। দেশে ফিরে স্বাধীন পরিচালক হিসাবে প্রথম কাজ অঙ্কুশ (১৯৫৪)। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও তপন সিংহ বাতিক্রমী চিত্র পরিচালক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে ৪র্থ ছবি কাবুলিওয়ালা (১৯৫৭) ছবির জন্য বছরের সেরা ছবির জাতীয় সম্মান (স্বর্ণকমল) লাভ করেন। ছবিটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সংগীতের জন্য রৌপ্য ভল্লুক লাভ করে।
সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে ৩১টি বাংলা ছবির পাশাপাশি ৬টি হিন্দী, ৫টি স্বল্প দৈর্ঘ্য ছবি, একটি তথ্যচিত্র এবং দূরদর্শন ধারাবাহিক নির্মাণ করেছেন। অতিথি (১৯৬৫) ছবি থেকে তপন সিংহ নিজের ছবির সংগীত পরিচালনাও নিজেই করেছেন।
তাঁর পরিচালিত গল্প হলেও সত্যি (১৯৬৬), হারমোনিয়াম (১৯৭৬), আদালত ও একটি মেয়ে (১৯৮২), বৈদূর্য রহস্য (১৯৮৫), হুইল চেয়ার (১৯৯৪) এবং হিন্দী কাহিনিচিত্র সফেদ হাতি (১৯৭৭), আজ কা রবিনহুড (১৯৮৭), আনোখা মতি (১৯৯৯) ছবি নিজের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করেন। এছাড়াও আঁধার পেরিয়ে (১৯৭৩), হারমোনিয়াম (১৯৭৬), এক যে ছিল দেশ (১৯৭৭) এবং বৈদূর্য্য রহস্য (১৯৮৫) ছবির জন্য গান রচনাও করেছেন।
তাঁর পরিচালনায় নির্মিত ২২টি ছবি দেশ এবং বিদেশে পুরষ্কৃত হয়েছে। পুরস্কারের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে কাজের পাশাপাশি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি. লিট সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
ভারত সরকার ১৯৯২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মান জানায় এবং ২০০৬ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য খ্যাতনামা অভিনেত্রী ও পরিচালক অরুন্ধতী দেবীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।

১৯৯৫ সালে তাঁর লেখা ‘মনে পড়ে’ গ্রন্থটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র এবং চিত্রভাষ পত্রিকা তাঁর উপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
চলচ্চিত্রপঞ্জি —
- ১৯৫৪ অঙ্কুশ,
- ১৯৫৫ উপহার,
- ১৯৫৬ টনসিল
- ১৯৫৭ কাবুলিওয়ালা, লৌহকপাট,
- ১৯৫৮ কালামাটি, জগদীশচন্দ্র বসু (তথ্যচিত্র):
- ১৯৫১ ক্ষণিকের অতিথি,
- ১৯৩০ ক্ষুধিত পাষাণ,
- ১৯৬১ বিশ্বের বন্দী,
- ১৯৬২ আমার দেশ, শিউলিবাড়ি* হাঁসুলী বাঁকের উপকথা,
- ১৯৬৩ নির্জন সৈকতে
- ১৯৬৪ জতুগৃহ, আরোহী:
- ১৯৬৫ সুরের আগুন, অতিথি,
- ১৯৬৬ গল্প হলেও সত্যি:
- ১৯৬৭ কেদাররাজা হাটে বাজারে,
- ১৯৬৮ আপনজন,
- ১৯৭০ সাগিনা মাহাতো,
- ১৯৭১ এখনই
- ১৯৭২ বাবুর্চি••বিদেশী বিদেশী:
- ১৯৭৩ আবার পেরিয়ে,
- ১৯৭৪ সামিনা, রাজা,
- ১৯৭৬ হারমোনিয়াম
- ১৯৭৭ এক যে ছিল দেশ, সফেদ হাতি,
- ১৯৭৯ সবুজ দ্বীপের রাজা,
- ১৯৮০ বাঞ্ছারামের বাগান
- ১৯৮১ আদালত ও একটি মেয়ে।
- ১৯৮৩ মানুষ;
- ১৯৮৪ আদমী ঔর ঔরত,
- ১৯৮৫ বৈদুর্য্য রহস্য;
- ১৯৮৬ আতক্ষ,
- ১৯৮৭ আজ কা রবিনহুড,
- ১৯৯০ এক ডাক্তার কি মৌত:
- ১৯৯১ – অন্তর্ধান,
- ১৯৯৪ – হুইল চেয়ার,
- ১৯৯৮ আজব গাঁয়ের আজব কথা;
- ১৯৯৯ আনোখা মতি,
- ২০০৩ শতাব্দীর কন্যা।
আরও দেখুনঃ